রাজধানী ঢাকার পথে প্রান্তরে আজ হলুদের মেলা শেষে ঘরে ফিরেছে তরুণ তরুণী ভালবাসা দিবসের আহ্বান সঙ্গে নিয়ে। সারা দিনই ছিল হলুদ, বাসন্তী আর সবুজের সমারোহ। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলা, কলাভবনের সামনের বটতলা, বিকেলে শাহবাগ বইমেলা ঘিরে কেবল উচ্ছল চোখমুখে চললো প্রাণপ্রকৃতির খেলা। আগামীকালের নগরী ভালবাসা দিবসের লাল রঙে রাঙা হবে এই পরিকল্পনা নিয়ে আগেভাগেই ঘরে ফিরেছে।
বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই উৎসবে ঢোকার মুখে রাস্তার দু’পাশে বসেছিল প্রাণের হাট। মেয়েরা হলুদ বাসন্তী শাড়ি, মাথায় ও হাতে ফুল, ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি পরে আড্ডায় হাসির কলরব। বইমেলা ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে চললেও আজই ছিল সবচেয়ে বেশি ভীড়। কেবল ভীড়ই নয়, বই কেনার হারও ছিল অন্য দিনের তুলনায় তিন গুণ বেশি। ক্রেতা বিক্রেতা সবার মুখেই ছিল হাসি।
সকালে জাগাও প্রাণ, প্রকৃতিগান এই ফাগুনে- আহ্বানে সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ ঢাকা শাখার উদ্যোগে এবারের বসন্ত উৎসব উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তারা আয়োজন করেন প্রকৃতি মঙ্গল শোভাযাত্রা। এর আগে চারুকলার বকুল তলা ফাগুনকে বরণ করে নেয় ঐতিহ্য মেনে।
বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক, লেখক-সাংবাদিক প্রয়াত ওয়াহিদুল হক বসন্ত উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিলেন নব্বইয়ের দশকে। সেই ধারাবাহিকতায় চারুকলার উৎসব জাতীয় রূপ পেয়েছে আজ। জাতীয় বসন্ত উৎসব পরিষদের উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হলো ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে-১৪২৩’। সকাল সাড়ে ৭টায় ধ্রুপদী যন্ত্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান। সবচেয়ে দেখার মতো বিষয় ছিলো নারী ও শিশুদের সাজ, চুলে ফুলের বাহারি উপস্থিতি।
পরনে হলুদ শাড়ি আর মাথায় ফুল দিয়ে শিশু আয়রাকে নিয়ে এসেছেন নাবিলা নওরোজ। তিনি সঙ্গে এনেছেন বাসায় কাজে সহযোগিতা করা কিশোরীকে। সবার পরনে নতুন জামা, মাথায় ফুল। নাবিলা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সকালে বের হওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। শিশু নিয়ে রাস্তায় কী পরিস্থিতিতে পড়তে হয় ভাবতে ভাবতে টেলিভিশন দেখে বেরিয়ে এসেছি। সবার মনে আনন্দ দেখে মনে হলো, এসব জায়গায় বাচ্চাকে না নিয়ে গেলে সে আমার সংস্কৃতি শিখবে কী করে? এ দায়িত্ব তো আমারই।
সোমবার বইমেলা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে জমতে থাকে টিএসসি। যারা সকালে এসেছেন, তাদের অনেকেই বাসায় ফেরেননি মেলায় ঢুকবেন বলে। ঠিক বেলা ৩টায় মেলার গেইট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বরে প্রবেশ করতে থাকেন দর্শনার্থীরা।
কোলে পাঁচ বছরের শিশু নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রেজা রহমান বলেন, ছুটি নিয়েছি আজ, বাসার সবাই মিলে ঘুরবো বলে। আজকের দিনে ঘরে বসে থেকে অন্যদের আনন্দ না দেখে সবার আনন্দে শামিল হতে মনে চেয়েছে।
গাড়িতে সকালের খাবার নিয়ে বের হয়েছেন তার স্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের যাওয়ার জায়গা এত কম। এত রঙ যেখানে, সেখানে থাকব না! ভালবাসা দিবসের পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসার বড়দের নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াব। আর নিজেদের কিছু পরিকল্পনা আছে, সেটি সারপ্রাইজ, এখন বলা যাবে না।
সন্ধ্যা নামতে ঘরে ফিরতে দেখা গেল তরুণ তরুণীদের। দলবল নিয়ে বন্ধুরা ফিরছেন আগামীকাল ভালবাসা দিবসের ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা করতে করতে। এরকম একটি গ্রুপের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আড্ডা দিয়েছেন, আগামীকাল রবীন্দ্র সরোবরে একসঙ্গে হবেন। এই খুনসুটি আর পরিকল্পনা গুনগুনিয়ে তারা প্রকৃতিকে সাজিয়ে ঘরে ফিরে চলেছেন।
/ইউআই/এএআর/