X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক ইস্যুতে বিএনপি নীরব, চলছে ‘পর্যবেক্ষণ’

সালমান তারেক শাকিল
২১ মে ২০১৬, ২০:০৮আপডেট : ২১ মে ২০১৬, ২১:২২

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় কটূক্তি’ ও এমপি সেলিম ওসমানের কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় উভয়পক্ষে প্রতিবাদ-নিন্দা অব্যাহত থাকলেও নীরব রয়েছে বিএনপি। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত দলটির পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বা বিবৃতি আসেনি।

বিএনপি

তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- মন্ত্রীদের বিভিন্ন বক্তব্যে ঘটনাটি নিয়ে দলে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে শনিবার রাতে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন খালেদা জিয়া। এরপর তিনিই দলের অবস্থান জানাতে পারেন।

দলের দায়িত্বশীল নেতাদের ভাষ্য, শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে আল্লাহকে ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগটি গুরুতর। আবার তাকে আইনের আওতায় না এনে সংসদ সদস্যের কান ধরে ওঠবোস করার ঘটনাও সভ্যতা ও আইনবিরোধী। তাই পুরো ঘটনাটিই ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে বিএনপি।

এ বিষয়ে শনিবার সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নীরবতার প্রশ্ন না, ঘটনা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আমরা বোঝার চেষ্টা করছি আসলে কী ঘটেছিল। নারায়ণগঞ্জে যা ঘটেছে, তা স্পর্শকাতর। আমরা আগে দেখব, কী ব্যাপার, কী হয়েছিল, এরপর আমরা দলীয়ভাবে অবস্থান ব্যক্ত করব।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জাতীয় সংসদের সদস্য সেলিম ওসমান ও স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি শ্যামল কান্তি ভক্তের সঙ্গে যা করেছে তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করা উচিৎ এবং প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিৎ। একজন শিক্ষককে কানধরে উঠবস করানো গোটা শিক্ষক সমাজ ও দেশকে লজ্জায় ফেলা হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন:

নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীনদের সড়ক অবরোধনারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীনদের সড়ক অবরোধ, সুশীলদের শহরে ঢুকতে না দেওয়ার হুমকি

বিএনপির সিনিয়র নেতা ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন, বিষয়টি এমন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য না পেয়ে কিছু বলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তবে এটিও ঠিক যে, কারণ ছাড়াই একজন সংসদ সদস্য একজন মানুষকে কান ধরে ওঠবোস করাবেন, এটিও কিন্তু ভাবার অবকাশ নেই।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা নীরব নই। একটি অপরাধের জন্য শিক্ষককে কানধরে ওঠবোস করানো অবশ্যই একজন আইনপ্রণেতার ঠিক হয়নি। এ ধরনের আচরণ গডফাদারসুলভ। সেলিম ওসমান তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে পারতেন। এখন তিনি আবার উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছেন।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের ঘটনা বিএনপি ‘পর্যবেক্ষণ’ করবে। তবে এ ঘটনা আড়ালে চলে গেলে তারা কোনও অবস্থান জানাবে না। তবে আলোচনায় থাকলে দু’একদিনের মধ্যে মুখ খুলতে পারেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ওই শিক্ষককে স্বপদে বহাল রাখার সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের তরফে। যদিও নারায়ণগঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দাবি করেন, তদন্ত কমিটি তার কাছে আসেনি। কোনও বক্তব্য নেয়নি। পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার হেফাজতের নেতারা সেলিম ওসমানের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তারা শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে আল্টিমেটামও ঘোষণা করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রকাশ্যে সেলিম ওসমানকে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। শুক্রবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমালোচনা করে বলেন, সেলিম ওসমান বিষয়ে তিনি কেন নীরবতা পালন করছেন?

 কানধরে ওঠবোসের ঘটনায় সেলিম ওসমানের সমালোচনা করা হয়েছে বুধবার ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকেও।

তবে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু এ ইস্যুটিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান ‘অস্পষ্ট’ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এখন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা একটা ফ্যাশন। মুক্তচিন্তার নামে ধর্মের বিরোধিতা করাটা এ সরকারের সময়ে শুরু হয়েছে। ব্লগারদের কেউ মারা গেলে তার পক্ষে কথা বলেছে। ব্লগার রাজিবের বাসায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আবার এখন অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে কথা বলছেন তারা। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়েই আমরা সন্দিহান।

এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন মন্তব্যের সমালোচনা করে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ঘটনা তদন্ত না করে হুটহাট কথা বলা আওয়ামী লীগের পুরনো কাজ। এগুলো করে সুযোগ নিতে চাইছে তারা।

এছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দাবি করেছেন, এই সরকারের আমলেই ধর্মের বিরুদ্ধে, নবী-রাসূলদের বিরুদ্ধে কথা বলাটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। আগের যেকোনও সরকারের সময়ের চেয়ে এগুলো বেশি ঘটছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 /এসটিএস/এমও/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী