X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মির্জা গালিবের কিছু পঙক্তি

মূল হতে ভাষান্তর : জাভেদ হুসেন
০৭ জুন ২০১৮, ১২:৫৭আপডেট : ০৭ জুন ২০১৮, ১৩:০৪

মির্জা গালিবের কিছু পঙক্তি

[মোগল সাম্রাজ্য অস্ত যাওয়ার কালে ছিল উর্দু কাব্যের সবচেয়ে অহঙ্কারের যুগ। এর কারণ বোধ হয় এই যে, উর্দু কাব্য বাইরের প্রকৃতির চাইতে মানুষের মনোজগতের প্রকৃতির দিকেই বেশি মনোযোগী। আর দীর্ঘ দিনের শাসনের, সংস্কৃতির অধিকার থেকে সরে যাওয়ার এমন দুর্যোগ ভারতবর্ষের বুকে কমই নেমেছে।  মির্জা গালিব সেই বেদনার শ্রেষ্ঠ রূপকার। একজন মান্য কাব্য আলোচকের মতে—ভারতবর্ষে দু’টো মাত্র প্রেরিত পুস্তক আছে, একটি পবিত্র বেদ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে গালিবের কাব্য সংকলন। ১৭৯৭ সালে আগ্রায় জন্ম নিয়ে ছিলেন মির্জা আসাদুল্লাহ খান। কবি নাম ‘গালিব’, যার অর্থ বিজয়ী।  কৈশোরের পর জীবনের বাকি অংশ কাটিয়েছেন দিল্লিতে। ভারতবর্ষের প্রথম আধুনিক মানুষদের মধ্যে অন্যতম তিনি।  বলা হয়—কাব্য যদি ধর্ম হয়, তবে গালিবকে না বোঝা মানে কাফের হওয়া! গালিব দৃশ্যকল্পের কবি। মাত্র ২৩৪টি গীতিকবিতা আছে তাঁর চলতি কাব্য সঙ্কলনে।  তাতেই তিনি উর্দু কাব্যের অধীশ্বর।] 

 

বন্দগি মে ভি ও আযাদ-ও-খুদবি হ্যায় কি হাম

উলট ফির আয়ে দরে কাবা আগার ওয়া না হুয়া

 

বন্দনার মাঝেও সেই স্বাধীন চিত্ত আর আত্মবোধ

পাল্টা ফিরে আসি যদি কাবার দরজা বন্ধ থাকে

 

০০০

সিনে কা দাগ হ্যায় ও নালা কি লব তক না গ্যায়া

খাক কা রিযক হ্যায় ও কাতরা কি দরিয়া না হুয়া

 

যে আর্তনাদ ঠোঁটে এলো না সে বুকে দাগ কেটে বসে

যে জলবিন্দু নদীতে পৌঁছলো না তাকে মাটি শুষে নেয়

 

০০০

গর নিগাহ গর্ম ফরমাতি রহি তালিমে যবত

শোলা খস মে জ্যায়সে খুঁ রগ মে নিহা হো জায়েগা

 

তোমার নির্দয় দৃষ্টি যদি এভাবেই সংবরণ শিখিয়ে যায়

শিরায় রক্তের মতো শুষ্ক তৃণে আগুন লুকিয়ে যাবে

 

০০০

জান দি দি হুয়ি উসি কি থি

হক তো য়ে হ্যায় কি হক আদা না হুয়া

 

যে প্রাণ দিলাম তোমায় সে তো তোমারই দেয়া

আসল কথা এই—তোমাকে কিছুই দেয়া হলো না

 

০০০

দর্দ মিন্নতকশে দাওয়া না হুয়া

হাম না আচ্ছা হুয়ে বুরা না হুয়া

 

বেদনা নিদানের জন্য মিনতি করেনি

আমি ভালো হলাম না, মন্দ হয়নি

 

০০০

ম্যায় অওর বযমে ম্যায় সে য়ুঁ তশনাকাম আউঁ

গর ম্যায় নে কি থি তওবা সাকি কেয়া হুয়া থা

 

মদিরা আসর হতে এমন তৃষনার্ত ফিরে এলাম কি না আমি!

আমি না হয় তওবা করেছিলাম, সাকির কী হয়েছিল!

 

০০০

যিন্দেগি য়ুঁ ভি গুযার হি জাতি

কিঁউ তেরা রাহগুযার য়াদ আয়া

 

জীবন তো এমনি কেটে যেত

কেন যে তোমার পথের কথা মনে পড়লো

 

০০০

ফির তেরে কুচে কো জাতা হ্যায় খায়াল

দিলে গুমগশতা মাগার য়াদ আয়া

 

ভাবনা আবার তোমার গলিতে যেতে চায়

বোধ হয় হারানো হৃদয়ের কথা মনে পড়েছে

 

০০০

গো ম্যায় রাহা রহিনে সিতমহায়ে রোযগার

লেকিন তেরে খায়াল সে কাভি গাফিল নেহি রাহা

 

প্রত্যহের তুচ্ছতার কাছে যদিও বন্ধক ছিলাম

তবু তোমার ভাবনায় অবহেলা হয়নি কখনো

 

০০০

যিক্র উস পরিওশ কা অওর ফির বয়াঁ আপনা

বন গ্যায়া রকিব আখির থা জো রাজদা আপনা

 

একে সেই পুষ্পমুখির আলাপ, তাতে আমার বয়ান নিপুণতা

যে ছিল প্রাণের দোসর সেই হলো প্রতিদ্বন্দ্বী আমার

 

০০০

হাম কাঁহা কে দানা থে কিস হুনারপে য়াকতা থে

বেসবব হুয়া গালিব দুশমন আসমাঁ আপনা

 

এমন কি চৌকশ, কী এমন অনন্য গুণ ছিল আমার!

গালিব, এই ভাগ্য অহেতুক শত্রু  হলো আমার

 

০০০

হ্যায় মুঝে আবরে বাহারি কা বরস কর খুলনা

রোতে রোতে গমে ফুরকত মে ফানা হো জানা

 

বসন্ত মেঘের বর্ষণ শেষে উন্মুক্ত আকাশ আমার কাছে

যেন বিরহ বেদনার অশ্রুতে নিজেই ভেসে যাওয়া

 

০০০

খানা বিরাঁ-সাযিয়ে হ্যায়রাত তামাশা কিজিয়ে

সুরতে নকশে কদম হুঁ রফতে রফতারে দোস্ত

 

বিস্ময়ে সব কিছু হারানোর এই তামাশা দেখে যাও

প্রিয়র লীলাময় বিচরণের পদচিহ্ন হয়ে পড়ে আছি

 

০০০

আতা হ্যায় ইক পারায়ে দিল হর ফুগাঁ কে সাথ

তারে নফস কমন্দে শিকারে আসর হ্যায় আজ

 

প্রতি দীর্ঘশ্বাসে হৃদয়ের টুকড়ো বের হয়ে আসে

নিঃশ্বাসের সুতোয় প্রতিদান শিকারে ফাঁদ পেতেছে আজ

 

০০০

শাম্মা বুঝতি হ্যায় তো উসমে সে ধুঁয়া উঠতা হ্যায়

শোলায়ে ইশক সিয়াহপোশ হুয়া মেরে বাদ

 

প্রদীপ নিভে গেলে তা থেকে ধোঁইয়া ওঠে

আমি নেই তাই প্রেমের আগুন কালো পোশাক পড়েছে

 

০০০

ঘর জাব বানা লিয়া তেরে দর পর কহে বাগ্যয়র

জানেগা আব ভি তু না মেরা ঘর কহে বাগ্যয়র

 

তোমার দরজার সামনেই ঘর বানিয়ে নিয়েছি আমি

এবারও কি বলবে আমার ঘরের ঠিকানা জানো না তুমি!

 

০০০

কিঁউ জ্বল গ্যায়া না তাবে রুখে য়ার দেখ কর

জ্বলতা হু আপনি তাকতে দিদার দেখ কর

 

প্রিয়র রূপের বিভায় কেন জ্বলে ছাই হলাম না!

নিজ দৃষ্টির শক্তি দেখে এখন নিজেই জ্বলে মরি!

 

০০০

ইন আবলো সে পাঁও কে ঘাবরা গ্যায়া থা ম্যায়

জি খুশ হুয়া হ্যায় রাহ কো পুরখার দেখ কর

 

পায়ের এই ফোস্কা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম

পথ ভর্তি কাঁটা দেখে মন খুশি হয়ে গেল

 

০০০

লরযতা হ্যায় মেরা দিল য্যাহমতে মেহরে দরখশা দেখ কর

ম্যায় হু ও কাতরায়ে শবনম কি হো খারে বাঁয়াবা পর

 

উদার সুর্যের কষ্ট দেখে বিচলিত হৃদয় আমার

আমি যে মরুর বুকে কাঁটার ওপরে পড়া শিশির!

 

০০০

নাদান হো জো ক্যাহতে হো কিঁউ জিতে হো গালিব

মুঝ কো তো হ্যায় মরনে কি তামান্না কোই দিন অওর

 

কেন বেঁচে আছো গালিব—এই প্রশ্ন অবুঝের

আমার ভাগ্যে লেখা মৃত্যুর বাসনা নিয়ে আরো কিছু দিন বেঁচে থাকা  

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত