নতুন করে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে রয়েছে ক্ষামতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার মধ্যবর্তী নির্বাচন বা গণতন্ত্রের প্রশ্নে চাপ নয়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস রয়েছে তা স্বীকার করিয়ে নেওয়ার চাপ। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি পশ্চিমা দেশগুলোর নয়া কৌশল বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীনরা।
নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, সরকারকে চাপে ফেলতে এই মুহূর্তে বিভিন্ন কৌশল খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে এটি আগে ‘স্ট্যাবলিস্ট’ করতে চায় পশ্চিমারা। তারা চায় এই ইস্যুতে বাংলাদেশে এসে তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে। কৌশলের অংশ হিসেবে আরও আছে সরকারের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা।
আরও পড়ুন- দেশ নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
সূত্রগুলো জানায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা অনেক দেশ বিভিন্ন কৌশলে সরকারকে চাপে ফেলার প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছে। তাই পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের কোন ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে তা নতুন করে খুঁজতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: দল থেকে বহিষ্কার, তবুও নৌকা মার্কাই থাকছে ‘জেএমবি’ প্রার্থী সালামের
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশে আইএস আছে এটি প্রমাণ করতে ব্যস্ত রয়েছে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ। কোনও ঘটনা ঘটলেই আইএসের অস্তিত্ব খোঁজা শুরু করে পশ্চিমারা, তারা সেটা প্রমাণ করতে চায়। এরপর অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, পশ্চিমা শক্তির ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত আছে। তবে শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যাহত করবে।
নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশকে চাপে ফেলার আগের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে দেশে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ের জন্যে চাপ অব্যাহত রাখে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয় অবস্থানের কারণে তাদের মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ ব্যর্থ হয়। এই নির্বাচন আদায় করতে গত দুই বছর সরকারকে বিভিন্নভাবে পশ্চিমা দেশগুলো চাপ দিয়ে আসলেও ক্ষমতাসীনরা তা আমলে না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা না বলার কৌশল গ্রহণ করেছেন তারা। এরপরই বাংলাদেশকে নিয়ে দেশগুলো তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা এখন সরাসরি মধ্যবর্তী নির্বাচন বা গণতন্ত্রের প্রশ্নে সরকারকে আর চাপ দিতে চান না। তাদের কৌশল- সরকারের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো নিয়ে কিভাবে সরকারকে চাপে ফেলা যায়।
সূত্র জানায়, তাদের গৃহীত কৌশলের অংশ হিসেবে সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ইস্যুটি নিয়ে প্রথম চাপে ফেলার চেষ্টা করে যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড শুরু করে দেয়। সরকার তাদের দাবি অনুযায়ী দ্রুত বিমানবন্দরে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়ায় বিষয়টি আর বেশি দূর এগোয়নি।
সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিরা আরও জানান, কৌশল পাল্টালেও তাদের মূল উদ্দেশ্য আসলে নির্বাচন আদায় করে নেওয়া। এজন্য দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের দুই বছর পার হওয়ার পর পরই পশ্চিমাশক্তি বিভিন্নভাবে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে নির্বাচন আদায় করার জন্য। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিদেশিরা চাপ দিলেও দেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখাটাই এখন বেশি প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে সরকার। আর তা ঠিক রেখেই পূর্ণ মেয়াদ শেষ করে নির্বাচন হবে- এর আগে এ বিষয়ে ভাববে না আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক জঙ্গিরা স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে
আওয়ামী লীগের দুজন শীর্ষ নেতা বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা হচ্ছে- আইএস বাংলাদেশে আছে এটি প্রমাণ করে ছাড়া। এক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় অবস্থানের কারণে তারা এই ইস্যুতেও সুবিধা করতে পারছে না। তবে আইএস আছে এটি প্রমাণ করতে তাদের কৌশল অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যুটি নিয়ে সরকারের দুর্বলতা খুঁজতে ব্যস্ত পশ্চিমা দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মানবাধিকার ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত সরকারের তেমন দুর্বলতা খুঁজে বের করতে না পারায় এক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো কোনও পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের অবস্থান আছে। তবে দেশে কোনও আইএস বা আল কায়েদার অস্তিত্ব নেই। সাম্প্রতিক নাশকতাগুলোর জন্য দেশীয় জঙ্গিরাই দায়ী।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা পোশাক খাতের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ খাতে দুর্বলতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক মন্ত্রী জানান। ওই মন্ত্রী বলেন, জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া ছিল তাদের একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। এই সুবিধা পেতে তাদের দাবি অনেকাংশে পূরণ করা হলেও অজানা কারণে জিএসপি সুবিধা এখনও বন্ধ করে রেখেছে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, পশ্চিমা শক্তিগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে খেলা বন্ধ করেনি। শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব কখনও কখনও তাদের থামিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত রাজনীতিতে পরাস্ত হয়ে এখন পুরোদমে বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা শক্তির চক্রান্তের সঙ্গে দেশীয় অপশক্তির যোগসাজশ রয়েছে।
/এএইচ/আপ- এপিএইচ/