X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে পুরুষ হকার!

জাকিয়া আহমেদ
১৯ আগস্ট ২০১৬, ১৫:১২আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৬, ১৫:১৯

মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষ হকার

আমরা এখানে কেউ হাত ভেঙে, কেউ পা ভেঙে পড়ে আছি বিছানায়। অনেকেরই পোশাক থাকে এলোমেলো। সেখানে এ ধরনের হকার এসে হাঁকডাক দিচ্ছে। তারা নারী ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ছে অবলীলায়,কেউ কী দেখার নেই এ সব? বাংলা ট্রিবিউনকে কথাগুলো বলেন পঙ্গু হাসপাতালের ওয়ার্ডে থাকা চিকিৎসাধীন এক নারী। তিনি বলেন, শুনেছি সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এখানে কোনও ধরনের নিরাপত্তা নেই। যে যেমন খুশি যাতায়াত করছে, কারও কোনও চেকিং তো নেই-ই,তারওপর রয়েছে হকারদের অত্যাচার।

একেকজন হকার নানা ধরনের বাক্স-পেটরা নিয়ে আসছেন-এখন এগুলো দেখলেই ভয় হয়, বলেন রোগীরা। চারিদিকে যে অবস্থা,কাউকে বিশ্বাস করতেও ভয় লাগে। আর হাসপাতালের ভেতরে কেন ফেরিওয়ালা ঢুকবে সে প্রশ্নও করেন তারা।

গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁয়ে অবস্থিত হৃদরোগ ইনস্টিটিউট,শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার ওয়ার্ডগুলোতে হকারদের দৌরাত্বে রোগীরা বিরক্ত, বিব্রত। নানা সময়ে এ নিয়ে অভিযোগ করা হলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একেবারেই নিরব। রোগীদের দাবি, হকারদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজস থাকায় তাদের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন  না তারা।

এসব হাসপাতালের রোগীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান,ডিম, লেবু, আমড়া, শসা, চিকেন পেটিস, বাদামওয়ালা, চা, কফি দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ওয়ার্ডগুলোতে। কেউ দেখার নেই, বলারও নেই। পুরো ওয়ার্ডে তারা ঘোরে। ভালো লাগে না এ পরিস্থিতি। মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষ হকার এটা মানতে পারি না।

পঙ্গু হাসপাতালে ১৯৯৯ সাল থেকে ডিম বিক্রি করছেন শাহজাহান। পশ্চিম আগারগাঁর বাসিন্দা তিনি। সারা বছরই তিনি পঙ্গু হাসপাতালে ডিম বিক্রি করেন। বলেন,সবকিছু ম্যানেজ করেই এখানে বিক্রি করতে পারেন। কাদের ম্যানেজ করতে হয় প্রশ্ন করলে উত্তর দেন,‘বুঝে নেন।’

আপনাদের ওয়ার্ডে ঢুকে এভাবে বিক্রি করার অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে অনুমতি নেই জানান তিনি। জানালেন,তার দাদা অপারেশন থিয়েটারের দারোয়ান ছিলেন, সেই সূত্রে এই হাসপাতালে নিজেদের একটা আধিপত্য রয়েছে। হাসপাতালের লোকজনদের ম্যানেজ করেই এখানে আসেন তারা। এখানে তাকে নিষেধ করার কেউ নেই। আর রোগীদের জন্য ভিজিটররা (দর্শনার্থীরা) ডিম নেন অনেক সময়, তাই ডিমই বিক্রি করি এখানে। পকেটে কয়েকটা পয়সাও আসে এতে।

মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষ হকার

তিনি জানান, সকাল সাড়ে সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত আবার বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তিনি ডিম বিক্রি করেন। প্রতিদিন কেমন বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে হাসপাতাল থেকেই নাস্তার সময় ডিম দেওয়া হয়, তাই তখন বিক্রিটা একটু কম হয়। তখন নিয়ে আসি ৫০ থেকে ৬০টা ডিম। আর বিকালে নিয়ে আসেন ১০০টা ডিম।

আরেক হকার রাজু এক বছর ধরে হাসপাতালে চিকেন পেটিস বিক্রি করছেন। হাসপাতালে ঢুকে ফেরি করে চিকেন পেটিস বিক্রি করায় তাকে কেউ কিছু বলে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, না কেউ কিছু বলে না। পরে স্মিত হেসে উত্তর দেন, কে কি বলবে,সবাইকে তো ভাগ দেই। কাকে কাকে ভাগ দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আপা,আমার চাকরিটা খাইয়েন না। এখানে একজনের দেখাদেখি অন্যরাও আসে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিকিৎসাধীন একজন নারী বলেন,আমি এখানে আছি প্রায় বিশ দিন হলো। প্রতিদিন বিকাল বেলায় লাল চা নিয়ে আসেন একজন হকার। কিন্তু হাসপাতালের ভেতরে এভাবে হকার অ্যালাউ করাটা খুব আশ্চর্যজনক মনে হয় আমার। এ নিয়ে কথাও বলেছি একজন সিস্টারের সঙ্গে।কিন্তু তিনি পাত্তা দেননি আমাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা, উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,গত ১৪ আগস্ট স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক দেশের সব সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নিরাপত্তা নিয়ে। প্রতিমন্ত্রী ওই সভায় সব হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন। হাসপাতালে ভিজিটরদের সময় নির্ধারিত করে দেওয়া, নির্দিষ্ট একটি ভিজিবল স্থানে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ফোন নম্বর দেওয়া, সিসি ক্যামেরা বসানো, নজরদারি বাড়ানো, আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেক্টর বসানোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছে।

অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন,আমার হাসপাতালে ৮৫০ জন রোগীর জন্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে মাত্র ১১ জন নিরাপত্তা কর্মী। আমি এরই মধ্যে নিরাপত্তা রক্ষী বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। নিরাপত্তা রক্ষী বাড়ানো হলেই এসব হকার,অনাকাঙ্খিত মোটরসাইকেল,গাড়ির দিকে আমরা নজর দিতে পারবো। বাইরের মানুষ যেন হাসপাতালে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করছেন বলে জানান তিনি।  

এ বিষয়ে জানতে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইকবাল কাভিকে একাধিকবার ফোন করে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।    

জেএ/এমএসএম/

আরও পড়ুন:


জিয়া নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে আ.লীগ নেতারা জড়িত: ফখরুল

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা