X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠ উন্মোচন

দ্বিতীয় দশকের ৫টি বই || প্রথম পর্ব

.
২২ মে ২০১৬, ১৩:৩৯আপডেট : ২২ মে ২০১৬, ১৫:১৬

দ্বিতীয় দশকের ৫টি বই || প্রথম পর্ব এ বছর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত দ্বিতীয় দশকের কবিদের ‘প্রথম প্রকাশিত বই’ নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। আমরা দুই পর্বে মোট ১০টি নতুন বইয়ের পাঠ উন্মোচন পাঠকের সামনে হাজির করতে চাই। যা নতুনকে জানতে প্রাণিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রথম পর্বের ৫টি বই হলো : সৌম্য সালেকের ‘আত্মখুনের স্কেচ’, হাসান রোবায়েতের ‘ঘুমন্ত মার্কারি ফুলে’, আজিম হিয়ার ‘অন্ধ আতরের ঘ্রাণ’, গিরীশ গৈরিকের ‘ক্ষুধার্ত ধানের নামতা’ এবং জিয়াবুল ইবনের ‘কোনো বাইপাস নেই’।


 

তুষার প্রসূন
নগর-রাখালের আত্মখুনের স্কেচ
সৌম্য সালেক মূলত বসন্ত একটি মাহুর্তিক ধারণামাত্র, একটি হাওয়াই-মিঠাই মার্কা আনন্দ। যেখানে গড়ে প্রতিদিন আধাপৃথিবীর মানুষ রক্ত দিয়ে মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করছে, বিশ্বাস জাদুঘরে ঠাঁই করে নিয়েছে, প্রেম ধর্ষিত, ভালোবাসা একটি কাল্পনিক সত্য, সেখানে নিজেকে খুন করার স্কেচ প্রস্তুত করতে ক্ষতি কী? যদিও খুন অননুমোদিত, কিন্তু ইচ্ছে করে নিজে নিখোঁজ হলে কার তাতে কী? শব্দ দিয়ে কাব্য নির্মাণ করতে করতে যিনি ভিন্নতর আঙ্গিকে নির্বাণ প্রত্যাশী হয়ে ওঠেন তিনি কবি গোত্রের। তিনি পরাবাস্তব গৃহে বসবাস করেন আর পরিব্রাজক হয়ে ভ্রমণ করেন অতিপ্রাকৃত পথ। তিনি চলে যান এশিয়া থেকে ইউরোপ আবার সেখান থেকে বৈকুণ্ঠে। তার সাথে কথা বলতে গেলে ইনকা, ইরাবিল, মধ্যসাগর ছেড়ে প্রাচীন পথে হেটে হেটে তার কাছে যেতে হয়, তিনি কবি হয়ে আর পৃথিবীতে আসতে চান না। মানুষ হয়ে তিনি ‘স্খলিতের সংস্রবে’ আসতে চান না। কিন্তু তাকে কোনও না কোনও বেশে মানুষের কাতারে আসতেই হয়। মনের মাধুরীজাত শব্দগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে কবিতায় রূপান্তরিত করতে হয়। অবক্ষয়ের কবলে পড়ে তাকে লিখতে হয়...
তারপর দীর্ঘ হতে থাকে পা দুটি
বাড়তে থাকে পাকস্থলিটাও
যেহেতু রক্তমাংশই তার একমাত্র আহার
তাই প্রয়োজন আছে পুঁজির এবং মারণাস্ত্রের
সে চষে বেড়ায় উত্তর পূর্ব মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা
কিন্তু পশ্চিমে সুস্থির
দেখুন চিত্রকর, দানবটা আঁকা যায় কিনা
[দানব : আত্মখুনের স্কেচ]
কবি ‘আত্মখুনের স্কেচ’ গ্রন্থের অধিকাংশ জুড়ে চিত্রকল্প মূলত প্রধান করে তুলেছেন। বইটি হাতরে-সাঁতরে যদিও পাওয়া যায় প্রেম-প্রকৃতি, আধ্যাত্মবাদ, জন্ম-মৃত্যুর নস্টালজিয়া-সহ নিপুণ উপমা, নতুন সৃষ্টশব্দের নন্দিত প্রয়োগ-সহ বহুবিধ চেতনার সমাবেশ। ‘যেমন নির্বিকার আমি তেমন মুখচ্ছবি তোমার ছিলো না’ অথবা ‘দিনের চাঁদের মতো অসহায় আমাকে অশ্রুরা ঠাঁই দেবে কোথা/ ও রুমি, আমারে শোনাতে যদি অশ্রু আর অনিদ্রার গাথা।’ এমন উপমার উপস্থিতি কবিতাকে ঋদ্ধ করে তুলেছে।
‘জলের জলসা’, ‘ভ্রাম্যমাণ শিশির’ কিংবা ‘মৌসুমকলা’ ‘তীর্থফুলে পাপড়ির গন্ধচেতনা’ ‘উদ্দাম উলঙ্গ দিনের গল্প’ কবি আমাদের শোনাতে চান কবিতার মাধ্যমেই। আধুনিকতার স্পষ্ট ছাপ রাখতে গিয়ে তিনি কোলাজে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছেন। বিবিধ চিন্তা ও দৃশ্যকল্পের অস্তিত্ব তার একেকটি কবিতায় বিদ্যমান। ফলে পাঠককে আরও সংবেদনশীল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়া আছে বইটিতে।
‘আত্মখুনের স্কেচ’ সৌম্য সালেক-এর প্রথম কবিতার বই হলেও ভরা নদীর স্রোত সেখানে বিদ্যমান। দীর্ঘ সময় কবি চিন্তা করে গ্রন্থপ্রকাশে সায় দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ভ্রমণ করেছেন বিশ্বকবিতার ঘরবাড়ি। তার কবিতায় যেমন আছে বাঙালি রঙ তেমনি আছে ইউরোপিয়ান ঢঙের মিশেল, যার ফলে আধুনিকতা ধরা দিয়েছে তার স্কেচ-এ। ‘পদ্যপ্রসব’, ‘মধুমাতৃক’ এমন অসংখ্য শব্দ কবির নতুন সৃষ্টি। দায়সারা কবিতা তো লেখা যায় কিন্তু বহু কবি ও কবিতার ভিড়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার জন্য দশদিকের জ্ঞান থাকা জরুরি এবং কবি সে চেষ্টা করেও চলেছেন। কবির আত্মোপলব্ধিজাত সাহস ও অনুপ্রেরণার দাগ দেখা গেছে এই কবিতাংশে-
এর মধ্যে এসো একবার সুধাবর
পাখিফেরা সন্ধ্যায়, অগণন অশ্রুরথে-
ওড়ে যায় ফুলের দখিনা শ্বাস...
ঈষাণে বিষণ্ণ মেঘ দেখে
তুমি, ভেবো না ক্ষয়ে গেছি
[অশ্রুসংক্রান্তি : আত্মখুনের স্কেচ]
এমনি অনেক পংক্তি তুলে ধরা যেতে পারে এবং অনেক কবিতার নাম উল্লেখ করা যেতে পারে যে কবিতাগুলো পড়লে একজন প্রজন্মের কবিকে চিহ্নিত করা যাবে এবং নির্ণয় করা যাবে তার শক্তি, সাহস ও সৌন্দর্য। যেমন ‘বনসাই সংস্করণ’, ‘নগর রাখাল’ ‘কালো মেয়ের গল্প’, ‘বীক্ষণ’, ‘শৈলজন্ম’, ‘অন্তরীণ মধুপের শিস’, ‘প্রশ্নবাণ’, ‘মানুষ গল্প করে’, ‘একটি পুরাতন কামিজ’ সহ বেশকিছু কবিতা কবির গভীরতা মাপতে যথেষ্ট বলে মনে করি। কবিতার প্রতি তার সূক্ষ্মদৃষ্টি, এক্সপেরিমেন্টের দক্ষতা কবিতাকে নিয়ে গেছে ভিন্নমাত্রায়। তিনি লিখেছেন-
অবিরাম ধান কেটেছি গত ঘুমে- কাস্তে ছিল ঘামের জোয়ার
অবিরাম মাছ ধরেছি গত ঘুমে- জাল ছিল নিশ্ছিদ্র তৃষার
অবিরাম পুড়েছে জীবন গত ঘুমে- অসহ রাতের শরম
অবিরাম বীজ বুনেছি গত ঘুমে- মাটি ছিল নারীর নরম
অবিরাম হেঁটেছি শ্রমণ গত ঘুমে- মন ছিল মত্ত শ্রমণে
অবিরাম গেয়েছি গান গত ঘুমে- বেহুলার অশ্রু শ্রাবণে
অবিরাম কেটেছে প্রহর কত অনুভবে জেনে যাই আমি
তবু গানে ও গমনে বুঝি না জীবনে -চাষ করি কার জমি...
[বীক্ষণ : আত্মখুনের স্কেচ]
একটি বিষয় বলা আবশ্যক যে, আধুনিক বাংলা কবিতা বলি আর প্রজন্মের কবিতাই বলি তাকে ভিন্ন মাত্রায় বা ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে কিন্তু কে এই দায়িত্ব পালন করবেন। সবাই তো কবিতা লিখে, প্রকাশ করে আয়েশ করেন! হ্যাঁ, প্রজন্মের কবিদেরই এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। আশার বিষয় যে প্রজন্মের এই আত্মসচেতন কবি সেই বিষয়গুলি নিয়ে ভেবেছেন যা তার ‘আত্মখুনের স্কেচ’ কবিতার বইয়ের প্রতি পাতায় বিদ্যমান।


 

অনন্ত সুজন
ঘুমন্ত মার্কারি ফুলের ঘ্রাণ

হাসান রোবায়েত পাঠের আনন্দ যখন লিখতে বা বলতে প্ররোচিত করে, তখন সে বইটি নিশ্চয় উসকে দেবার ম্যাজিক জানে। আর তা যদি হয় অনুজের, সেখানে অবলোকনের আবেগি, রঙ্গিন সানগ্লাসটাকে খুলে রাখলেই স্পষ্ট দেখা যায়। কাব্য বিচার আদর্শিক না হলে সময় কিংবা মহাকালের ফ্লাইট ধরা অসম্ভব। এখানে পরিসর স্বল্প হলেও নিজের একটি পূর্ব সিদ্ধান্তের পুনঃপ্রচার করে রাখতে চাই। মানে, এক সময় গদ্য লিখতাম। ফর্মায়েশি নয় কখনো। বেশ ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গদ্য আসলে আমার মূল কাজ নয়। তবুও বছরে ২/৩টি কলমের ডগায় চলে আসে। সে যোগ্যতাটা তাঁদের, যারা প্রেরণা জাগাতে পারে। তখন অনুভূতির বয়নে বেড়াতে যাই। প্রসঙ্গে ফিরি তাহলে।
আমি মনে করি, তরুণদের অধিক গুরুত্ব সহকারে নিয়মিত পাঠের আওতায় রাখা উচিৎ। তাতে কবিতা নিয়ে বিভিন্নমুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গির খবরাদি নেয়া যায়। কবি হাসান রোবায়েত তাঁর ধুমন্ত মার্কারি ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ হওয়া যায়। মিতবাক, উচ্ছল এই কবি বহুমাত্রিক চিন্তা-চেতনার সুখপ্রদ যূপকাষ্ঠে আটকে রাখার কৌশলটি বুদ্ধিদীপ্ত। হাসান বিষয়কে দেখে তৃতীয় চোখে। যে চোখটা শুধুই কবির। যার ফলে তাঁর কবিতার গঠন বেশ আঁটসাঁট কিন্তু পরিপাটি। বিষয়কে বিভিন্ন পরিক্রমায় দ্রবীভূত করে বোধের আলো-আঁধারীর খেলায় ভাষার যে জাদু দেখিয়েছে, সেটাকেই নিজস্বতা বলে। কোনও কোনও শব্দ খানিকটা ধাক্কা দিতে পারে- তবে ঈমানের কথা হল, আচম্বিত এমন প্রবাহ আধুনিক কবিতার গতিপথ উন্মোচিত করছে।
এও লক্ষ্য করেছি, কোমলতাকে আশ্রয় দিলেও প্রবেশ পথের দরজা-জানালা কবি হয়তো ইচ্ছে করেই উন্মুক্ত রাখেনি। তাই প্রথম পর্যায়ে অপরিচিত মনে হওয়া স্বাভাবিক। শব্দ বাছাই ও প্রয়োগের অভিনবত্ব বেশ সুগঠিত। যেটা সাম্প্রতিক সময়ের অনেক প্রজ্ঞাবান অগ্রজ বাঁকা চোখে দেখেন। এটা তো ঠিক যে, কবিতার ক্রমবিকাশ, দৃষ্টিভঙ্গি আগামীতেও পরিবর্তনশীল। হাসানের বাক্যের মাধ্যমে ভাষার নির্মাণ কৌশল কাব্যমোদী যে কাউকে দোলা দিতে পারঙ্গম। সেখানে তাকিয়ে দেখা বা অনুভবে শামিল হওয়ার বিরল আনন্দ অপেক্ষমাণ। একটা গভীর স্তব্ধতার সূত্র ধরে যাত্রা করে সে। যেমন, ‘এতটা বৈমাত্রেয় কেন এই ভাষা’! আসলে সম্ভাবনাময়, সিরিয়াস কাব্যশ্রমিক সৃষ্টির তাড়নায় ভাষাকে উত্তরোত্তর উদ্ধার করে, গতিশীল প্রতিনিধিত্ব তৈরি করতে চায়।
জীবনানন্দ দাশকে স্মরণ করি, ‘কবিতার অস্থির ভিতরে থাকবে চেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান’। এখানে ‘অস্থি’ অর্থে কবিতার প্রকরণ বা আঙ্গিক এবং ‘মর্ম’ কবিতার ভাবকে বুঝিয়েছেন। হাসান তাঁর সময়ের গতিবিধির বাইরের নয়। সময়ের টোন ধরতে পেরেছে বলেই নিজের পথ ও মতকে সম্বল করে ব্যতিক্রমী হবার স্বচ্ছ বিলাস-বাসনার নান্দনিক প্রয়াস চালাচ্ছে। বিশেষ ধরণের স্তব্ধতা তৈরির ম্যাজিকটা দারুণ টেকনিকের। হ্যাঁ, এই স্তব্ধতা কখনো অনুদ্ধারের হলেও ‘চিত্ররূপময়’। ধারণা করি, অবচেতনের ভাষা থেকে চিত্রকল্প নির্মাণ খুব ঝুঁকির কাজ। যেটি এ বইতে হয়েছে। তাতে একটি বাক্য থেকে আরেকটি বাক্যের যতো না যোগাযোগ, তারচেয়ে বেশি দূরগামীতার। নিমগাছ কবিতাটি উদ্ধৃত হলো-
দুপুরে নিমগাছ এলে প্রতিদিন জড়ো হয়
দ্বিধা-
মেঘ ও হার্পূন জেনে জেনে উড়ে গেছে মৃত সেই দেশ
কে এক জামরুল
বন্ধুর বায়গ্রাফি খুঁজে
দেখে নেয় মাকালের বন-
শুধু তার রাক্ষসটুকু ফুটে ওঠে বর্মে ও ঢালে
কয়েক স্তন দূরে একটা নিমগাছ-

প্রথম বইতে একজন কবির সিগ্নেচার ক্রিয়েট করার প্রচেষ্টা অভিনন্দন যোগ্য। অনেক সময় পড়ার পর না বুঝলেও ভালো লাগে- এ কবিতা বইটিতে সে গুঞ্জরন আছে। ওদের সময় বড়ই উন্মুল, অস্থির। আবার তীব্র প্রতিযোগিতার। যদিও দশকের মধ্যবর্তী সময়ের চিত্র এমনই। সবার স্নায়ুতেই অতিক্রম করার ছহি নিয়ত সতর্ক থাকে। বস্তুত, যে কোনও কবি সম্পর্কে, যে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে গেলে অন্তত দুই যুগ লাগে। কারণ, অনেকে নিজেকে খুঁড়তে খুঁড়তে, প্রতিনিয়ত চূর্ণ-বিচূর্ণ করে, লম্বা পথের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে, তারপর সচ্ছল অবস্থানে দাঁড়ায়। হাসানের আগ্রহী পাঠক হওয়া সত্ত্বেও আরও সময় নিয়ে ওর সৃষ্টি উপভোগ করতে চাই।


 

মাসুদ সুমন
প্রসঙ্গ অন্ধ আতরের ঘ্রাণ
আজিম হিয়া আজিম হিয়ার কবিতা পড়তে হয় ধীরে- ঠাণ্ডা মাথায়- খানিকটা সময় নিয়ে এবং পাঠোদ্ধারে কখনও কখনও পুনর্পাঠেরও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মেদহীন কবিতাগুলির শারীরিক গঠনই এমন, বাঁকময়- শব্দ বিন্যাস আপাত সরল হলেও বাক্যের অর্থবোধকতা তৈরি হয় কুয়াশাচ্ছন্নভাবে। সেই কুয়াশা সরাতে সরাতে কখনও কখনও হোচট খেতে হয় বৈকি! আতরের ঘ্রাণ অতিদ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ে; কিন্তু এই আতরের ঘ্রাণের সাথে যখন অন্ধ শব্দটি সংযুক্ত হয় তখন সেই ঘ্রাণ ছড়াতে যেন খানিকটা সময় নেয়- মস্তিস্কের আরও অতলে প্রবেশের জন্যই হয়ত এই সময় নেয়া।
অন্ধ আতরের ঘ্রাণ গ্রন্থের বেশিরভাগ কবিতাই শুরু হয় গল্পের ইমেজ নিয়ে- যেন একটা ছোট গল্পের ভিতরে ঢুকছি-
‘বাল্বটা জ্বলেছিলো একবার। তারপর নিভে গেল। (কুয়াশা)’
‘একরাতে দেখলাম জানালার পাশের ছাতিম গাছটি লাগোয়া বিদ্যুৎ-থামের সাথে সঙ্গম করছে। স্যাঁতসেঁতে ঊরুর স্পর্শকাতরতায় তখন ঘুম ভাঙলো। (বিদ্যুৎ-থাম এবং একজোড়া কালো পাহাড়ের গল্প)’
‘উপুড় হয়ে তাকিয়ে আছি একটা দিব্য চোখ। সাসপিশাস, হাইলি সাসপিশাস! (বেফাঁস কথাবার্তা-১)’
‘শুয়ে আছি হাসপাতালের সফেদ বিছানায়। (সিংকাপনি জায়নামাজ)’
‘সারারাত গ্রীনলাইনে ছিলাম। মনের গহীনে একটা পথ ঢেলে ঢেলে এগোচ্ছিল সময়। (ফেরা)’
যদিও শেষপর্যন্ত তা আর গল্প থাকে না। গল্পের অনুষঙ্গগুলো নানান কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়ে এবং একইসাথে অনেকগুলো অনুভবের জন্ম দেয় আর একারণেই মনে হয় কবিতার যে টোটালিজম বা সূত্রবদ্ধতা তা আর থাকে না। যদিও পোস্টমডার্ন কবিতা কবিতার এই সূত্রবদ্ধতাকে স্বীকার করে না তবু আজিম হিয়ার উপস্থাপন ভঙ্গির ভিতরে এমন এক চমৎকারিত্ব আছে যা পাঠককে কবিতার ভিতরে প্রবেশের তাগাদা দেয় এবং কবিতায় আটকে রাখে।
এ-গ্রন্থের কবিতায় অনেকগুলো দৃশ্যকল্প এমন জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে, মনে হয় হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। যেন কোনও সচল চিত্র চোখের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে এবং যেতে যেতে মনের গহনে ছড়িয়ে দিচ্ছে এমন এক বিমূর্ত অনুভব যা কেবল উপলব্ধিযোগ্য- যা কখনও কখনও জীবনকে দাঁড় করিয়ে দেয় দার্শনিক প্রশ্নের মুখোমুখি এবং আমাদের অবকাশ হয় যাপিত জীবনের বয়ে যাওয়া সময়ের প্রতি নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মনোনিবেশ করতে-
জীবন তবে কি ফর্সা আঙুরের মতো কোনোকিছু, যে কিনা যাত্রাভঙ্গ দিয়ে ফিরে আসছে পুতুলবনে; (নিপাতনে সিদ্ধ সংগীত)
ধানরঙ বিকেল ফিকে হতে হতে সন্ধায় মুখ লুকায় একাকী সময়। (আশ্রম)
বোকা রাত পিঠে অন্ধকার বইছে- তার কাছে চিঠি লিখলো আমার হুটহাট আবির্ভাব। (জন্মান্ধ আতরের ঘ্রাণ)
ব্যাভিচারী সময়ের যাবতীয় মূর্খতা কিংবা অন্ধতা কবিকে ভীষণভাবে ক্রুদ্ধ করে তোলে- তার সেই ক্রোধ প্রকাশিত হয় প্রচণ্ড শ্লেষাত্মক শব্দাবলীর ভিতর দিয়ে- যা পাঠে পাঠকের মনেও স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে- মনে হয় এখনই একটা কিছু করে ফেলি- এইসকল মূর্খামীর বিরুদ্ধে অন্ধতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়ি- এই যে পাঠকের মনে ব্যাপক অনুরণন; কবিতায় এই শক্তি থাকাটা খুবই জরুরি যা অন্ধ আতরের ঘ্রাণ গ্রন্থের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে। সমসাময়িকতাকে এবং সমসাময়িক যাবতীয় পতনকে কবি একেঁছেন এক ক্ষয়িত পেন্সিলের তিক্ষ্ম ফলা দিয়ে- যা ব্যঙ্গাত্মক এবং ক্রুর। আমরা প্রত্যেকেই রাষ্ট্র ও সমাজের এসমস্ত অধঃপতনে নিপতিত হবার দৃশ্যে ভিতরে ভিতরে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ি- আমাদের সেই ক্ষুব্ধতাকে জড়ো করে আজিম হিয়া বয়ান করে যান কবিতার শরীরে-
‘ডাবগুলো সব নারকেল হবার আগেই চুপসে যাচ্ছে
যুবতীর সুগভীর স্তন- আহা! আকাশ যেন মেঘদের কলোনি বলাৎকার সহ্য করে তবু বেঁচে আছে তারাগুলো... (ইলশে রঙের নীড়)’
‘ ... ... ইঁদুরের বনে সবুজের ক্যারিকেচার এবং বানরের ভেলকি নাচে প্রেম-কাম-লোভ আর স্ফুলিঙ্গের ভয়ংকর গাঁজাখুরি ঢঙ। আহারে, স্খলন- চোখের পাওয়ারফুল স্খলন! সত্য কিংবা মিথ্যা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। ননসেন্স! কীসের এতো গর্জন, নারকীয় গান?... (বেফাঁস কথাবার্তা-১)’
‘... ... একটা গেরুয়া পোশাক পরা মাছ মঠফেরত বানরের মতো কাঁচুমাচু চেহারায়- বাঘ, সিংহ এমনকি অজগরের সাথেও ফষ্টিনষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। (বেফাঁস কথাবার্তা-২)’
ওদিকে আমি কিংবা আমাদের মতো যারা কিনা বানচোত শ্রেণির- মস্ত আকাশটা দেখছি এবং তারা গোনার ভান করছি; অথচ প্রাণপণে গুনে চলেছি যোনিঘেরা চুল কিংবা আহা-সুখে উত্থিত লিঙ্গের বীজ। (মহাশুমারি)


 

মোস্তাফিজ কারিগর
ধানদেশের কথাবার্তা

গিরীশ গৈরিক ‘তারপর রক্তাক্ত ধানের শবদেহ ঘুমিয়ে থাকে ফসলের মাঠে’- এই ‘তারপর’এর আগের ঘটে যাওয়া সমস্ত কালচিহ্নের দিকে সমাজ-সমকালীন চিন্তক হয়ে কবির হাতের কলম ছুটে বেড়িয়েছে ‘ক্ষুধার্ত ধানের নামতা’ বইটির পত্র-পল্লবে। ‘ধান’ শব্দটির সাথে অনিবার্যভাবেই জড়িয়ে আছে বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশের, তারও বেশি করে যেনো আমাদের এই বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্যনিশ্চয়তা, গ্রামীণ অর্থনীতি। ক্রমশ নগরায়ন, অস্বচ্ছ বা লক্ষ্যহীন গ্লোবালাইজেশন বলতে আমরা যে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভেতরে ভোঁদরের মতো ঘুরপাক খাচ্ছি, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার বদলে শহর দিয়ে গ্রাম ঢেকে ফেলার সার্কাসের ভেতরে আমাদের ঢুকিয়ে দিয়েছেন আলোচ্য বইয়ের কবি।
যে ধান একটা জাতির বেঁচে থাকার হাতিয়ার, সেই ধান নিজেই ক্ষুধার্ত! এ এক আশ্চর্য ইঙ্গিত- ফলনের হাহাকার ধরে নিয়ে মাঠগুলো পড়ে আছে তেপান্তরের রোদে। তিস্তা ব্যারেজ এসে কবিকে এই কথা বলে গেছে, রাসায়নিক সার এসে এই কথা বলে গেছে কবিকে, গ্রামীণ ব্যাংক এসে এই কথা কবিকে বলে গেছে- কবি মিথ্যে মিথ্যে স্বপ্নের ভেতরে ঢুকে হালকা কাব্যময়তার লালিত্য নির্মাণ করতে চাননি। বরং যে কথাটা সাংবাদিক বলবে না, বিদেশ থেকে টাকা এনে এসি রুমের ভেতরে বসে গবেষকরা বলবে না, যে কথা বলতে গেলে পদ হারাবে রাজনৈতিক কর্মী- কবি গিরীশ গৈরিক সে কথা বলার জন্যে নিজেকে অনেক দিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
গিরীশের প্রধান প্রবণতা- সমকালীনতা। সমকালীন এ সমস্ত পর্বগুলোকে কবিতার মোড়কে বাধতে গিয়ে সে ভারতীয় মিথলোজির কাছে দাঁড়িয়েছেন, তেমনি পাশ্চাত্যের মিথেও মনোযোগ দিয়েছেন। সত্যিকার অর্থেই কবিতা মানুষের চেতনাকে কী দিতে চায়- গিরীশের কবিতা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম। কবিতা কী কোনও গল্প বলবে, না সাংবাদিকতা করবে, না ইতিহাসবেত্তা হবে- নাকি পৃথিবীর সমস্ত ধুলোঝড়, আলো-হাঙয়া, শীত-গ্রীষ্মকে এক করে মানুষের নিউরনের ভেতরে কেবল একটুখানি টোকা দিয়ে যাবে, তারপর অনন্তকাল ধরে মানুষের বোধ একটা নির্জন বনাঞ্চলে পড়ে দুলতে থাকবে, যেখানে হাজার বছরেও কোনও রূপ বদলায়নি।
শেষমেশ কবিতা কী মানুষকে সেখানেই নিয়ে যাবে- ‘আরেকটু সূর্যালোক পেলেই মেয়েটির চোখই সূর্য হয়ে যাবে’- এমন একটা কবিতার পঙক্তি আমাকে তেমনটিই ভাবালো। কিন্তু সমকাল গিরীশকে দিয়ে যা বলিয়ে বা করিয়ে নিতে চাই, বা সমকালের প্রতি কবি নিজেকে যেভাবে দায়বদ্ধ করে তুলেছেন- সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলতে হচ্ছে- ‘যাদের রক্তের ভেতর প্রতি মুহূর্তে চাবুকের আঘাত শুনতে পাওয়া যায়/যারা ঘর ভাড়া দিতে না পেরে নিজেকেই ভাড়া দেই’- কবি আমাকে টেনে হিচড়ে সেই হাজার বছরের নিমগ্ন বনাঞ্চলের ভেতর থেকে আবার দাঁড় করিয়ে দিলেন শহরের রাত্রীকালীন ফুটপাতে।
গিরীশ গৈরিকের প্রথম কবিতার বই এটি। বেশির ভাগ কবির প্রথম কবিতার বইটিতেই অনেকটা আঁচ করে নেওয়া যায় কবির বিস্তার। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রমও স্বাভাবিক- যেখান থেকে হাঁটা শুরু করেছিল, সেখানে আর ঘুরে আসে না অনেকেই। গিরীশের শব্দ আর বক্তব্য প্রথম থেকেই অনেকটাই তার মতো- একটা চাল ঠিক রেখে চলছেন। শব্দের প্রতি যে যত্ম, বক্তব্যের প্রতিও সেই যত্ম এক হয়ে উঠলে গিরীশের যে কম্পোজিশন তৈরি হবে, তা কনটেমপোরারি শিল্পমাধ্যমগুলোর সাথে সমান্তরাল হাঁটবার সুযোগ পাবে। গিরীশ আসলে অনেক বিষয়ে মাথা ডুবিয়ে দিয়ে একটা দায়িত্ববান চরিত্রের অধিকারী হতে চান।
কিন্তু কনটেমপোরারি শিল্প কী তা চাচ্ছে? কনটেমপোরারি শিল্প অনেকটাই ক্লোজআপ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তি যেভাবে ভেঙে আরও টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। এ কারণে ব্যক্তির আর্টফর্মও হয়ে উঠছে ক্লোজড। কিউবিক। ফলেই এখন আর মহাকাব্য লেখা হচ্ছে না। শিল্পীদের ক্যানভাসও সিসতিন চ্যাপেলের গল্প বলছে না, বলছে রেমব্রান্টের কুঁজো হওয়া পিঠের কথা।
‘বিপদে তেলাপিয়া কীভাবে সন্তানদের মুখের ভেতরে রাখে’ এরকম একটা পরিচ্ছন্ন বক্তব্যের কাছে দাঁড়িয়ে গিরীশের আরো বেশি সংযমী হয়ে ওঠার ক্ষেত্র তৈরি হলো। ‘সুতরাং রাজাকারের চামড়ার ডুগডুগি এই বাংলায় বাজবেই’- এমন অচল, পুরানো কথা নিয়ে কবিতাকে পারপাস সার্ভ করার জন্যে প্রবাহিত না করে গিরীশ যেনো ঐ হাজার বছরের পুরানো বনাঞ্চলে বসে ধ্যান করবেন- তুমি তো জান আমি যতোটা না হুলোবিড়াল/তারও বেশি বংশবদ দাস/ যে কিনা কবিতা কবিতা করে একদিন সাপের পা দেখতে চায়...


 

মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ
বাইপাস খুঁজি অন্য কোথাও

জিয়াবুল ইবন সম্ভবত শিল্পে ‘কোনো বাইপাস নেই’- যেহেতু মননে আঘাত করে একগামী একদল সরল ইমেজ। এদের কেউ বহন করে দুঃখ, কেউ রঙ বহন করে, আবার কোনো ইমেজ গন্ধ নিয়ে বিলাসে ভ্রমণরত, পাঠকের মগজে ফুটে ওঠার আশায়। জিয়াবুল ইবনের ইমেজ নির্মাণ প্রক্রিয়া সরলতর উপায়ে ঘটে। কিন্তু এই সরলতার প্রতিক্রিয়া সাংঘাতিক। এজন্যই একগুচ্ছ অনুভূতি সাবলীল কালো অক্ষরে চলচ্চিত্র হয়ে উঠতে পারে। এই চলচ্চিত্র কেবল ‘নিরস’ কলাকৈবল্যবাদী নয়। সময়ের কঠিন-কঠোর আঘাতকে মনে রাখে। কবিতার বুননে ঠাঁই নেয় চলচ্চিত্রের কৌশল রপ্ত করে।
জিয়াবুল ইবনের নন্দন তাই ভারসাম্যময়, কঠোরতা কোমলতা একই গ্রন্থে হাত ধরাধরি করে যেন ব্রিজ পার হচ্ছে। কবির শুরুর বয়ানে একথা স্পষ্ট ‘কৃষক কৈবর্ত নাচোল তেভাগার ইতিহাস-সহ সবই সমান বাঁচব বলে মাঠে আমার বহু প্রতিপক্ষের মুখোমুখি’। জিয়াবুল ইবনকে চিনতে তাঁর পঙক্তিমালাই যথেষ্ট। তবু তাঁর আত্মপরিচয়ও কাব্যিক- ‘আমরা দুইভাই সেলাইশ্রমিক। সুই-সুতোয় মত মিশিয়ে সেলাইয়ে সেলাইয়ে সম্পর্কসূত্রে বাঁধে সোল্ডার। কিন্তু এই সূত্র যে হোক মালার সূত্র; অসংখ্য ফুল। যে সুতোয় বাঁধা।’
কোনো বাইপাস নেই গ্রন্থটির ৪৮টি কবিতা বিচিত্র-অভিসারী। এক রঙের ফুল নয় কবিতাগুলো। উত্তর-আধুনিক নন্দনতত্ত্বের শর্তমেনে যেন, প্রত্যেকটি কবিতা ভিন্ন রঙের। ‘কাক হলো কাউয়া’ বলতে বলতে পরের পাতায় একই কবি মানুষে মানুষে ফুলে ফুলেই সশস্ত্র রেণু স্পোরগুলো গহিন জঙ্গলে এককেটি খুদে গেরিলা’- বললে পাঠককে ভাবতে হয় এর গন্তব্য নিয়ে। বলা যায়, ৪৮টি কবিতাই রূপ-রস-গন্ধে ৪৮টি ব্যঞ্জনা তৈরি করবে।
‘কোনো বাইপাস নেই’ কাব্যগ্রন্থের দুটি দিক পাঠককে মুগ্ধ করতে পারে। এক, প্রকৃতির উপাদানের সঙ্গে আত্মলীন করার সরল অভিপ্রায়। দুই, প্রকৃতির সচল-সপ্রাণ জড় উপাদানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পাওয়ার ক্ষমতা। কাব্যগ্রন্থটিতে বারবার এসেছে : ‘আমি তো বাবুই পাখি’, ‘প্রাচীন ব্রহ্ম পুরুষ একটি শাখা আমি’, ‘আমি প্রত্মপ্রসূতি পদ্মা’- এই আত্মস্বীকৃতির দাবির মধ্যের নিহিত রয়েছে সর্বপ্রাণ কবিতার ছাপ। ঠিক তেমনি বলেছেন, ‘এভাবে ডেকো না লালশাক’- এই যে লালশাকের মতো পাশ কাটিয়ে নির্লিপ্ত উপাদারে সঙ্গে কবির আলাপ দিব্যজ্ঞানের সমতুল্য। আমার বিবেচনায়- এটাই কবিত্ব।
এই কাব্যগ্রন্থের আরো উজ্জ্বল দিক প্যারাডক্সের ব্যবহার। বিক্ষুব্ধ সময়কে অঙ্কিত করতে কোমল চিত্রকল্পের মধ্যে কঠোরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হুট করে যেন। আবার, সংস্কৃতবহুল শব্দময় বাক্যের মধ্যে নিয়ে এসেছেন কনটেমপরারি ইংরেজি। পাঠককে তা বিরক্ত করবে না, কারণ, প্রস্তুত পাঠকমাত্রই জানেন, তা কাব্যকৌশল মাত্র সময়কে প্রকাশ করার। যেমন, ‘সময়ের যোগবিয়োগ গুণভাগকরি এক স্রোতস্বিনীর মোহনায় বসে বসে। বুঝি সময়ই দিতে পারে এই শিল্পের সঠিক ইক্যুয়াল টু।’ অথবা ‘রাত্রির ঘরে ছাইভর্তি অ্যাশট্রে- অবিকল মানুষের করোটির মতো। মানুষটি তামাটে বর্ণের।’ অথবা ‘চোখের অ্যাশ-ক্যালার কার্টিজে সে আজ আঁকছে অসংখ্য সকালের জ্যামিতি।’ প্রভৃতি বাক্যের উঁচু-নিচু শব্দগুলো সময়কে প্রকাশ করার অভিপ্রায়েই রচিত।
ছোট্ট, নানান স্বাদের নানান বিষয়ের কবিতা কবির অষ্টপ্রহরের মানস প্রকাশ করে, কবিতার নামগুলোও বৈচিত্র্যময়, কাব্যশক্তি ও দক্ষতার প্রকাশ ঘটেছে কবিতার নামকরণে। আমার মতো, তাঁর কাব্যপ্রবণতা পছন্দ করে কবিতাগুলো পাঠকের ভালো লাগতে পারে।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা