X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যা দিবসের সমাবেশে খালেদা জিয়ার সমালোচনায় বক্তারা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৬ মার্চ ২০১৭, ০১:০৫আপডেট : ২৬ মার্চ ২০১৭, ০১:১৫
image

গণহত্যা দিবসে আলোক প্রজ্জ্বালন কর্মসূচি  ছবি-ফোকাস বাংলা

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও আলোর মিছিলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন বক্তারা। শনিবার রাতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়োজনে এই সমাবেশে অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী ‍মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজ্জামেল হকসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

আওয়ামী লীগ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী ‍মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জাতির জনককে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা সংবিধানকে তছনছ করেছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলাম, সেটা জিয়াউর রহমান চালু করেছেন। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে পতাকা দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করেন। তিনি (খালেদা) সেখানেই থেমে থাকেননি। ত্রিশ লাখ শহীদ যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলার মাটিতে বসে খালেদা জিয়া বললেন যে তিরিশ শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ সন্দেহের পরেই বই লিখতে (পাকিস্তানে জুনায়েদ আহমেদ)শুরু করেছে। আমার ধিক্কার দেওয়া ছাড়া, ঘৃণা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু বলার নেই। পৃথিবীতে অনেক গণহত্যা হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত লোক কোথাও মারা হয়নি। সেই সংখ্যা নিয়েও বেগম খালেদা জিয়া উপহাস করে, সন্দেহ প্রকাশ করে স্বাধীনতার চেতনা, মূ্ল্যবোধের উপরে আঘাত করেছে। শহীদের রক্তের তিনি (খালেদা) আঘাত করেছেন।

স্মৃতিচারণ করে ২৫ মার্চ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী ‍মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, শাহরিয়ার কবির আমাকে পাকিস্তানে জুনায়েদ আহমেদের একটি বই দিয়েছিলেন। সেই বই পড়ে আমার খারাপ লেগেছে। সেই বইয়ে গণহত্যার ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে এসব হত্যা করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের পাশে লেখা সন্ত্রাসী।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমার কাছে খারাপ লেগেছে কেন আমরা এতদিন এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস পালন করছিলাম না। আজ সারা বাংলাদেশ দুঃখভারাক্রান্ত মনে গণহত্যা দিবস পালন করছে।আমাদের উচিত ছিল আরও আগে গণহত্যা দিবস পালন করা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, গণহত্যার একটি রাজনীতি ছিল। সেই রাজনীতি ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ এবং উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা আর তার বিপরীতে ছিলো দেশের মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনা। আজকে সেই রাজনীতির ধারাবাহিকতায় আমরা সামনে বাড়ছি, সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত জোট ঐ পুরনো ধর্মান্ধতাকে অনুসরণ করে একইভাবে প্রশ্ন করছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। আজকে আমরা দেখি, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আগ্রাসন, সেই একই রাজনীতির ধারাবাহিকতার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের কর্তব্য সেই রাজনীতিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা। একমাত্র অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্যের মধ্যে দিয়ে এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে সেটাকে অর্জন করতে পারি।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজ্জামেল হক বলেন, আগামী বছর আমাদের পাঠ্যসূচিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে নয় মাসে পাকহানাদার বাহিনী, রাজাকার, জামায়াতে ইসলামীদের কি ভূমিকা ছিল তা অন্তর্ভূক্ত করবো। আমাদের আদালতে পাকিস্তানের সেনাদের বিচারের দাবি মুক্তিকামী মানুষের। পাকিস্তানের কাছে পাওনা আমাদের সম্পদ আদায়ে জনমত গড়ে তুলবো।

মোজ্জামেল হক বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র, অনতিবিলম্বে এটা করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই আইনে রূপান্তিরত করে দ্রুত কার্যকর করা, এটা মুক্তিকামী মানুষের দাবি। খালেদা জিয়া যে কথা বলছে, এ সুযোগ পেয়েছে এজন্য আমরা আমাদের ইতিহাসকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের এ ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে, সঠিক ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কায়েম করবো। 

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির বলেন, যে  রাজনীতি ৭১ এর গণহত্যার আদর্শিক ক্ষেত্র তৈরি করেছে, গণহত্যাকে বৈধতা দিয়েছে, গণহত্যাকে ধর্মের নামে মহিমান্বিত করেছে সে রাজনীতি বাংলাদেশে থাকতে পারে না। গণহত্যা দিবসে আমাদের প্রধান দাবি, বাংলাদেশে ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও গণহত্যার রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে অবিলম্বে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীসহ পাকিস্তানি গণগহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ করতে হবে।

তিনি বলেন, ধর্মের নামে রাজনীতি চালু করে জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদ যে বিষবৃক্ষ রোপণ ও লালন করেছেন তার ফল এখন পাচ্ছি। ধর্মের নামে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসের রাজনীতি আমাদের শিশু কিশোরদেরও রেহাই দিচ্ছে না। ১২-১৪ বছরের শিশু কিশোররা আজ জঙ্গিরা জেহাদের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। যার সব চেয়ে বড় কারণ শেকড়হীনতা।

শাহরিয়ার কবির বলেন,পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীরণ হচ্ছে। মানুষ, সমাজ, দেশও প্রকৃতিকে ভালোবাসার পরিবর্তে শেখানো হচ্ছে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও হত্যা।

সমাবেশ শেষে ৪৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মশাল প্রজ্জলন করেন। এরপর মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোক মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্তম্ভে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শেষ হয়। 

/সিএ/এমএইচ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা