X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভালোবাসার রকমফের

ফজল হাসান
০৪ আগস্ট ২০১৬, ১৪:৩৮আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০১৬, ১১:০৯

ভালোবাসার রকমফের তবে নারী-পুরুষের ভালোবাসার রকমফের প্রসঙ্গে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথিতযশা ফরাসী কথাসাহিত্যিক গী দ্য মোপাসঁ স্বীকার করেছেন, ‘শুধু মহিলরাই জানে কেমন করে ভালোবাসতে হয়।’ অন্যদিকে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ‘সারাজীবনে পুরুষ মানুষ একবারই প্রেমে পড়তে পারে, কেননা অন্য সব হৃদয় ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার শুধুমাত্র জোর করে ভালো লাগা থেকে সৃষ্ট।’

‘জীবনে একটি মাত্র ভালো জিনিস আছে এবং তাহলো ভালোবাসা’– গী দ্য মোপাসঁ।
যদি তাই হয়, তাহলে ভালোবাসা কারে কয় ?
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভালোবাসার প্রকৃত সংজ্ঞা নিয়ে প্রচুর মাথা ঘামিয়েছেন । তিনি এই প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে অসংখ্য উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, গান এবং নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন । অথচ এক সময় তিনি নির্দ্বিধায় সরাসরি সখির কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘সখি ভালোবাসা কারে কয়?’
যদিও ‘ভালোবাসা’ মাত্র চার অক্ষরের একটা শব্দ, কিন্তু এর সংজ্ঞা বিশাল এবং পরিধি বিস্তৃত, বলা যায় সীমাহীন। এছাড়া ভালোবাসার রূপ অজস্র এবং প্রকাশভঙ্গি বিচিত্র ও নানান বর্ণে বর্ণিত । একথা স্বীকার করতে হবে যে, প্রেম-ভালোবাসা শুধু গভীর আবেগ, প্রচণ্ড আসক্তি এবং কল্পনার ঘেরাটোপে আবদ্ধ নয়, বরং দর্শনেরও একটি প্রধান উপাদান । কথিত আছে, গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে ভালোবাসা নামক নিত্য ব্যবহৃত এই শব্দটিকে নিয়ে গভীর আলোচনায় নিমগ্ন থেকেছেন । ভালোবাসার রকমফের নিয়ে বিশদ আলাপ-আলোচনা এবং উপস্থিত শিষ্যদের ব্যাখ্যা ও মতামত শোনার পর তিনি সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে, ‘অপ্রাপ্তি বা না-পাওয়ার জন্য যে অলঙ্ঘনীয় বাসনা বা পরম ইচ্ছে, তারই অন্য নাম ভালোবাসা বা প্রেম ।’ অন্যদিকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর ফার্সী ভাষার মরমী-সাধক কবি জালালউদ্দিন রুমির মতে ‘নিজের সঙ্গে সবকিছুর সেতু বন্ধনই হলো ভালোবাসা ।’ এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি রফিক আজাদ অত্যন্ত সুন্দর এবং সহজ-সরল ভাষায় ‘ভালোবাসার সংজ্ঞা’ দিতে গিয়ে বলেছেন:

‘ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি,

পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা;

ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া,

...   ...   ...

ভালোবাসা মানে ঠাণ্ডা কফির পেয়ালা সামনে

অবিরল কথা বলা;

ভালোবাসা মানে শেষ হয়ে-যাওয়া কথার পরেও

মুখোমুখি বসে থাকা ।’

আসলে ভালোবাসার সীমানা চার দেওয়ালের মধ্যে কিংবা নির্ধারিত কোন পরিসীমায় বেঁধে রাখা যায় না । কেননা মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা, বিশেষ করে বাবা-মার সঙ্গে সন্তানের, সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার, ভাই ও বোনের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক এবং বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে নিবীড় সম্পর্ক- এসব কিছুই একেক ধরনের ভালোবাসা । এছাড়া সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মানুষের প্রেম হলো স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মধ্যে এক ধরনের নিবীড় সম্পর্ক । তাই তো স্রষ্টার প্রেমে বুঁদ হয়ে তের শতকের বিখ্যাত ফার্সী মরমী-সাধক কবি জালালউদ্দিন রুমি বলেছেন, ‘তোমার প্রেম আমার দেহ থেকে আত্মা তুলে নিয়েছে আকাশে এবং দু’জাহান থেকে তুমি আমাকে তুলে নিয়েছ । আমি চাই তোমার সৌরকরোজ্জ্বল আমার শরীরের সবটুকু তরল শুষে নিক, তোমার উত্তাপ যেন মেঘের মতো আমার আত্মাকে উপরে তুলে নিতে পারে ।’

এছাড়া মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির প্রেম, এমনকি পোষা পশু-পাখির মধ্যেও এক ধরনের সখ্যতা রয়েছে । আসলে প্রেম-ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে মানুষের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে । তাকে শুধু অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে চিনে নিতে হয়, বুঝে নিতে হয় এবং অনুভব করতে হয় হৃদয়ের উষ্ণতা ও আবেগ দিয়ে । তাই প্রেম হচ্ছে উভয় পক্ষের বিপরীত অনুভূতি । এই অনুভূতি আনন্দ-দুঃখ কিংবা হর্ষ-বিষাদের মিশেল ।

যাহোক, আমরা সাধারণভাবে ভালোবাসা বলতে যা বুঝি, কিংবা বোঝাতে চাই, তাকে কি এই সংক্ষিপ্ত এবং কঠিন সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব ? পশ্চিমবাংলার প্রখ্যাত সাহিত্যিক শিবনারায়ন রায় ‘সখি ভালোবাসা কারে কয়’ এক নিবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, “মা আর শিশুর ভালোবাসা, মধ্যবিত্ত সংসারী বাঙালির ইলিশ মাছ এবং ল্যাংড়া আমের প্রতি ভালোবাসা, সন্ধ্যার আকাশে মেঘে মেঘে নানা রং-এর খেলা দেখতে ভালোবাসা, রবীন্দ্রসঙ্গীত বা জীবনানন্দের কবিতাকে ভালোবাসা, যুবক যুবতীর ‘প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর’ ভালোবাসা, বাংলা ভাষাকে ভালোবাসা- প্রতি ক্ষেত্রেই কি আমরা ভালোবাসা শব্দটির ব্যবহার করি না ? কী সেই লক্ষণ, যা এদের সকলকে একই জ্ঞাতার্থের অন্তর্ভুক্ত করে? এ কথা সত্যি যে, প্রেম-ভালোবাসা কোন কলাবিদ্যার বিষয় নয়, এমনি প্রযুক্তিও হয় । প্রেম-ভালোবাসা শুধু প্রেম-ভালোবাসাই।  

তাহলে ভালোবাসা কি অবিনশ্বর, নাকি কোনো দেশ-কাল-পাত্র কিংবা ধর্মের অনুশাসন মানে? ভালোবাসা কি কোনো গতানুগতিক নিয়ম মেনে ধরা দেয় ? নারীরা কি পুরুষের চেয়ে বেশি ভালোবাসে? এছাড়া মানুষ কি জীবনে শুধু একজনকে ভালোবাসে? কারোর জীবনে ভালোবাসা কি কেবল একবারই আসে?

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে এ ধরনের হাজারো প্রশ্ন কারোর মস্তিষ্কের ভেতর উদয় হওয়া মোটেও অস্বাভাবিক নয়। তবে নারী-পুরুষের ভালোবাসার রকমফের প্রসঙ্গে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথিতযশা ফরাসী কথাসাহিত্যিক গী দ্য মোপাসঁ স্বীকার করেছেন, ‘শুধু মহিলরাই জানে কেমন করে ভালোবাসতে হয়।’ অন্যদিকে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ‘সারাজীবনে পুরুষ মানুষ একবারই প্রেমে পড়তে পারে, কেননা অন্য সব হৃদয় ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার শুধুমাত্র জোর করে ভালো লাগা থেকে সৃষ্ট।’

যাহোক, একথা সত্যি যে, ভালোবাসার উৎস ‘প্যাশন’ অর্থাৎ প্রচণ্ড আবেগ বা আসক্তি, বিচারবুদ্ধি নয় । সুতরাং ভালোবাসার উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে কে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেই জটিল হিসেব কষে এবং কড়ায়গণ্ডায় লাভ-ক্ষতি জেনে কেউ কোনোদিন প্রেমের সাগরে ঝাপ দেয়নি । তবে অন্যদিকে জার্মান কবি এবং লেখক গ্যেটে (১৭৪৯-১৮৩২) ভালোবাসা প্রাপ্তির আনন্দে উল্লসিত হয়ে লিখেছেন, ‘আর তবুও কী আনন্দ, কী আনন্দ, ভালোবাসা পেয়েছি, ভালোবেসেছি ।’

ভালো এবং মন্দ যেমন সব কিছুতেই আছে, তেমনি প্রেম-ভালোবাসার মধ্যেও ভালো-মন্দ আছে । ভালোবাসার একদিকে আছে প্রাপ্তি এবং অন্যদিকে আছে অপ্রাপ্তি, বিরহ-বিচ্ছেদ, না-পাওয়ার দুঃখ-যন্ত্রণা এবং বুকের মধ্যে তীব্র হাহাকার । অনেক সময় ভালোবাসার জন্য চড়া মূল্য দিতে হয় । হয়তো এ জন্যই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে ।’ বিশ্বে যত বিয়োগান্তক প্রেম-ভালোবাসার কাহিনি বা ঘটনা অমর হয়ে আছে, তার মধ্যে রোমিও-জুলিয়েট এবং অ্যান্থোনী-ক্লিওপেট্রার অমর প্রেম কাহিনি অন্যতম । তবে বাস্তব ঘটনা ছাড়াও ভালোবাসার বিয়োগান্তক পরিনতি বাংলা ক্ল্যাসিক উপন্যাসেও দেখা যায় । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ তার উজ্জ্বল উদাহরণ ।

গ্রীক মহাকবি হোমারের রচিত ‘ইলিয়াড’ মহাকাব্যে দেখা যায় যে, ভালোবাসার এমনই অসীম শক্তি যে একজন সর্বস্ব হারানো রাজকুমার এক সুন্দরী, অপ্সরী রমণীর ভালোবাসা পেতে সব মানুষ এবং নগরীর ওপর প্রভুত্ব করার ক্ষমতা কিংবা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী হওয়ার দুর্লভ সুযোগ হাতছাড়া করে দিয়েছেন অম্লান বদনে ।

ভালোবাসার চরম মূল্য দেওয়ার নজির ইতিহাসে অনেক ঘটনাই নীরব সাক্ষী হয়ে আছে । উল্লেখ্য, ভালোবাসার মূল্য দিতে গিয়ে অনেকে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, হয়েছেন সমাজচ্যুত, এমনকি বাধ্য হয়েছেন দেশান্তরি হতে । এছাড়া অনেকে অনেক ধরনের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন ।

বৃটিশ সাম্রাজ্যের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড প্রেমিকা আমেরিকার নাগরিক মিসেস সিম্পসনের জন্য ১৯৩৬ সালে ছোট ভাইয়ের হাতে সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে স্পেনে চলে গিয়েছিলেন । ভালোবাসার মূল্য দিতে গিয়ে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করতে কোনো দ্বিধা করেননি । প্রেম-ভালোবাসার মূল্য দেওয়ার জন্য শুধু কি রাজ্যপাট স্বেচ্ছায় ছেড়ে সাধারণ জীবন-যাপন মেনে নেওয়া ? আসলে কিন্তু শুধু তা-ই নয় । ইতালির বিখ্যাত কবি দান্তে বিয়াত্রিস (তার দেওয়া নাম, আসল নাম ব্রিস প্রটিনারী) নামের একটি মেয়ের কথা ভেবে সারাজীবন একাকী কাটিয়ে দিয়েছেন । শ্রীকৃষ্ণের ভালোবাসার টানেই কি মীরাবাঈ স্বামী, সংসার, আত্মীয়-স্বজন, রাজ্যপাট ছেড়ে পথে বেরিয়ে পড়েননি ? এছাড়া ভালোবাসার টানে ৬৫ বছর বয়সে ভারতের মালয়ালাম ভাষার অন্যতম কথাসাহিত্যিক কমলা দাশ ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং নাম রেখেছিলেন কমলা সুরাইয়া । কবি ওমর খৈয়াম তো প্রিয়ার তিলের বিনিময়ে পুরো বোখারা শহরই দিতে চেয়েছিলেন ।

একথা সত্যি যে, মানুষ একবার ভালোবাসার মদিরায় সিক্ত হলে এহেন কাজ নেই, যা সে নির্দ্বিধায় এবং নিঃসঙ্কোচে করতে পারে না । অনেকে প্রেম-ভালোবাসার অদৃশ্য মায়াজালে জড়িয়ে গেলে চারপাশের সবকিছু থোড়াই কেয়ার করে । তখন মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি পরিচিত মানুষেরা গৌণ হয়ে যায় । সামাজিক সীমাব্ধতা এবং অপবাদ-অপমানও তাদের পথভ্রষ্ট করতে পারে না । এ প্রসঙ্গে  কবি জালালউদ্দিন রুমির কবিতা উল্লেখ করা যেতে পারে । তিনি বলেছেন, ‘কে শুনলো, কিংবা কে কি ভাবলো, তার তোয়াক্কা না করে আমি শুধু পাখির মতো প্রাণ খুলে গাইতে চাই ।’

আফগানি কথাসাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত লেখক আকরাম ওসমান ‘মানুষ কথা রাখে’ গল্পে অধিবক্তার মুখ দিয়ে বলেছেন, ‘প্রেমিক কখনো মৃত্যুকে ভয় করে না, ভালোবাসা কখনো পাহাড় কিংবা জেলখানা ভয় করে না, প্রেমিকের মন ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো, যা রাখালের রক্তচক্ষু কিংবা চিৎকারে ভয় পায় না ।’ এছাড়া পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এবং ১৯৭২ সালে মান্না দের কন্ঠে গাওয়া সেই বিখ্যাত গানের কলি তো উদাহরণ হিসাবে আছেই, ‘অপবাদ হোক না আরো, বয়েই গেল / নয় লোক জানাজানি হয়েই গেল / প্রেম কি তাতে কমে, বরং আরো বেড়েই গেল ।’ তাইতো প্রখ্যাত মার্কিন লেখিকা লিডিয়া ডেভিস বলেছেন, ‘জটিল এবং কন্টকাকীর্ণ প্রেম সাদামাটা প্রেমের চেয়ে বেশি চমকপ্রদ ।’  

অন্যদিকে জীবনে ভালোবাসা না পেলেও দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি শোনা যায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে: ‘হয়তো কিছুই নাহি পাবো, তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাবো ।’ অন্যদিকে হারানো ভালোবাসা ফিরে পেলে জীবন বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার করে কবি রফিক আজাদ তো রীতিমত ঘোষণা দিয়েছেন, ‘যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেব জীবনের ভুলগুলি ... পাহাড় ডিঙাবো আর সমুদ্রে সাঁতরাবো ।’

প্রেম-ভালোবাসা পাবার আকুলি-বিকুলি শুধু প্রাচ্যে না, পাশ্চাত্য সঙ্গীতেও হরহামেশা দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে ক্রিস ডি বার্গের লেখা এবং জন ডেনভারের কণ্ঠে সেই বিখ্যাত গান ‘ক্যারি মী লাইক এ ফায়ার ইন ইওর হার্ট’, অর্থাৎ ‘আমাকে তোমার হৃদয়ে আলোর মতো বহন করো’, কিংবা পল সাইমনের লেখা এবং গাওয়া গান ‘লাইক এ ব্রিজ ওভার ট্রাব্যাল্ড ওয়াটারস্ / আই উইল লে মী ডাউন’, অর্থাৎ ‘তোমার বিপদে আমি উত্তাল জলরাশির ওপর নিজেকে সেতুর মতো বিছিয়ে দেব’ উল্লেখ করা যেতে পারে । অন্যদিকে কেউ আবার হতাশার বালুচরে দাঁড়িয়ে বেদনার রসে সিক্ত গলায় গেয়ে ওঠেন, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই ।’

ভালোবাসার মূল্য কত ? কেউ কি জানে, নাকি বলতে পারে? এটা কি টাকা-কড়ি কিংবা সোনা-রূপা দিয়ে মাপা যায়?

এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে এক সময়ের সর্বাধিক শ্রুত সেই বিখ্যাত বাংলা গান, ‘ভালোবাসার মূল্য কত? আমি সে-তো জানি না।’ আসলে ভালোবাসা মাপার কোনো যন্ত্র আজ অবধি কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি এবং নিশ্চিন্তে বলা যায়, ভবিষ্যতে কেউ আবিষ্কার করতে পারবে না । কেননা ভালোবাসা হচ্ছে এক ধরনের বায়বীয় অনুভূতি, যা ধরা কিংবা ছোঁয়া যায় না, শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয় । আসলে ভালোবাসার মূল্য যা-ই হোক না কেন, প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তির প্রকাশই বেশি । তাইতো পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক যাযাবর তার বহুল পঠিত, আলোড়িত এবং বিখ্যাত উপন্যাস ‘দৃষ্টিপাত’-এর শেষে প্রেমের স্বরূপ তুলে ধরেছেন, ‘প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা আর প্রবঞ্চিতকে দেয় কি ? তাকে দেয় দাহ ।’ একথা অনস্বীকার্য যে, ভালোবাসা বহুমুখী, যার গতি-বিধি ছড়িয়ে আছে আসমান-জমিনে, আকাশে-বাতাসে, দশ-দিগন্তে । 

যাহোক, পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতে প্রেম-ভালোবাসা ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কেননা প্রেম-ভালোবাসা মহিমান্বিত, শাশ্বত এবং অবিনাশী। পরিশেষে তাই মরমী কবি জালালউদ্দিন রুমির ভাষায় বলতে হয়, ‘যেখানেই থাকো এবং যা কিছুই করো- ভালোবাসায় ডুবে থাকো।’ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন