X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

বুকারজয়ী উপন্যাস প্রসঙ্গে

অনুবাদ : হেমায়েত উল্লাহ ইমন
১৮ অক্টোবর ২০২২, ১৭:৩৮আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ১৭:৩৮

গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস ‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেইদা’র জন্য এবছর বুকার পুরস্কার পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার লেখক শেহান করুণাতিলকা। ইংরেজিতে এই বইটির রিভিউ লিখেছেন এম. এ. অরথোফার।  


‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেইদা’ উপন্যাসের শুরু হয় মালির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। মাত্রই মারা যাওয়া মালি নিজেকে আবিষ্কার করেন ইহজগৎ ও পরলোকের মাঝামাঝি একটি ক্ষণস্থায়ী সময়ে। যেখানে তিনি ৭ দিন সময় পান তার অতীত সম্পর্কে বিস্তারিত জানার। এই ৭ দিন সময় অতিবাহিত হলে অতীতের সব স্মৃতি মুছে তিনি পৌঁছে যান ‘দ্য লাইট’ অর্থাৎ অন্তিম পরিণতিতে। তাই তিনি ঠিক করেন এই ৭ দিনে তিনি কীভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তা তদন্ত করবেন।

দ্বিতীয় ব্যক্তির বয়ানে রচিত ‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেইদা’ পাঠককে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সময়ে সপ্তাহব্যাপী মালির দুঃসাহসিক অভিযানে তার সঙ্গী বানিয়ে নেন। আশির দশকের শেষদিকে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসী হামলা এবং আত্মঘাতী বিস্ফোরণের মতো ভয়াবহতায় জর্জরিত ছিল শ্রীলঙ্কা। এই গৃহযুদ্ধের অরাজকতায় সব পক্ষই সমান দোষী। মালি একজন দক্ষ আলোকচিত্রী হওয়ায় গৃহযুদ্ধের এই ভয়াবহ দৃশ্যগুলো ক্যামেরায় বেশ দক্ষতার সাথে ধারণ করেছিলেন। যুদ্ধে কোন পক্ষ ইতিবাচক, কোন পক্ষ নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে তারই সংক্ষিপ্তসার হিসেবে তিনি ‘ধ্বংসস্তুপের দৃশ্য, পোড়া বাড়ি এবং  মৃত শিশু’-দের ছবি তুলেছিলেন। এতে তিনি যেমন দক্ষ ছিলেন তেমনি ছিলেন আন্তরিকও।

উপন্যাসের বয়ানে মালির এই দুঃসাহসিক কাজের উল্লেখ্য পাওয়া যায়, ‘অন্য কোনো আলোকচিত্রী দুইটির বেশি গণহত্যার ছবি তুলতে পারেননি। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় অনেকেই কাজ করতে চাইত না, তার উপর কম পারিশ্রমিকের প্রতিও তাদের বিরূপ মনোভাব ছিল। কিন্তু তুমি তা আঁকড়ে ধরেছিলে।’ 

মালি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এসব ঝুঁকিপূর্ণ আলোকচিত্র তোলার জন্য বা জুয়া খেলার জন্য তার নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেননি বরং তিনি একজন সমকামী হওয়ার পাশাপাশি সক্রিয় যৌনতায় লিপ্ত ছিলেন। যা ঐ সমাজে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মালি সবদিক বিবেচনায় সবসময় প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন-যাপন করতো।

‘তোমার দক্ষতার ন্যায্য মূল্যায়ন করলে বিষয়টা এমন দাঁড়াবে যে, তুমি জুয়ায় D-, ফিক্সিংয়ে C+, স্ক্রুইংয়ে B-, আলোকচিত্রে A+ পাবে।’ -কথক

শেহান করুণাতিলকা মালির বিছানার নিচে পাঁচটি আলোকচিত্রসহ একটি বাক্স ছিল। তার মতে “এই আলোকচিত্রগুলো সরকার পতন ঘটাতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, ‘এগুলো প্রকাশিত হলে, এই দেশ আবার জ্বলবে।’ তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ১৯৮৩ সালে গণহত্যায় অংশগ্রহণকারীদের সনাক্ত করতে এবং এদের বিচারের আওতায় আনতে এই ছবিগুলো সাহায্য করতে পারে৷”

করুণাতিলকা জগতের বিভাজনে মালিকে পুঁজি করে হাস্যরসের সাথে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের প্রকৃত গল্প বুনেছেন। মধ্যবর্তী এই জগতে বসে মালির বর্তমানকে ক্রমাগত হুমকিস্বরূপ করে তোলার পাশাপাশি তার ভয়ানক অতীত যা মূলত বাস্তব জগতের ভয়াবহ ঘটনাগুলো, তাকেও তিনি প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছেন।
বর্তমানের মালির সত্তার সাথে, অতীতে রেখে আসা মালির সময়ের অনূভুতি এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার জায়গাগুলো বেশ ভালোভাবে তিনি উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসে শ্রীলঙ্কার একটি চরিত্র যেমন বলছে : ‘এই ভূমি অভিশপ্ত, এর থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।’ আবার তার বয়ানে স্পষ্ট উচ্চারণ এমন, ‘এই দেশের কিছুই অরাজনৈতিক নয়।’ উপন্যাসে করুণাতিলাকা জাতির এবং তার সাম্প্রতিক ইতিহাসের একটি অন্ধকার, প্রাণবন্ত প্রতিকৃতি উপস্থাপন করেছেন।

পুরো উপন্যাসজুড়ে মালি জীবিতদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। তার বন্ধু এবং পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের আশা করেন যাতে তারা বাক্সটি খুঁজে পেয়ে আলোকচিত্রগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু মৃত হওয়ায় তার জন্য বিষয়গুলো জটিল হয়ে ওঠে। আবার মধ্যবর্তী জগতের নিয়মানুযায়ী তিনি এমন এক ধরনের আত্মায় পরিণত হন যেখানে বাস্তব জগতের কেউই তার অস্তিত্ব টের পাবে না কিন্তু তিনি বাস্তব জগতের সবকিছু স্পষ্ট অনুধাবনের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
প্রকৃতপক্ষে, মালির স্বজনরা তার সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কোনোকিছু জানে না। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন বা তার সাথে কী ঘটেছে এই সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কেউ জানত না।

লেখক মালির মৃত্যু, আলোকচিত্রগুলো এবং বাস্তব জগতের ঘটনাগুলো একটি শৃঙ্খল তৈরি করেছেন, যার বেশিরভাগই স্পষ্ট আবার অস্পষ্টও। তবে উপন্যাসজুড়ে বাস্তব জগতের নৈতিকতা কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। যেমন উপন্যাসের এক পর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য জিজ্ঞাসা করেন : ‘আমরা কি এটি তদন্ত করছি? নাকি ঘটনাটি ধামাচাপা দিচ্ছি?’

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে