X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অরুণ সেনের কবিতা

.
২৭ মার্চ ২০১৬, ১০:৪০আপডেট : ২৭ মার্চ ২০১৬, ১১:২৫

অরুণ সেন কবি অরুণ সেন গত ২৬ মার্চ শনিবার ৫৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার ধলঘাট গ্রামে ১৯৫৮ সালের ৩০ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। বসবাস করতেন চট্টগ্রামেই। তিনি ‘ঋতপত্র’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। চট্টগ্রামের এই প্রিয়মুখ কবি অরুণ সেনের গ্রন্থসমূহ হচ্ছে- শঙ্কায় নিনাদে শঙ্খ, বাইরে রেখে পা, শেষ বিকেলের কড়ানাড়া, রুদ্র গেছে রোদের বাড়ি, বুকে তার মুকুন্দরামের হাট, কে মানুষ পলাতক বুকে কাঁদে, ভাল আছ সোনালু ফুল, অনেক ভুলের প্রতিবেশী, অথচ নীরবতা, ছড়ায় ছড়ায় কথার নাচন।

তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একগুচ্ছ কবিতা পুনঃপ্রকাশ করা হলো। 

 

 

কী আশ্চর্য

কী আশ্চর্য, কী আশ্চর্য দ্যাখো–
কী যে ব্যস্ত, ছদ্মবেশ তৈরিতে অসংখ্য দর্জি!
হাওয়া বলছে, বলুক না, কুম্ভীরাশ্রুর প্লাবণে ভেসে যাচ্ছে দেশ
তাই বলে, এভাবে কী, রাজনীতির ঘাড়ের উপর উঠে বসবে অন্ধকার!
আর অমা হবে আততায়ী সাধারণ মানুষের!

ওই ভদ্রমহিলা তো ঢাকা যাচ্ছিলেন
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছেলেকে দেখার জন্য
যে ছেলে ওনার সাজানো স্বপ্নকে মাটিতে নামাবে
উনি একটি একটি করে ছুঁয়ে দেখবেন স্বপ্নের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে
বহুদিন পর মনের ভেতর লুকানো জ্যোৎস্নায়
ছেলেকে সিনান করাবেন।
অথচ হঠাৎ সব লণ্ডভণ্ড করে দেয় পেট্রোলের বোমা
পথ বাধ্য হয় বিপথের আচরণে

হাসপাতালে বার্ন-ইউনিটে মমতার শেকল বাঁধা ছেলেকে
দেখছিলেন আর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মা
এ-কান্না ঘৃণায় নাকি জল্লাদের কান পর্যন্ত স্পর্শ করেনি
ভদ্র মহিলা যখন কাতরানোর যন্ত্রটিকে ফুটো করে বেরিয়ে গেলেন
মমতার কারাগার থেকে
এদিকে তখন হাসপাতালে নিস্তব্ধতা ফোঁপাচ্ছিল
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা-কামনায়

 

 

লুকিয়ে থাকা চিন্তা : অথ কিম্

জানি আমার প্রতিপদের বিপদলেখা

লুকিয়ে থাকা চিন্তাটির দেহে
তোমার চোখ রাঙানো তার চেয়ে অনেক ভালো
না, না, তোমার বাঁচিয়ে রাখা
ওদের মেরে ফেলার চেয়ে অনেক গুণ ভালো
এই যেমন খুলে বলার চেয়ে
মুখ বন্ধ রাখা অনেক ভালো
খোলা থাকলে সত্য ভুল করে
বেরিয়ে আসে আলোয় আর বাতাসে তার
খুশি উড়িয়ে অসত্যের বিরক্তিতে দেয় অবাধে খোঁচা

হাওয়ার জিভ পাল্টানোর কথা সবাই জানে
তোমার কথা যেমন আমি জানি
অপরিচিত মৃত্যু ভিড় করে দেখায় ভয়

কষ্টকর শ্বাস এখনো নিচ্ছে দেখি আমার মত
অপরিচিত মৃত্যু দেখা আরো অনেকে।

 

 

নিষ্পাপ সৌন্দর্য

একি মরণও কুড়োতে জানে এই ক্ষুধার্ত আতঙ্ক
ওটা খেয়েই তো দেখি দ্রুত হয়ে উঠছে স্বাস্থ্যবান
মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধে লিপ্ত কথার বেনিয়া
কুয়াশার হাড়ে শুনছি ভয়ার্ত সত্যের ধুকপুকুনি

অচেনা, নির্লজ্জ পথ, মুখে বারুদের গন্ধ, চোখে–
রাগ, ইশারায় মৃত্যুকে দেখিয়ে বলে, দেখেছিস–
বায়ে শোভন বিদ্বেষ আর ডানে অগ্নির কলঙ্ক
যাবার জো নেই, আয়, বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে ফেলি তোকে!

বলি, আগেই তো ঝড়ে আছি, শুকনো পাতাই এখন
যেখানে উড়িয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে, সেখানেই থাকা
বিবেচনা নিয়ত মাড়িয়ে যায়, অত্যাচার, ত্রাস
মনুষত্ব ছাড়া হারাবার আছে শুধু নাভিশ্বাস

বাতাসের হাত থেকে নিস্কৃতি না-পাওয়া হতচ্ছাড়া
মুগ্ধ হয়ে দেখি তবু কষ্টটার নিষ্পাপ সৌন্দর্য

 

 

থুৎকার

এরকম সিনা ফুলিয়ে সবার সামনে
দাঁড়িয়ে আছিস, কে রে তুই?
‘হো হো হো হো হো হো, চিনিস না শালা, আমি অপমৃত্যু
কীরকম ভূত হয়ে তোদের খতম করছি দ্যাখ।’
–ওরে বাবা, এবার পালাই
‘পালিয়ে কোথায় যাবি? কিভাবে বা যাবি?’
–কেন পায়ে, দৌড়ে
‘বোকা কোথাকার, তোর কাছে থাকা এ-পা তোর, ও-পা যে আমার।
পায়ে পায়ে দেখবি সন্দেহের জাল, পিছু নিতে হবে না আমাকে।
নিজের জালেই শালা ঠিক আটকে যাবি।’
–আমি তো দৌড়াচ্ছি, এগোচ্ছি না কেন?
‘ডরের উন্মাদ আচরণ তোকে এগোতে দিচ্ছে না।
তোরা বিশ্বাস তাড়িয়েছিস। কে আর বিশ্বাস করবে কাকে?
কেন করবে? শোভন হিংসুক হিংসা থেকে প্রতিহিংসা
ব্রাত্য বলে প্রচারে নামায় চারিদিকে হিংসার দাপট।
আমি তার পরাকাষ্ঠা’
–এ আমি কী দেখছি, এতো দেখি
হিসেবের রোগা দেহে স্বচ্ছতার প্রকৃষ্ট থুৎকার!

 

 

অদ্ভুত খেয়াল

সময়টা ক্রমশ পিপাসিত হচ্ছে আর
তাকাচ্ছে কখন অসময়ের গিঁট খুলে বেরোয় সেই প্রত্যাশিত ভোর।
যে ভোরে তৃপ্তির বৃষ্টিতে পিয়াস ভিজে ঘোষণা দেবে ফুর্তির আমল।
দখিনের বাতাস প্রশ্ন করে চুপি চুপি
অজানা বিপদের কূট যন্ত্রণায় কত আর খোয়াতে হবে
অমূল্য সময় আর নিরীহদের মহার্ঘ জীবন?

শূন্য বুক থেকে কে নামাবে শোকের নিষ্ঠুর পাথর?
পারবে কি কখনো নিভে যাওয়া প্রদীপ চোখ মেলে তাকাতে আর?

হায়রে নির্মম খেয়ালের লোলুপ ধার
পারবি কি ফেরাতে নিরপরাধ বলি এত
মা-বাবার স্নেহের অমূল্য রতন?

কীভাবে কোত্থেকে আজ
অসম্ভবের-এ-সাগরে উত্তাল ঢেউ
তীরে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় নিরীহজন
দৃষ্টিকে সঁপেছে অজানা শঙ্কায়

শেকড়হীন শুধু কথার সুন্দর ওই মৃত অলংকার
ক্ষত ধোয়ার মিছেমিছি করে নিমন্ত্রণ

সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!