X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সাহিত্য এক মাঙ্গলিক শক্তি : কাজুও ইশিগুরো

.
০৭ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৫০আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৫৬

কাজুও ইশিগুরো ৫ অক্টোবর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর টেলিফোনে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন নোবেল মিডিয়ার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অ্যাডাম স্মিথ। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন ফাহমিদা দ্যুতি।

কাজুও ইশিগুরো : হাই, হ্যালো, মিস্টার স্মিথ। কেমন আছেন?

অ্যাডাম স্মিথ : খুব ভালো। ফোন করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

ইশিগুরো : হ্যাঁ, আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনাকে অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। এখানে একেবারে গোলমেলে অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে। হঠাৎ করে সংবাদপত্রের অনেক লোক এসে জড়ো হয়েছেন। রাস্তায় তারা সারি ধরে দাঁড়িয়ে গেছেন।

স্মিথ : কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি আমিও। তাহলে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিতভাবে আপনার দিনটা নিশ্চয়ই বদলে গেছে। খবরটা পেলেন কিভাবে?

ইশিগুরো : কিচেনে বসে এক বন্ধুর কাছে একটা ই-মেইল লিখছিলাম। তখনই ফোনটা বেজে উঠল। তখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি। আমার এজেন্টদের লোকেরা পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠান সরাসরি দেখছিলেন। আমার মনে হয়, তারাও আশা করেননি আমিই পুরস্কারটি পেতে পারি। তারা শুধু শুনতে চাচ্ছিলেন, এবারের নোবেল পুরস্কার কে পাচ্ছেন। তারপর একের পর এক ফোন আসতে থাকে। আমরা যাচাই করে দেখার চেষ্টা করি, কেউ চাতুরী করছে কিনা, ভুয়া খবর দিচ্ছে কিনা, কিংবা খবরটা আসলে কী ইত্যাদি। তারপর ধীরে ধীরে নিশ্চিত হতে থাকি। যখন বিবিসি থেকে ফোন আসে তখন সত্যি বলে মনে করি। তবে আমার এখানকার অবস্থা আগের মতোই চলতে থাকে, কাজকর্ম একই রকম চলে। অনেকটা পরিত্যক্ত মেরি সেলেস্তের মতো। সকাল এগারোটার সময় যেমন চলছিল তেমনই। লোকজনের ভীড় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তেমনই চলছিল। তারপর শুরু হয়ে গেল হৈচৈ বিশৃঙ্খলা। রাস্তায় লোকজন সারি ধরে ভীড় করে আছেন, আমার সাক্ষাৎকার নিতে চাচ্ছেন।

স্মিথ : তাহলে এতক্ষণ কিছুটা থেমেছে? 

ইশিগুরো : না, না। আমার মনে হয় থামতে সময় লাগবে। নোবেল পুরস্কার পাওয়া তো দারুণ একটা মর্যাদার বিষয়; এ পুরস্কার পাওয়ার পর এসব চলেই। আমি মনে করি, নোবেল পুরস্কারের চেয়ে বেশি সম্মানজনক পুরস্কার আর হতে পারে না। এ পুরস্কার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে বলতে হয়, এ পুরস্কারের মর্যাদার পেছনে একটা বড় কারণ হলো, সুইডিস একাডেমি সফলভাবে সবরকম বিভাজন কিংবা দলীয় রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার উর্ধ্বে থাকতে পেরেছে। মানুষের কাছে সম্মান পাওয়ার মতো কতিপয় প্রতিষ্ঠানের অন্যতম এ একাডেমি এখন পর্যন্ত শুদ্ধতা ধরে রাখতে পেরেছে। সারা বিশ্বের মানুষের শ্রদ্ধা পাওয়ার কারণ এটাই। সুতরাং আমি মনে করি, সুইডিস একাডেমির বাস্তব মানমর্যাদার কারণেই এ পুরস্কার পাওয়াটা এতটা আনন্দের। আর আমার মনে হয়, সেটা একাডেমির নিজেরই এক বিশাল অর্জন। জীবনের অনেক স্তরে সুইডিস একাডেমি যোগ্য মানুষদের সম্মান দেখিয়ে আসছে বলে এত বছর ধরে একাডেমি এমন একটা উচ্চ আসন ধরে রাখতে পেরেছে। আরেকটা কারণ হলো, এ পুরস্কার পাওয়া আমার জন্য বিস্ময়কর একটা সম্মান। কারণ যাঁদের আমারা মহান নায়ক বলে মানি তাঁদের কাতারে আমার নাম যুক্ত হলো। নিঃসন্দেহে তাঁরা মহান লেখক। ইতিহাসের মহত্তোম লেখকগণ এ পুরস্কার পেয়েছেন। আমাকে বলতেই হবে, বব ডিলানের মতো মহান ব্যক্তির পরের বছর এ পুরস্কার পাওয়া সত্যিই বিরাট ব্যাপার। আমার বয়স তোরো বছর থেকে তাঁকে আমার নায়ক মনে করে আসছি। সম্ভবত তিনি আমার মহত্তোম নায়ক।

স্মিথ : দারুণ সৌভাগ্যময় সঙ্গ।

ইশিগুরো : হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি প্রায়ই বব ডিলান হওয়ার অভিনয় করে থাকি। তবে আপনার জন্য তেমন কিছু এই মুহূর্তে করছি না।

স্মিথ : তাহলে তো করুণার কথাই। কমপক্ষে তেমন কিছু শুনতে পেলে ভালো লাগত। আপনি ডিসেম্বরে স্টকহোমে এলে দেখা যাবে আশা করি। 

ইশিগুরো : হ্যাঁ, চেষ্টা করে দেখা যাবে। 

স্মিথ : অবশ্যই করতে হবে। এ মুহূর্তে ব্রিটেনে খুব মজা হচ্ছে। আপনার এ পুরস্কার পাওয়ার সাথে ব্রিটেনের কি বিশেষ কোনো তাৎপর্য আছে?

ইশিগুরো : আমি মনে করি আছে। বলতে চাচ্ছি, আপনাকে ফোন দিতে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে আমি প্রেস রিলিজের জন্য একটা বিবৃতি লিখছিলাম। ভাবছিলাম তিন লাইনের মধ্যে কী কী লেখা যেতে পারে। আমার মনে হয়, সময়টা আমার জন্য প্রাসঙ্গিক। কারণ বুঝতে পারি, আমার বয়স প্রায় তেষট্টি বছর। আমার তেমন কোনো সময়ের কথা মনে পড়ে না যখন আমাদের পশ্চিমা জগতে মূল্যবোধ সম্পর্কে আমরা এতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। আমি মনে করি, আমাদের মূল্যবোধ সম্পর্কে, আমাদের নেতৃত্ব সম্পর্কে আমরা একটা কঠিন অনিশ্চয়তার সময় পার পারছি। মানুষ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। সুতরাং আমি অবশ্যই আশা করি, নোবেল পুরস্কারের মতো বিষয় পৃথিবীর ইতিবাচক বিষয়ে, পৃথিবীর শোভন মূল্যবোধে অবদান রাখবে, মানুষের চলমানতার বোধে এবং শিষ্টাচারেও অবদান রাখবে। হ্যাঁ, অবশ্যই। 

স্মিথ : আমার ধারণা, আপনি ইদানিং যেসব লেখা লিখছেন সেগুলোতে কোনো না কোনোভাবে পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান, আামাদের পারস্পারিক সম্পর্ক, পৃথিবীর আর সবার সাথে আমাদের সম্পর্ক বিষয়ক প্রসঙ্গ এসে থাকবে। আপনি এরকম বিষয়বস্তুই মনে হয় বেশি পরীক্ষা করে দেখেন, তাই না?

ইশিগুরো : হ্যাঁ, আমি বলব, সেরকমই। মানে, আমি মনে করি, আরো একটু ক্ষুদ্র পরিসরে বললে, যেসব বিষয় আমার মনোযোগ কেড়েছে সেগুলোর অন্যতম হলো, আমরা কিভাবে একই সময়ে ছোট জগতে আর বড় জগতে বাস করছি সেটা। আরেকটি হলো, আমাদের একটা ব্যক্তিগত কর্মক্ষেত্র আছে; সেখানে আমাদের পূর্ণতা আর ভালোবাসা খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। তবে সে চেষ্টা অন্য জগতের সাথেও জড়িত। সেখানে রাজনীতি কিংবা খারাপ জগতেরও প্রাধান্য থাকতে পারে। সুতরাং আমি মনে করি, আমার আগ্রহ সেটাতেও ছিল এবং আছে। আমরা একই সময়ে বড় জগত এবং ছোট জগতে বাস করি এবং কোনোটাকেই আমরা ভুলে যেতে পারি না।

স্মিথ : ধন্যবাদ। যা-ই হোক, মনে হয় এসব বিষয় নিয়ে আরেকদিন কথা বলা যেতে পারে।

ইশিগুরো : হ্যাঁ, বলা যায়।

স্মিথ : এ মুহূর্তে আপনাকে এখন ভাবতে হবে, কিভাবে সংবাদপত্রের মানুষদের সামাল দিবেন। শুধু একটি বিষয় সম্পর্কে বলুন- আপনি যে বিশাল মনোযোগের উচ্ছ্বাস পেতে যাচ্ছেন, তাতে কেমন অনুভব করছেন? 

ইশিগুরো : হ্যাঁ, অবশ্যই ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কিছুটা অস্থির লাগার মতোও বটে। কারণ আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় ভাবিইনি, আজকের দিনটা সাধারণ একটা দিন নয়; অন্যরকম একটা দিন হতে যাচ্ছে। আমি মনে করি, সংবাদপত্র, মিডিয়া- এরা সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারকে যে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে- এটাতো একটা দারুণ ব্যাপার। যদি এরকম কখনও দেখতে হয়- কেউ সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার পেলেন, অথচ কেউ আগ্রহই দেখাচ্ছে না, আমার জন্য সেটা একটা ভয়ানক আতঙ্কের অবস্থা হবে। সেরকম হয়ে থাকলে বুঝতে হবে, পৃথিবীতে কতিপয় জঘন্য ঘটনা ঘটেছে।

স্মিথ : সাহিত্যের জন্য উদযাপন করার মতো একটা দিন নিশ্চয় খুশির দিন।

ইশিগুরো : ঠিকই। আমি মনে করি, সাহিত্য দারুণ সুন্দর হতে পারে, কখনও কখনও খারাপ কিছুর শক্তিও থাকতে পারে সাহিত্যের মধ্যে। আমার মতে, সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারের মতো বিষয়ের অস্তিত্বই নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে, সাহিত্য এক মাঙ্গলিক শক্তি।

স্মিথ : দারুণ! ঠিক আছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে ডিসেম্বরে স্টকহোমে দেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

ইশিগুরো : হ্যাঁ, অবশ্যই আসব। ঠিক আছে। মিস্টার স্মিথ, আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগল।

স্মিথ : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ইশিগুরো : ভালো থাকবেন। বিদায়।

জেড-এস
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা