X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ধারাবাহিক জঙ্গি হামলা: তাত্ত্বিক নেতাদের নাগাল পাচ্ছে না পুলিশ

জামাল উদ্দিন
১৭ জুলাই ২০১৬, ০৯:০৬আপডেট : ১৭ জুলাই ২০১৬, ০৯:১৬

জঙ্গি
জঙ্গি সংগঠনগুলোর স্লিপার সেলের সদস্যদের মাঝে-মধ্যে ধরা সম্ভব হলেও তাদের তাত্ত্বিক নেতা ও ইন্ধনদাতাদের নাগাল পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পরও জঙ্গিদের নেপথ্যে থাকা নেতা ও পরিকল্পনাকারীদের এখনও চিহ্নিত ও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।  তাত্ত্বিক জঙ্গি নেতাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান গোয়েন্দারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান ও তাত্ত্বিক নেতা মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীকে ২০১৩ সালের আগস্টে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ২০১০ সালের এপ্রিলে রাজধানীর রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হিযবুত তাহরীরের বাংলাদেশের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদকে। এর একমাস পর মে মাসে রাজধানীর দনিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় জেএমবি’র প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমানকে। ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এই তিনটি সংগঠনকেই সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

হিযবুত তাহরীরের বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদও বর্তমানে জামিনে মুক্তি নিয়ে পলাতক রয়েছেন। চ্যানেল আই’র ‘কাফেলা’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার পর উস্কানি ও ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে ২০১৪ সালের শেষ দিকে আনসারুল্লাহর তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিনকে গ্রেফতার করেছিলেন গোয়েন্দারা। তিনিও বর্তমানে জামিনে রয়েছেন বলে জানান তদন্তে সংশ্লিষ্টরা। মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী ও মাওলানা সাইদুর রহমান কারাগারেই আছেন। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে থেকেই তারা জঙ্গিবাদের কলকাঠি নাড়ছেন এবং অনুসারীদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এসব শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতারের পর প্রথম ও দ্বিতীয় সারির উল্লেখযোগ্য কোনও নেতাকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় গত ১৫ জুন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের স্লিপার সেলের সদস্য সুমন হোসেন পাটোয়ারী ওরফে সাকিব ওরফে শিহাব ওরফে সাইফুলকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা।

শিহাবের গ্রেফতারের তথ্য জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিহাব স্লিপার সেলগুলোর একটির সদস্য। প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টায় শিহাব সরাসরি অংশ নিয়েছিল। আর এই হত্যাচেষ্টা মিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিল শরিফুল ইসলাম নামের এক জঙ্গি। সে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি অংশ নিয়েছিল। তাকে ধরা গেলে আনসারুল্লাহর দ্বিতীয় ও প্রথম সারির জঙ্গি কারা এবং কাদের নির্দেশে দেশে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে সেগুলো জানা যেতো। কিন্তু তার এ সংবাদ সম্মেলনের তিনদিন পরই ১৯ জুন রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় শরিফ। সাকিব, সালেহ, আরিফ ও হাদী নামেও শরিফ নিজ অনুসারিদের মধ্যে পরিচিত ছিল। অবশ্য বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর জানা যায়, শরীফও তার প্রকৃত নাম ছিল না। তার প্রকৃত নাম হচ্ছে মুকুল রানা। বাড়ি সাতক্ষীরায়।

তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় সারির জঙ্গি নেতাদের ধরা হচ্ছে না এটা ঠিক নয়। গুলশান হামলার মাত্র একদিন আগে ৩০ জুন বৃহষ্পতিবার রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে জেএমবি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। বর্তমান সময়ে জেএমবি ও আনসারুল্লাহসহ জঙ্গি সংগঠনগুলোর সমন্বিত যে স্লিপার সেল রয়েছে সেগুলোর কয়েকটির সমন্বয়ক ছিলেন এই খালেদ সাইফুল্লাহ। একদিন পর ১ জুলাই শুক্রবার রাতে গুলশানের রেস্টুরেন্টে জিম্মি ঘটনার অবসানে জঙ্গিদের তিন শর্তের একটি ছিল সাইফুল্লাহর মুক্তি। এতেই বুঝা যায়, সম্প্রতি যতো জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে খালেদ সাইফুল্লাহ ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মাদারীপুরে নাজিমুদ্দীন কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তী হত্যাচেষ্টার মূলপরিকল্পনাকারী বলেও দাবি গোয়েন্দাদের।

শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতারের পর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও স্লিপার সেলের সদস্যদের গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। কিন্তু তাদের অনেকেই আবার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পালিয়ে যান। পালিয়ে গিয়ে আবারও তারা ব্লগার ও ভিন্ন মতাদর্শের লোকদের হত্যাসহ বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় অংশ নিয়েছেন বলে গোয়েন্দারদের কাছে তথ্য রয়েছে।

সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ১৯৪ জঙ্গিকে। এরমধ্যে ১৫১জনই জেএমবি’র সদস্য। জেএমবি’র বেশিরভাগ সদস্যই ধরা পড়েছে উত্তরাঞ্চল থেকে। এছাড়া হিজবুত তাহরীরের ২১জন, জেএমজেবি’র ৭জন, আনসারুল্লাহ’র ৬জন, আনসার আল ইসলামের ৩জন, আল্লার দলের ৪জন, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ১জন এবং আফগান ফেরত জঙ্গি ১জন।

জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, গুলশান হামলার পর থেকেই তারা নিহত জঙ্গিদের সহযোগী ও নেপথ্য নায়কদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।

পুলিশ সদর দফতরের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সম্প্রতি জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানে জেএমবি, জেএমজেবি, হুজি, হিযবুত তাহরীর, আল্লার দল ও আনসারুল্লাহসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের ১৯৪ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অপরাধী গ্রেফতারে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গ্রেফতার ও জামিনের বিষয়ে এ বিষয়ে ডিএমপি’র জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,পুলিশের কাজ জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের গ্রেফতার করে আদালতের কাছে উপস্থাপন করা। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আদালতের এখতিয়ার।

শনিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার মূল পরিকল্পনাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- 

নর্থ সাউথের ভারপ্রাপ্ত প্রো-ভিসিসহ গ্রেফতার ৩


জঙ্গিবাদ ইস্যুতে বিএনপির পাশে থাকছে না জামায়াত

/জেইউ/এমএসএম /

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
একবছরের জন্য ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি সাড়ে ৫ বছর পর বিলুপ্ত
একবছরের জন্য ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি সাড়ে ৫ বছর পর বিলুপ্ত
পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি