X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাদা কবির প্রস্থান কবিতা

মোজাফফর হোসেন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৯:৪১আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৯:৪১



অলঙ্করণ : আল নোমান ক.

নিশ্চিন্তপুর। মেহেরপুরের মৃতপ্রায় ভৈরব নদীর ওপর পেটে পেট, পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। বছর বছর নদীর খামখেয়ালি চলনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় গ্রামটির ভূগোল। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে, কচি হাতে আঁকা একটি নদী-গ্রাম। সাপের মতো মেরুদণ্ডহীন লিকলিকে দেহ নিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে, গ্রামটিও অতি উৎসাহের সাথে বাঁকে বাঁক মিলিয়ে খানিকটা পথ হেঁটে পিছুটান মেরেছে। অন্যদিকে নিরন্তর মাঠ। যতদূর চোখ যায় ধানী জমি, যেখানে আকাশ-মাটি এক হয়েছে বলে গ্রামের মানুষ মনে করে, সেখান থেকে ভিনদেশের শুরু। ওদিকটাতে গ্রামটা আরেকটু হাতপা ছড়াতে পারত, কিন্তু কেন জানি তার যত চাপ এই নদীটার দিকেই। ফলে ওদিকে আয়তনে না বেড়ে নদী যেখানে যেখানে কোমর বাঁকিয়েছে সেখানে সেখানেই নতুন করে বসতি হয়েছে। নদী একটু আড়মোড়া কেটেছে তো বেদখল হয়েছে তার শরীরের খানিকটা।
নদীর সঙ্গে উঠোন মিশিয়ে ভ্যাদা কবির ভিটে বাড়ি। কয়েকপুরুষ থেকে তাদের বাস এখানে। কাগজে কলমে সে একদাগে দু’বিঘা জমির মালিক। তবে কাঠা সাতেক নদীর চর দেখিয়ে দখল করে রেখেছে বিল্লাহ চেয়ারম্যান। বিল্লাহ চেয়ারম্যান নির্বাচিত চেয়ারম্যান না, তার সাতপুরুষে কেউ চেয়ারম্যান ছিল কিনা সন্দেহ। বছর দশেক আগে একবার চেয়ারম্যানের ইলেকশন করেছিল বিল্লাহ, ভোট যা পেয়েছিল তা মুখে বলবার না। সেই থেকে তার নামের শেষে চেয়ারম্যান শব্দটা কে বা কারা যেন লেপে দিয়েছে, সঙ্গে একটা বায়বীয় ক্ষমতাও। ভ্যাদা কবির অবশ্য জমি হারানো নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আশেপাশের তিনগাঁয়ে একজনই কবি, সে হল ভ্যাদা, তাকে জমিজমা নিয়ে ভাবলে চলবে কেন! তাছাড়া ছেলেপুলেও হয়নি যে উত্তরসূরি নিয়ে ভাবতে হবে। আছে একখান বৌ— মিছরি সুন্দরী। দেখতে উটের মতোন, গা-গতরে শ্রীয়ের ছিটেফোঁটাও নেই, নামের শেষে তবুও বাপ-মা জোর করে বিশেষণটা জুড়ে দিয়েছে। ভ্যাদা সেটি ছেঁটে ফেলার চেষ্টাটুকুও করেনি। বরং ‘মিছরি’ শব্দটা বাদ দিয়ে সে ‘সুন্দরী’ নামটিই ব্যবহৃত নাম হিসেবে গ্রহণ করেছে। আশেপাশের বাড়িগুলোতে এ নিয়ে হাসিঠাট্টাও কম হয়নি। ভ্যাদার ওসব নিয়ে ভাবলে চলে না। কবি সে, তার ভাবনা অন্যখানে। তাকে কাব্য নিয়ে থাকতে হয়, কাব্য নিয়ে ভাবতে হয়। নিশ্চিন্তপুরসহ সামনে পিছনের আরো দু’গাঁ দিয়ে ভ্যাদার আগে-পিছে কোনো কবি নেই। ছবির মতো গ্রাম এই নিশ্চিন্তপুর। নয়ন মেলে তাকালে পাগলেরও কাব্য করার কথা। তবুও কেন যে কোনো কবির জন্ম হল না এখানে, সেটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা চলে বটে। এজন্যেই এই অঞ্চলের জন্যে নিজের কবিজন্মকে ঐশ্বরিক দায়িত্ব বলে জ্ঞান করে ভ্যাদা। সে সংসারের সাতপাঁচে জড়িয়ে তার এই কবিজন্মকে অবহেলা করতে পারে না। নিয়ম করে সে কাব্যচর্চা করে। এটিকে সে তার ইহধর্ম বলেই মনে করে।

ভ্যাদার কাব্যচর্চা আর পাঁচটা কবির মতো না। সে কবিতা কাগজে-কলমে লেখে না। মনে মনে কবিতা বোনে, মনে মনে চাষ, ফসল মনে মনেই উজাড়। কদাচিত দু’একটি শব্দ বাইরে ফেলে সে। সেটি শোনার সৌভাগ্য খুব কম লোকেরই হয়। তার কবিতা কোনোদিন কারো শোনার বা পড়ার সুযোগ না হলেও, এই এলাকা ছাড়িয়ে মেহেরপুর শহরের সাহিত্যপ্রেমীরাও তার নাম জানে। মানেও। মাঝে মাঝে শহর থেকে সাহিত্যানুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্যে তার নামে ডাকও আসে। কিন্তু কাব্যচর্চাকে একান্ত ব্যক্তিগত জ্ঞান করে সবধরনের সামাজিকতাকে এড়িয়ে চলে কবি ভ্যাদা। সে নিয়ম করে মাসে দু-তিনটা দিন কাব্য নিয়ে বসে। একটা তেলচিটচিটে কেলে পাটি নিয়ে চলে যায় নদীর ধারে, কোনো কোনো দিন ধান ক্ষেতের মধ্যখানে, আসন পেতে বসে। কবিতা নিয়ে ধ্যান করে। বাড়ি ফিরলে বৌ বা ফেরার পথে কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, ‘আজ কি কাব্য বানালি শুনাও দেখি নি?’ ভ্যাদা সরলভাবে উত্তর করে, ‘সেকি, শুনাবু কেমুন করি, আজ তো আমি শব্দ দি’ কাব্য করিনি। আজ কাব্য করিচি গন্ধ দি।’ কোনো কোনোদিন বলে, ‘আজ কাব্য করিচি ফড়িং আর দুধধানের নেঙোর দি। যা রঙ হলু না, সে মুকে বুলি বুঝানু যাবে না! সূর্য্যর আলো ফুটার সাথে সাথে সব উবে গিচে। থাকলি না দেকাব!’ যেদিন নদীর ধারে বসে, সেদিন কেউ জিজ্ঞেস করলে উত্তর করে, ‘আজ কাব্যটা খুব জমিলো গো। কেন্ত সব তো জল দি নির্মাণ করিলাম, তাই ভেসি গিচে দখিনের হাওয়াই গা এলি দি। কিছু তো ধরি রাখতি পারি নি!’
শব্দ দিয়ে যে সে মোটেও কোনো কাব্য করে না, তা নয়। যেদিন তার কাব্যে শব্দ থাকে, সেদিন সে নিজেই রাস্তার লোকজন জড় করে বলে, ‘আসু, তুমাদের শুনায়।’ লোকজন যে কাব্য বোঝে বা কবিতায় আগ্রহ আছে তা নয়, তবুও দেখা গেল জনা বিশেক লোকের জমায়েত ঘটে গেল। তাদের মধ্যে শিক্ষিতরাও যেমন থাকতো, তেমন রাখাল কৃষাণরাও। সে হয়ত খানিক চুপ থেকে বলল, ‘ডুবসাগর, জগতজুড়ি কেবলই যে অচিন ডুবসাগর!...’ এরপর খানিক চুপ থেকে চলা শুরু করলো। লোকজন পথ আটকে বলল, ‘সারাবিকাল দি এইটুকুন?’ কেউ হয়ত একটু রাগীস্বরে বলে উঠল, ‘সবটা না শুনি যাবি নি ভ্যাদা!’ ভ্যাদা সরলভাবে বলে, ‘সবটা তো আমি শব্দ দি বুনিনি। এর সাথে কিছু কিছু বাতাস ছেল, আর ছেল পশ্চিমের আকাশে হটাত করি ফুঁটি উঠা সাতরঙাটা। কি করি ওসব শুনায় বোল্ তো?’

যেদিন জনতা জেদ করে বসে সেদিন সে আরেকটু বাড়িয়ে বলে, ‘কবিতা হলু রান্না করার মতোন। শুধু তরকারি সেদ্ধ করলি কি স্বাদ জমে? মসলা দিতি হয় না? কাব্যেরও তেমন মসলা লাগে। তরকারি যেমন দেখলি হয় না, চেকি বুঝতি হয়, তেমুন কাব্যও খালি শুনলি বা পড়লি হয় না, বোধ দি অনুভব করতি হয়। সেই বোধ আমি তুমাদের মাঝে কেমুন করি বিলাই, কও তো?’ এর বেশি কথা বলে না ভ্যাদা।
যেসব দিনে সে কাব্য করতে যায় না, সেসব দিনে সারাদিন সারারাত ঝিম মেরে বসে থাকে। আবার কখনো কখনো টানা দু’তিনদিন ঘুমিয়ে কাটায়। দেখা গেল তিনদিন ঘুমিয়ে আর তিনদিন জেগে-বসে কাটিয়ে হঠাৎ একদিন কেলে পাটিটা কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিল। সেদিন বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত কারো সাথে কোনো কথা নেই। বাড়িতে বৌ কিংবা পথে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে ইশারায় উত্তর করে অথবা না শোনার ভান করে আপন গতিতে হেঁটে চলে। বাড়ি ফেরার পথেও তার ভেতর থমথমে রেশটা রয়ে যায়।
ভ্যাদা কবির গ্রামে একটা অন্যরকম সম্মান ছিল। লোকজনের বিশ্বাস, প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করবার অলৌকিক শক্তি ছিল তার। যেদিন কাব্য করতে বসতো, সেদিন তার চারপাশের প্রকৃতি একেবারে বদলে যেত। দেখা যেত গ্রামজুড়ে কটকটে চাদি ফাঁটা রোদ, অথচ সে বসে স্নিগ্ধ ছায়াময় প্রকৃতির মাঝে। তাকে ঘিরে প্রকৃতির একটা আলাদা আয়োজন থাকতই। গাঁয়ের কৃষাণ বালকেরা নিজ চোখে দেখেছে বলে বাড়ি ফিরে গল্প করেছে, ভ্যাদা চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি ডেকে এনেছে। সে বৃষ্টির মাঝে বসে আছে অথচ তার শরীরে একফোঁটাও বৃষ্টি পড়েনি। কিংবা ভ্যাদার একেবারে মাথার ওপর নেমে এসেছে একখণ্ড মেঘ। কখনও কখনো কিছু অচেনা পাখি এসে ভ্যাদার পাশে বসে আছে, যেন আলাপ করছে। এমন অনেক রটনা আছে ভ্যাদার কাব্যকরা নিয়ে। এসব সত্যি কি মিথ্যা যাচাই করতে যায়নি কেউই।

খ.
একই গাঁয়ের ছেলে আমি, ভ্যাদার কথা শুনেছি কিংবা শুনিনি। গাঁয়ে থাকতে খেলাধূলা আর পাঠ্যবই নিয়েই থাকতাম। আমাদের বাড়ি ছিল ও পাড়ায়, নদী থেকে বেশটুকু দূরে। একবার নদীর ধারে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে সুতা কেটে গেলে আমাদের মধ্যে কে যেন বলেছিল, ‘ঐ দেখ ভ্যাদা কবির চালে গি পড়লু!’ আমি ঐ প্রথম বোধহয় ভ্যাদার কথা শুনি।
‘কবির বাড়ি?’ আমি ছোট্ট করে প্রশ্ন করেছিলাম। কেউ খেয়াল করেনি, আমিও না। কিভাবে যেন মুখ ফসকে বের হয়ে গিয়েছিল। আর একবার ভ্যাদার কথা শুনেছি, মা’র মুখে। ‘তোর মিনসে আর মানুষ হলু না! ভ্যাদাকে বুলিস ওসব কাব্যকরা ছেড়ি সংসারে মন দিতি। আমি তোর ভাইকে বুলি একটা জমির ব্যবস্থা করি দেবো।’-বুঝেছিলাম, মহিলা ভ্যাদার বৌ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তে গিয়ে আমিও কবিতায় মন বসালাম। বন্ধুদের নিয়ে নিজেরা একটা ম্যাগ প্রকাশ করার উদযোগ নিলাম। লেখা সংগ্রহ করতে করতে আমার হঠাৎই একদিন ভ্যাদা কবির কথা মনে হল। কয়েকদিনের ছুটি পেয়ে বাড়ি গিয়ে এক বিকেলে ভ্যাদা কবির উঠোনে দাঁড়ালাম। ভ্যাদার বউ আমাকে বসার জন্য একটা ভাঙা চেয়ার পেতে দিলো। বলল সাবধানে বসতে, পিছনের পায়াটা নড়া। ভ্যাদার বউ বেশ শুকিয়ে গেছে। বয়সের ভারে চুলে পাক ধরেছে। আমার সেই আগের দেখা মানুষটির সঙ্গে এই মানুষটির কোনো মিলই নেই। ভ্যাদা কবি ঘর থেকে বের হয়ে এলো। একটা ফুটো ফুটো স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে থাকা ভ্যাদা আমার সামনের চটটা মেলে নিয়ে বসলো। আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না।
‘তুমার মা ভালো আছে?’ ভ্যাদার বৌ উঠোনের চুলাটা গোবর দিয়ে লেপতে লেপতে জিজ্ঞেস করলো।
‘কে ওর মা?’ ভ্যাদা চাচা আস্তে করে বলল।
‘নছিরন বুবু।’
‘ও, মিয়া বাড়ির ছেলি তুমি!’ বলল ভ্যাদা।
আপনি একটা কবিতা শোনাবেন? শুনেছি আপনি ভালো কবিতা লেখেন। আমার কথা শুনে তার মুখে একটা হাসি ঝিলিক দিয়ে আবার নিভে গেল।
‘ও তো আর কাব্য করে না, বাবু। কাব্যকরা ছেড়ি দিচে।’ ভ্যাদার বৌ উত্তর করে।
কেন? কবিতা লেখা ছেড়ে দিলো কেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ভ্যাদার বৌ কোনো উত্তর করলো না। ভ্যাদাও চুপচাপ। ঠিক আছে আমাকে একটা আগের কবিতা দিলেও চলবে। আমি একটা ম্যাগাজিন করছি, চাচার কবিতা প্রকাশ করতে চাই। আর একসময় এসে নিয়ে যাবো— বলেই উঠে পড়লাম। ওরা কেউ কোনো কথা বললো না। ভাবলাম, গাঁয়ের মানুষ হয়ত জানবে। এতদিন ধরে কবিতা নিয়ে পড়ে থাকা মানুষটা কেন কাব্যকরা বন্ধ করে দিলো, তার একটা যুৎসই উত্তর সবার জানা উচিত। দিন কতক গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়, আড্ডায় আড্ডায় ঘুরে ভ্যাদা কবির কথা জানতে চাইলাম। আশ্চর্য হলাম, তার সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না দেখে। একদল তো বলেই ফেললো, ‘ও একুনুও বেঁচি আছে নাকি!’ আবার কেউ কেউ পাল্টা প্রশ্ন করলো— ‘কুন ভ্যাদা?’ যেন সে কোনোদিনই এই গাঁয়ে ছিল না।
আশপাশের দশ গাঁয়ের এক কবি, ভ্যাদা-কবি, বেঁচে থেকেও এমন আড়াল হয় কি করে? মাকে বলেছিলাম— মা তুমি কিছু জানো? ভ্যাদা চাচার বউ না তোমার কাছে আসতো?
‘ভ্যাদা চলি যাওয়ার পর ওর বৌ একদিন এসিলো। সেও বছর পাঁচেক আগে। হাউমাউ করি কান্নাকাটি করি চলি গিচে। মাঝে মদ্যি মনে হলি আমি একেউকে দি চাল-ডাল পাঠাই। আমি দেখতি যাবো, আমার কি আর সেই জো আছে!’ মা বললেন।
ভ্যাদা চলে গেলে, মানে? কোথায় গিয়েছিল সে?
‘তা আর কেউ জানতি পারলু কই? সেই যে দিন দপরে নদীর ধারে কাব্য করতি করতি নিরুদ্দেশ হলু, আর তো ফিরলু না। মাঠে ঘাটে একুনু দেখা যায় বুলি রব ওঠে। কেন্তু বাড়ি তো ফেরে না!’
ভ্যাদা চাচা যে বাড়ি ফিরে এসেছে, আমি যে ওকে বাড়িতে দেখে এসেছি— সেকথা আর পাড়লাম না। পরদিন ভোরে উঠেই ভ্যাদা কবির উঠোনে আমি হাজির। তার বৌ উঠোনের কোণে কটা শুকনো কুলের ডালের ওপর পুঁইশাকের ডগা উঠেছে, সেগুলো ঠিক করে দিচ্ছিলো।
বলল, ‘বসো’। একবার বলল, ‘বসেন’। চেয়ারটা সেভাবে সেখানেই আছে। আমি সাবধানে বসলাম।
চাচার কাছে এসেছিলাম— আমি বললাম। সে কোনো কথা বলল না।
‘কটা মুড়ি তুলা আছে। দেবো?’ খানিক বাদে বলল সে।
আমি এত ভোরে কিছু খাই না। কাল চলে যাবো, তাই কবিতাটা নিতে আসলাম। আমি জবাব দিলাম।
‘বুউন ভালো আছে?’ জানতে চাইলো সে।
হুম। আছে। কাল আপনার কথা বলছিল। আপনি আর যান না, আপনি গেলে মা ভীষণ খুশি হবে।
‘তুমার চাচা থাকতি মেলা গিচি। একুন আর সুময় পাইনি। একা একাই সব করতি হয়।’
চাচা নেই মানে? আমি না কয়দিন আগেই আপনার সামনে বসে থাকতে দেখে গেলাম? আমরা দুজনে কথাও বললাম!
‘আমি তো সবসুময় দেকি তাকে। দুজনে সারাদিন মেলা কথা বুলি। মাঝমদ্যি আমার সাথে খাইও।’
কিন্তু নেই বললেন যে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
‘একদিন তো চলি গেল। না বুলি চলি গেল। ঘুমের ঘোরে বুলতুক, যাবে। কুতায় যেনে কি আছে, বুঝা যাতুক না। শুধু যাবে, এটা বুঝা যাতুক।’
সেদিন আমি স্পষ্ট করে দেখলাম। আমার পায়ের কাছে ছেঁড়া চটে বসেছিল। পরনে ছেঁড়া স্যান্ডো আর লুঙ্গি। তার গায়ের গন্ধও আমি পেয়েছি। এটা মিথ্যে হতে পারে না। চাচা যদি গিয়েও থাকে, নিশ্চয় ফিরে এসেছে।
সে আর কথা না বলে পাঁতি-হাঁসদুটোকে মাটি দিয়ে বানানো খাঁচা থেকে বের করে নদীর দিকে ছেড়ে দিয়ে বলে— ‘যাহ্, দপরের আগ দি চলি আসিস। বিয়িনে আবার একবার যাস। আমি নিজেই দি আসবু তোদের।’
ভ্যাদা কবির বউকে আমার স্বাভাবিক বলে মনে হল না। আমি যখন আসলাম তখন বিড়বিড় করে পুঁইগাছের সঙ্গে কথা বলছিল। ‘ঠিক মতো আকড়ি ধরি থাকিস। বড় হচ্ছিস, আর কত জ্বালাবি!’ তখন আমলে তুলিনি। আমার গা ছমছম করে উঠলো। মনে হল যেন ভ্যাদা কবি আমার পাশেই বসে আছেন। মনে হল যেন, ভ্যাদা কেবলই একটা ক্ষয়ে যাওয়া নাম। নামটি থেকে আমি কেমন মৃত মৃত গন্ধ পাচ্ছিলাম। উঠে আসার আগে একবার চেয়ারটা ভালো করে ঝাঁকি দিলাম। একটি পায়া টুপ করে খুলে পড়ে গেল।

ঘ.
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে আমার টুকে রাখা নোট:
ক. মিছরি সুন্দরী ভ্যাদার সংসারকর্ম ছেড়ে কাব্যকরা নিয়ে খুশী ছিল না হয়ত, কিন্তু আজ সে নিজেই তার কবিতা হয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছে।
খ. ভ্যাদা কবি খুব সম্ভবত নিজের প্রস্থান নিয়ে রচনা করে গেছেন তার সবচেয়ে মহান কবিতাটি।


 

অলঙ্করণ : আল নোমান

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা