X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ১০৬ আসামিকে কারামুক্ত করা হয়

উদিসা ইসলাম ও সানাউল ইসলাম টিপু
২২ মার্চ ২০১৭, ২২:২৯আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৭, ০৯:৪২

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আড়াই কোটি টাকার বিনিময়ে বিচারকের স্বাক্ষর নকল করে ১০৬ আসামিকে জামিনে মুক্ত করা হয়েছিল। ভুয়া জামিননামা প্রস্তুত করার মধ্য দিয়ে এত আসামিকে কারাগার থেকে বের করার সঙ্গে জড়িত ছিলেন একই আদালতের ৫ কর্মচারী, ভুয়া জামিনের জামিনকারী ও জামিননামা দাখিলকারী আইনজীবীরা। আজ বুধবার বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া জামিননামা তৈরি করে ৭৬টি মামলার ১০৬  আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার অভিযোগে পেশকারসহ ৫ জনকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালতের রায়ে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে সম্পৃক্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

কোন প্রক্রিয়ায় এই অপরাধটি সম্পাদিত হয়েছিল উল্লেখ করতে গিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, মামলার আসামিগণ একে অপরের সহযোগিতায় বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বদলি হয়ে আসার পর কোনও কোনও ক্ষেত্রে আসামিরা মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশনামা গায়েব করেছেন এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা মামলার নথি দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকের নিকট উপস্থাপন করেন নাই। রায়ে আরও বলা হয়েছে, ৭৬টি মামলার প্রতিটিতেই জামিনের দরখাস্ত অবৈধভাবে দাখিল করার ক্ষেত্রে তারা আসামিপক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীদের সঙ্গে যোগসাজশে আসামিদের পক্ষে জামিনের দরখাস্ত শুনানি এবং আদালত থেকে ওই ধরনের কোনও আদেশ প্রচারিত না হওয়া সত্ত্বেও তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশে বেআইনিভাবে জামিননামা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে রিলিজ অর্ডার ইস্যু করে ১০৬ জন আসামিকে অবৈধভাবে জেল হাজত থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। 

আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণে এর সঙ্গে জড়িত আর্থিক লেনদেনও বেরিয়ে আসে। বলা হয়, প্রতারকচক্র শুনানি না করে বিচারকের খাস কামরায় জামিন মঞ্জুর হওয়ার মিথ্যা কথা বলে ওই ৭৪টি মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে আসামিদের জামিননামা গ্রহণ করে। প্রতিটি মামলায় জামিনের ক্ষেত্রে আসামিপক্ষের লোকজনের কাছ থেকে অন্তত ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নেয় তারা। এই হিসেব অনুযায়ী, ১০৬ জনকে জামিন দিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

রায়ে বলা হয়, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একে অপরকে লাভবান করার জন্য তাদের নিয়োজিত আইনজীবীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মিথ্যা পরিচয়ে নিজেরাই আদালত সেজে আদালতের মূল্যবান রেকর্ড জাল করে এবং ঐ জাল কাগজপত্রকে বৈধ কাগজপত্র হিসাবে উপস্থাপন করে পরস্পর লাভবান হয়েছে।

রায়ে আরও বলা হয়, দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শফিউল্লাহর মতো কর্মকর্তা তদন্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। তাই আদালতে মনে করেন, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়ের কপি দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।

২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সামছুন্নাহারের স্বাক্ষর জাল করে যোগসাজশে ভুয়া জামিননামা তৈরি করেন একই আদালতের ৫ কর্মচারী। পরে তা কেন্দ্রীয় কারাগারে পেশ করে বিশেষ ও দায়রা জজ আদালতের ৭৪টি মামলার চিহ্নিত ১০৬ জন আসামিকে মুক্ত করা হয়। 

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলার তদন্তকর্তা তদন্তে চরম অবহেলা, উদাসীনতা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আইনানুগ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, যা নিঃসন্দেহে অসদাচারণের পর্যায়ে পড়ে। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগ এবং সেই বিচার বিভাগে কর্মরত কতিপয় কর্মচারীর বেআইনি কাজের কারণে এই বিভাগের সুনাম নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। তদন্তকর্তার দায়িত্ব ছিল তর্কিত ৭৬টি নথির আদেশ জালিয়াতির ক্ষেত্রে কে কে জড়িত ছিল তা বের করে জনগণের সন্মুখে প্রকৃত সত্য বের করা।

১৩ পৃষ্ঠার রায়ের শেষ অংশে বিচারক আরও বলেন, ওই সব জামিননামায় দেখা গেছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৌসুলিদের নামের সিল ব্যবহার করা হলেও ওকালতির সদস্য নিবন্ধন নম্বর, স্থানীয় জামিনদারের ঠিকানা, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর জামিননামায় যুক্ত করা হয়নি। 

আইনজীবীদের স্বাক্ষর থাকার পরও তদন্ত কর্মকর্তা তাদের ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকা বার) সাবেক সভাপতি আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অবশ্যই ওই সব আইনজীবীর বিরুদ্ধে কি রকম যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে আসা উচিত ছিল। যেহেতু অসৎ আইনজীবীদের একটা অপরাধের ঘটনার সঙ্গে যোগসাজশের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, সে কারণে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত ছিল। 

/ইউআই/এএআর/

 আরও পড়ুন: জাল জামিননামায় ৬১ আইনজীবীর স্বাক্ষর, বাঁচিয়ে দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা!

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!