X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
মুক্তিপথের অনিঃশেষ অভিযাত্রী

নারী আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল

উদিসা ইসলাম
১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৬আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৯

আমাদের দেশে নারীবাদী আন্দোলনের সূচনা অনেক আগেই। এই আন্দোলনে অগ্রগণ্য ছিলেন বেগম রোকেয়া, তিনি উদার সমানাধিকারে বিশ্বাসী।

নারী অধিকার আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। রোকেয়ার একার আন্দোলনেই যে নারীর অধিকার নিশ্চিত হয়েছে তা নয়, বরং সৃষ্টি হয়েছে বিবিধ মত ও পথ। এই পথের একটি হলো, সময় ও সমাজকে বিবেচনায় রেখে একটি ঘরানা। আয়শা খানম বাংলাদেশের নারী অধিকার আন্দোলনের তেমনই এক পথের পথিক। নারী অধিকার আন্দোলনকে কীভাবে আরো সংবেদনশীল করা যায় এ বিষয়ে আয়শা খানমের কোনো বিকল্প ছিল না।

তিনি নারীর অধিকার নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করে একটা গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছে ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি মহিলা পরিষদের সভাপতি থাকাকালে মারা যান।

একইসঙ্গে আয়শা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন শেষে বঞ্চিত নারীদের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন।

আয়শা খানমের জন্ম নেত্রকোণার গাবড়াগাতি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর। তার বাবার নাম গোলাম আলী খান এবং মা জামাতুন্নেসা খানম। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতি ছিলেন।

আয়শা খানমের কর্মপরিধি ও অবদান তুলে ধরতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে। সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় রয়েছে তার বিশাল কর্মজীবন। তার স্বজন, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা লিখেছেন তাকে নিয়ে।

এক সাক্ষাৎকারে আয়শা খানম বলেছিলেন যুদ্ধকালীন সময় নিয়ে। তিনি বলেন, এপ্রিল মাসের শেষদিকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলায় যান তিনি। সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ক্রাফটস হোস্টেলে ওঠেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যারা ভারতে আসতেন, তাদের এক অংশের সাময়িক আবাসস্থল ছিল ক্রাফটস হোস্টেল। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে যোদ্ধাদের মনোবল অটুট রাখা, প্রেরণা দেওয়া এবং শরণার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগাতে কাজ করেন তিনি।

এই স্মারকগ্রন্থে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে আয়শা খানমের সঙ্গে দেখা হয় ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার ক্রাফটস হোস্টেলে। মতিয়া চৌধুরী, মালেকা বেগম, ফওজিয়া মোসলেম, মাখদুমা নার্গিস রত্না ও আয়শা খানমসহ অনেক নারী নেতাকর্মীকে সেখানে দেখতে পাই। মালেকা আপা ততদিনে মহিলা পরিষদ নামের নতুন এক সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। সভাপতি বেগম সুফিয়া কামাল। পরদিন আমার বাংলাদেশ সরকার গঠিত মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণে যাওয়া স্থির হয়েছে।’

অজয় দাশগুপ্তের স্মৃতিতে একাত্তর থেকে এখনকার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের একটি চিত্র পাওয়া যায়।

দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা সীমা মোসলেম লিখেছেন ‘বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ও আয়শা খানম’ শিরোনামে। যেখানে তিনি নারী আন্দোলন সম্পর্কে আয়শা খানমের ভাবনা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখছেন, ‘আয়শা খানম মনে করতেন নারী আন্দোলন হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্বলিত সমাজে স্রোতের বিরুদ্ধে বৈঠা ঠেলা। নারী আন্দোলন হলো এমন একটি আন্দোলন যা ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত দিক থেকে নারীর অবস্থান দেখে। এ থেকেই নারী আন্দোলনের কর্মসূচি ও ভাষা তৈরি হয়। নারী আন্দোলনের কোনো একটি সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ রূপ নেই। বরং এই আন্দোলন বৈচিত্র্যকে প্রাধান্য দেয়। বৈচিত্র্যকে সংহত করে সকল নারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ও এর দায়বদ্ধতা পালন করে।’

বইটি সম্পাদনা পরিষদে আছেন অধ্যাপক অনুপম সেন ও সীমা মোসলেম। সদস্য হিসেবে আছেন ফওজিয়া মোসলেম, ডা. মাখদুমা নার্গিস, সুলতানা কামাল, মফিদুল হক, আবুল মোমেন, শাহরিয়ার কবীর, মালেকা বানু ও মাহবুব জামান।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, রেহমান সোবহান, গোলাম মুরশিদ, সনৎকুমার সাহা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজ, পরিবারের সদস্য; উন্নয়নকর্মী থেকে সাংবাদিক যারাই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও আয়শা খানমের সঙ্গে সহযোদ্ধা ছিলেন সকলেই লিখেছেন। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এ এক প্রামাণ্য দলিল।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সবসময় কি টাকার পেছনে ছুটে সময় ব্যয় করবেন?
সবসময় কি টাকার পেছনে ছুটে সময় ব্যয় করবেন?
মানুষকে স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে শরবত খাওয়াচ্ছে ছাত্রলীগ
মানুষকে স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে শরবত খাওয়াচ্ছে ছাত্রলীগ
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ কার্যক্রমের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ কার্যক্রমের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে