X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় দশ

বিপাশা মন্ডল
২৮ মার্চ ২০২৪, ১৮:১৬আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:০০

কিছু মোম

সূপর্ণার রান্নাঘরে কিছু মোম রেখেছিলাম
মোম কর্পূর নয় যে উবে যাবে
বহু বছর পুরোনো হলে একটু হলুদ হয়ে যায় কেবল
যদি কোনো বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায়
সূপর্ণার অতিথি আসে
টেবিলে গরম স্যুপ, ধোঁয়া ওঠা পোলাও
নরম থকথকে সবজি
আর মোম থাকবে না
                  সে কি হয়?
এতসব ভেবেই বহুদিন আগে
সূপর্ণার রান্নাঘরের তাকে কিছু মোম রেখেছিলাম।


তোমার জন্য কয়েকদিন ধরে একটি টি-শার্ট

তোমার জন্য একটা টি-শার্ট কিনব বলে আজ সারাদিন মার্কেটে দোকানে
সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ঘেমে নেয়ে এলাম, শার্ট পছন্দ তো হাতা
পছন্দ না। সব ঠিক আছে তো বোতাম বিদঘুটে রঙের। পুরোদস্তুর মিলে
গেলেও সাইজে হচ্ছে না। এই একটি টি-শার্টের জন্য আমার সদ্যকেনা
জুতো খুলে গেল। হঠাৎ বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হয়ে রেস্টুরেন্টে খসে
গেল আড়াইশো টাকা, এমন আকালের দিনে। কলেজের বিভাগীয়
সিনিয়র বললেন, “ভীষণ অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছ বিপাশা, এখনো
তোমার ডেস্কে মিডটার্ম খাতা ডাঁই করা কেনো?” আমি তাকে কী করে
বোঝাই আমার মন এখন টি-শার্ট টি-শার্ট তোমার জন্য। ইচ্ছে হয়
নীলাকাশ কেটে-ছিঁড়ে সেলাই করে একটা নতুন করে বানাই অথবা মেঘ
থেকে খানিকটা ছাই রঙা কাপড়। জোনাকিরা ঝিকমিক করে ওঠে
তক্ষুনি ভাবি বোতামগুলো সব সোনার কিনে দেব। কিন্তু কিছুতেই কিছু
পছন্দ হয় না। এদিকে পথ খরচেই বাজেট ফুরিয়ে এল প্রায়। চোখের
নিচে কালি পড়ে গেছে, কণ্ঠার হাড় জেগে গেছে, চুল উস্কোখুস্কো
এলোমেলো, মাথার ভেতর সুতোবাঁধা ফড়িং একটানা গেয়ে চলে
টি-শার্ট টি-শার্ট! হতাশ হয়ে খবরের কাগজে চোখ মেলে দেখি কারুজে
বিজয় দিবস কালেকশন সবুজে লাল অদ্ভুত কম্বিনেশন ভারী সুন্দর
ভীষণ। জুনিয়রের ঘাড়ে ক্লাস ফেলে আমি ছুটলাম, হরেক রকম খাদি
সুতি সিল্ক সব নিলাম সব। তুমি দেখে বললে, “এতো অনেক পুরোনো
ডিজাইন, বাংলাদেশ পড়েছে ছত্রিশ বছর আগে।” আমি স্বপ্নালু চোখে
মনে মনে বলে যাচ্ছি, “তুমি বোঝো না কেনো গো? তুমি আমার পুরো
বাংলাদেশ অথবা বাংলার মাটির গন্ধে তোমার সুবাস।”   


বৃষ্টির প্রতি চন্দন পেরেক

তুমি বার বার দুচোখের গভীরে গড়িয়ে পড়ছো ঘুমে... আর ঘুমের
কাদায় মাখামাখি হয়ে যাচ্ছো ঢেউ খেলছো বুরবুরি কাটছ আঁকাবাঁকা
ঝিনুক চলা দাগ ফেলছো তন্দ্রার জমিনে, তোমার শঙ্খ গলার ঝাঁ
চকচকে নীল শিরা ফোটা চামড়া তির তির কাঁপছে... কীভাবে
চোখ বুজে ঢোক গিললে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি হাওয়াটুকু গলা বেয়ে
বুকছুঁয়ে পাকস্থলীতে জমা হল মাথার ওপর ঝকঝক করে উঠলো
টিউবের নগ্ন আলো, আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম আমরা সবাই
সবার ভেতর বাহির একসঙ্গে দেখতে পাচ্ছি... সবাই সবাইকে
মিথ্যে চুমু খাচ্ছি আর প্রয়োজনমতো স্বার্থের পিঠ চুলকে আরাম
নিচ্ছি... তুমি তখনও মেঘের সাদা ক্যানভাসের ফাঁকগলে উপচে
পড়া নীলে পাতার ডগায় সবুজ সিম্ফনি তুলছো আর বৃষ্টির প্রতি
চন্দন পেরেক বেবুঝ যন্ত্রণার মতো আমার সারা শরীরে বিঁধে
যাচ্ছে... আমি যিশুর মতো রক্তাক্ত হয়ে বন্ধ দরজার সামনেই
দাঁড়িয়ে আছি দাঁড়িয়েই আছি


প্রেম সম্পর্কিত বয়ান

আমার প্রেমিকা খুলে ফেলেছিল আমার বুকের কপাট
আমি বিস্ময়াহত বেদনা নিয়ে বলেছিলাম, ‘এ কী করলে
যা কিছু গোপন তাই সৌন্দর্য তাই আরাধ্য...
এক্ষুনি এক লক্ষ প্রজাপতি কোটি কোটি জলকণা
জেনে যাবে আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি
ভালোবাসাবাসি সবাই জেনে গেলে
তা তো দাম্পত্য... কোথায় সেখানে
গরল মধুর প্রেম?’
সে শুধু মৃদু হেসেছিল আর পাঁজরের হাড়
খুলে খুলে মজ্জা বের করছিল, প্রতি পেশিতে
ভেসে ওঠা রক্তের বুদ্বুদ রক্তরস
একজন পোস্টমর্টেম ডাক্তারের মতো নির্বিকার
দেখছিল—
আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না এভাবে প্রেম
খুঁজে পাওয়া যায় কিনা?
হঠাৎ সে বুকে কান পেতে
থামিয়ে দিয়েছিল হাওয়ার গতি
আমি অস্ফুটে বলেছিলাম, ‘আবার কী হয়েছে?’
সে বলেছিলো, ‘আমি শুনতে চাইছিলাম
তোমার প্রতি হৃৎস্পন্দন আমার কথা বলে কিনা?’


স্বপ্নদৌড়

দূর থেকে গাছগুলোকে যতই ঘেঁষাঘেঁষি
কাছাকাছি বলে মনে হোক
প্রতিটি নীচু থেকে উঁচু গাছ
এক একটা সবুজ ধাপ স্বর্গের সিঁড়ির
কাছে গেলে দেখতে পাবে
তাদের মধ্যে বিস্তর ফাঁকা রয়েছে
রয়েছে বেশ কিছু খিলানবিহীন শূন্যতার সেতু
স্বপ্নে দৌড়ানোর মতো আপ্রাণ চেষ্টায়ও
তুমি অল্পই
একধাপ থেকে অন্যধাপে পৌঁছবে—
মায়া লাগিয়ে নিচ্ছো চোখের পাতায় ঠোঁটের কোয়ায়
ঝরাচ্ছো মমতার বৃষ্টিপাত?
চোখ ঠোঁট আঙুল থেকে
কিন্তু আশ্চর্য মাটিতে পৌঁছুবার আগেই
উড়ে যাচ্ছে শিমুল তুলো জোনাক ফোটা আঁধারে
জোছনার ফুলের ছাপ
নিষ্ফল লেপ্টে আছে মাটির বুকে
তবুও জন্মকাল থেকে ক্রমাগত দৌড়াচ্ছো ছুঁতে আকাশ।


জেল-হাসপাতালে মানসিক রোগী

অনেক কিছুই আমার আছে
আবার অনেক কিছু নাইও
আমার হাত আছে পা আছে চোখ আছে
তোমারও আছে
আমার মন আছে হৃদয় আছে
ধুকপুকুনি ভালোবাসাও আছে
তাহলে তোমারটা দখলে কেন দিনরাত
এ অস্থির পোড়ানি

তবে কি রক্তের নোনা স্বাদ ঘামের কটু গন্ধ
যা কিছু আমার নেই তার নগ্ন দখলদারিত্ব
কিচ্ছু বুঝতে পারি না
শুধু বুঝি চাই
কী যে চাই
নিজেও জানি না
অন্তত একশ লোক জানতে চেয়েছে
(যার মধ্যে তুমিও আছো)
কী চাও তুমি?
সংসার যৌনতা প্রতিষ্ঠা অর্থ
নিজেকে দাঁড় করাই তুলাদণ্ডে
অদ্ভুতভাবে ঝুলে থাকে আমার দিকেই পাল্লাটা
সংসার অর্থ যৌনতা প্রতিষ্ঠার বাটখারাগুলি
শিমুল তুলোর মতো উড়ে যায় চৈত্রের বাতাসে
আমি জুড়ে শ্মশানের নীরবতা
ছাতিম ফুলের মাদক গন্ধ
বুকের খোঁড়লে নড়েচড়ে ওঠে হাওয়া
নিশ্বাস ফেলে উঠে বসি সকালের তক্তপোষে
এই শ্বাস-প্রশ্বাসগুলো আমার নয়
সবগুলো ধার করা দেহের খোলসে
সকল পাওনাদার যেকোনো সময় নিয়ে নেবে
বাকি সবগুলো নিশ্বাস
যেগুলো নির্দ্ধিধায় পুড়ে পুড়ে আয়ু দীর্ঘ করছি
এতসব দেনা-পাওনার ভিড়ে
আমি আসলে কী চাই তোমার থেকে
সে ব্যাপারটা অমীমাংসিত থেকে যায়
শুধু—
গত বছরের ক্যালেন্ডারের গর্ভে ঝকঝকে
পুরোটা সুগন্ধি বছর
তুলির আঁচড় গিটারের টোন
একটা পঙক্তি লিখে বাকি শব্দগুলোর জন্য
তোমার অবয়বহীন ধু-ধু ধু-ধু মুখের দিকের তাকিয়ে থাকি
জেল-হাসপাতালের মানসিক রোগী


প্রতি পথ এক আশ্চর্য জিগজাগ লেন

কখনো পিছু ফিরো না
ধেয়ে আসা সূর্যালোক, পুড়ে দেবে চোখ
পথের মাড়িয়ে আসা প্রতি ধূলিকণা
তোমার দিকে স্থির অভিযোগের আঙুল তুলে চেয়ে আছে

মৌ পোকাটার কথা ভেবেছো?
তোমার শরীরের মৃত কোষ
ধুলোয় আচ্ছন্ন করেছিল ফুলের কেশর

পিছন ফিরে তাকালে আর খুঁজে পাবেনা নিজেকে
প্রতি পথরেখা এক হয়ে এক আশ্চর্য জিগজাগ লেন
বসিয়ে দেবে চোখের সামনে
এ গলি ও গলি সে গলিতে হারিয়ে যেতে যেতে
ভয়ংকর ভাবে ফিরে আসবে পুরোনো রাস্তায়
নিজেকে খুঁজে খুঁজে নিজেই হারিয়ে যাবে, শেষে


অনিমন্ত্রিত বান্ধব রোদ

কোনো নিমন্ত্রণ ছাড়াই
আজ দুপুরে আমাদের উঠোনে ভিড় করেছিল
বেশ কিছু উজ্জ্বল রোদ
সবিনয় অভিবাদনে তাদের বলেছিলাম
“আমার প্রেমিকের কাছে পৌঁছে দিন
আমার অসহায়ত্ব সীমাহীন বেদনা।”

রোদেরা কথা রেখেছিল

বনের গভীরে সেই জানালাহীন ঘরে
ছায়া টেনে নিয়ে আজ সন্ধ্যায়
ছড়িয়ে এসেছে কিছু নিবিড় বিষাদ।


ক্যানভাস জুড়ে

ধরো তোমার চোখের পেছনে লুকিয়ে আছে,
এক ছুটে যাওয়া হরিণের গল্প
আমি হরিণটিকে দেখছি না, দেখছি না তার ছুটন্ত খুরও
মুগ্ধতার জললিপি নদীর মতোই প্রবহমান
দ্রুত বদলে যায় ক্রোধ, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতায়
আমি সজল চোখ বা প্রেমমগ্ন দৃষ্টিচ্ছটাকে আঁকছি না
ক্যানভাস জুড়ে ফুটে উঠছে,
হাওয়ার ঘূর্ণি, বৃন্তচ্যুত হলুদের এলোমেলো রাশি
চৈত্রের ঝরা পাতা।


ভাড়াটের স্বপ্ন

তোমার বাবা বাসে ওঠার আগে পথে দাঁড়িয়ে
কেনে কিছু কমলালেবু একথোকা আঙুর
খেলনা ঝুমঝুমি ছোটো ছোটো শীত পোশাক
আর কেনে প্রবল ইচ্ছে
একখণ্ড উঠোনে হাত ছড়িয়ে খেলছো হামাগুড়ি দিচ্ছো
এ সব ইচ্ছে ভাঁজ করে রাখে বুকের মধ্যে
এভাবে বহু শীতের রাতে
খালি কোকের ক্যানে গভীর রাতে লাথি মেরে
ঠন্ন শব্দ তুলে দরজার সামনে দাঁড়ায়
কড়া নাড়ে

তোমার বাবা এখনো বাসে ওঠার আগে
ফুটপাতে ফল কেনে
এরই মধ্যে তুমি নয়শ স্কোয়ারের চারদেয়ালে
হাতপা গুঁজে দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে
পার হয়েছো স্কুল কলেজের চৌকাঠ
সিভি হাতে দৌড়াচ্ছো শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত
এখনো তোমার বাবা শীত পোশাক কেনে
ছোটো ছোটো
তোমার ছেলেমেয়ের জন্য
বুকের ভেতর ভাঁজ করে রাখা উঠোনটাতে
সঙ্গোপনে হাত দেয়
আড় চোখে তোমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাসগুলো গিলে ফেলে

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, দম্পতি নিহত
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, দম্পতি নিহত
নিউইয়র্কে সাকিবের ব্যবহারে মুগ্ধ বাংলাদেশের সাবেক গোলকিপার 
নিউইয়র্কে সাকিবের ব্যবহারে মুগ্ধ বাংলাদেশের সাবেক গোলকিপার 
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
তাইওয়ানের কাছাকাছি আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
তাইওয়ানের কাছাকাছি আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!