X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয়করণের পর কলেজ শিক্ষক আত্মীকরণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা

এস এম আববাস
২৮ মার্চ ২০১৭, ০৭:৫০আপডেট : ২৮ মার্চ ২০১৭, ০৭:৫০

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয়করণের আওতাধীন দেশের ১৯৯টি বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের আত্মীকরণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে আত্মীকরণ থেকে বাদ পড়েছেন ২১টি কলেজের শতাধিক শিক্ষক। তবে কোনও কোনও শিক্ষক তদবির করে পার পেয়েছেন। এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বাদ পড়া শিক্ষকদের মধ্যে। ভুক্তভোগী শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণার পর গত বছর ৩০ জুন ১৯৯টি কলেজ জাতীয়করণের অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৬ সালে জারি করা কলেজগুলোর মধ্যে ১৮টি কলেজের প্রায় একশ শিক্ষক বাদ পড়েছেন আত্মীকরণ থেকে। চলতি বছরেও জাতীয়করণের আওতায় থাকা কয়েকটি কলেজের শিক্ষকের আত্মীকরণ হয়নি। এ নিয়ে বাদ পড়া শিক্ষকের সংখ্যা শতাধিক।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, জাতীয়করণের জিও জারির পর তদন্তের সময় যারা মানোন্নয়ন সনদের জন্য অধ্যায়নরত ছিলেন, সেসব শিক্ষক বাদ পড়েছেন আত্মীকরণ থেকে। জিও জারির পরে যাদের কাছে মানোন্নয়ন সদন চাওয়া হয়েছে, তারাও রয়েছেন এই তালিকায়। এসব শিক্ষকদের অনেকেই ২০ বছর ধরে চাকরি করছেন। বাধ্য হয়ে মানোন্নয়ন সনদও নিয়েছেন। কিন্তু তারা বাদ পড়েছেন আত্মীকরণের সময়। অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ মানোন্নয়ন সনদ নেওয়া শিক্ষকদের বাদ দিয়েই আত্মীকরণের জন্য শিক্ষকদের তালিকা পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার একটি কলেজ ছাড়া সব কলেজের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।’

আত্মীকরণ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থ ছাড়ের বিষয় রয়েছে। রাতারাতি আত্মীকরণ চাইলেও সম্ভব হবে না সরকারের পক্ষে। সময় দিতে হবে সরকারকে।’

তবে সরকারের এই কর্মকর্তা নতুন নীতিমালা করে জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে বলেন, ‘এক্ষেত্রে জুনিয়র-সিনিয়র নিয়েও কোনও সমস্যা থাকবে না।’

আত্মীকরণ প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ার কারণ হিসেবে শিক্ষকরা বলছেন, জাতীয়করণের জন্য কলেজ তদন্তের সময় অনেক শিক্ষক পরিচালনা পর্যদের অনুমোদন নিয়ে মানোন্নয়ন সনদের জন্য অধ্যায়নে ছিলেন। তারা বাদ পড়েছেন। আবার অনেকের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় বাদ পড়েছেন, যদিও পরে তারা চাহিদামতো মানোন্নয়ন সনদ নিয়েছেন। পরে এসব শিক্ষকের মানোন্নয়ন সনদ মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হলেও সেই প্রক্রিয়া এখনও ঝুলে আছে। আবার যেসব কলেজ থেকে মানোন্নয়ন সনদ নেওয়া শিক্ষকদের তালিকা পাঠানো হয়নি, তারাও ক্যাডারভুক্ত হতে পারছেন না। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।

জাতীয়করণ হওয়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসরকারি কলেজগুলোকে জাতীয়করণ করার পর আত্মীকরণ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এসব কলেজের কোনও কোনও শিক্ষক ২০ বছর ধরে চাকরি করছেন। তারা মানোন্নয়ন সনদ জমা দিয়েও আত্মীকরণ থেকে বাদ পড়েছেন।  অন্যদিকে, আত্মীকরণ বিধিমালা-২০০০ অনুযায়ী ক্যাডারভুক্ত হলেও ২০ বছর ধরে চাকরি করা অনেক শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে সিনিয়র হয়ে যাবেন বেশকিছু জুনিয়র শিক্ষক। এই বিশৃঙ্খলা দূর করতে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হবে। তা না হলে এই বৈষম্য কলেজে শৃঙ্খলা ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় প্রভাব ফেলবে।’

মাদারিপুরের রাজৈর কলেজের শিক্ষক শাহে আলম কাজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তের সময় মানোন্নয়ন সনদের জন্য কলেজের অনুমোদন নিয়ে অধ্যায়নরত ছিলাম।  এরপর মন্ত্রণালয় থেকে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোন আদেশ বলে আমি মানোন্নয়ন করছি। অথচ আমার কলেজের পরিচালনা পর্ষদ আমাকে মানোন্নয়নের অনুমোদন দিয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে ব্যাখ্যাও দিয়েছি। কিন্তু এখনও ঝুলে আছি।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অনেকেই জিও হওয়ার আগে সনদ নিয়ে ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। আবার জিও জারির পরেও অনেকে ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। তাহলে আমরা ঝুলে আছি কেন?’

জানা গেছে, ২০১৬ সালে জিও জারির আগে ও পরে যারা মানোন্নয়ন সনদ জমা দিয়েছেন, তাদের অনেকেই ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। এসব কলেজের মধ্যে টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের শিক্ষক গাজী রফিকুল ইসলাম রয়েছেন। ওই কলেজের বাদ পড়া অন্য শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। একইভাবে নগরকান্দা কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক আঞ্জুমান আরা মানোন্নয়ন সনদ জমা দিয়ে ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। ওই কলেজের বাদ পড়া অন্যরাও শিক্ষকরাও মানোন্নয়ন সনদ জমা দিয়ে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।

এদিকে, জাতীয়করণ নিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ লেদেনের অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইলের ইব্রাহিম খাঁ কলেজে। ওই কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আত্মীকরণে বাদ পড়েন। কিন্তু তদন্তের সময় এমপিও না হওয়া জুনিয়র শিক্ষকদের তালিকা দেওয়ায় হয় অর্থ লেনদেন করে। এই অভিযোগে পদ সৃষ্টি হওয়ার পরেও ওই শিক্ষকদের সৃষ্ট পদে নিয়োগ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

বাদপড়া ক্ষুদ্ধ শিক্ষকরা জানান, টু্ঙ্গিপাড়ার কামারখালির এক কলেজ শিক্ষক আত্মীকরণ বাদ পড়ায় আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত রায়ে বলেছেন, জাতীয়করণের জিও জারির তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে মানোন্নয়ন সনদ সাপেক্ষে ক্যাডরভুক্ত করতে হবে।

উল্লেখ্য, দেশে এখন সরকারি কলেজের সংখ্যা ৩৩৫টি। দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি কলেজ জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সরকারি কলেজ নেই এমন ৩১৫টি উপজেলায় বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এগুলো যুক্ত হলে সরকারি কলেজের সংখ্যা হবে ৫৩৪।

/এসএমএ/টিআর/এসএনএইচ/আপ-এমপি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত