X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গরমে বেশি কাবু শিশুরাই

জাকিয়া আহমেদ
২৩ মে ২০১৭, ২০:২৬আপডেট : ২৩ মে ২০১৭, ২১:০৬

শিশু হাসপাতালের প্রতিটি বিছানা ভরে গেছে অসুস্থ শিশুতে।  ছবি-বাংলা ট্রিবিউন

অসহনীয় গরমে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ অস্থির। তবে তাপদাহের প্রভাব বেশি পড়ছে শিশুদের ওপর। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এবারের চৈত্র-বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টি বেশি থাকায় হুট করে গরমটা বেশি মনে হচ্ছে। সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তীব্র গরমের কারণে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শিশু রোগীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

রাজধানীর শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মোহাম্মদপুরের ১০০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সপ্তাহের শুরু থেকেই গরমের কারণে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।

শিশু হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ শিশু হৃদ। ছবি-বাংলা ট্রিবিউন

রাজধানীর আগারগাঁয়ে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রতিটি বিছানায় যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছে শিশু রোগীরা। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতা থেকে জানা যায়, গত দেড় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এই হাসপাতালে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন অসুস্থ শিশুকে নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। এদের বেশিরভাগকে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হলেও অনেককেই ভর্তি করতে হচ্ছে হাসপাতালে। অথচ বছরের অন্যান্য সময়ে ৬০০ থেকে সাড়ে ছয়শো শিশু এখানে চিকিৎসার জন্যে এসে থাকে।

হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এটিএম আজহারুল হক জানান, এই হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা ৬৫০ বেড। প্রতিটি বেড এখন ‘বুকড’। তিনি বলেন, শিশু হাসপাতালের এই নির্ধারিত বেড এর বাইরে আমরা কোনও শিশুকে ভর্তি করি না, আমাদের ফ্লোরে কোনও রোগী নেই। আর তাই প্রতিদিন অনেক শিশুকে আমাদের ফেরত দিতে হয়, তারা অন্য হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন।

শিশু হাসপাতালের বাবার কোলে চার দিন বয়সী অসুস্থ শিশু। ছবি-বাংলা ট্রিবিউন

হাসপাতালে কথা হয় একজন অভিভাবক রিফাত ফারজানা ফারিহার সঙ্গে। শেখের টেক থেকে ছেলে সাদ বিন শোয়েব হৃদকে নিয়ে তিনি শিশু হাসপাতালে এসেছেন গত ২১ মে। ফারিহা বলেন, গত পরশু থেকেই পাতলা পায়খানা আর জ্বরে অসুস্থ ছিল হৃদ। বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পরও না কমায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেছেন ছেলেকে। তবে আজ সকাল থেকেই জ্বরের মাত্রা কমছে।

অপরদিকে, লালবাগ থেকে জন্ডিসে আক্রান্ত ৪ দিনের শিশুকে নিয়ে এসেছেন তার বাবা মুহিব। তিনি বলেন, বাচ্চাটার এখনও নামও রাখতে পারি নাই, অথচ জন্ডিস হইলো, এইটুকুন বাচ্চারে নিয়া হাসপাতালে আসা খুবই কষ্টের।

এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেও জানা যায়, প্রতিদিনই এখানে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া, জ্বর, টাইফয়েড আর নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। গরম বাড়ার আগে শিশু রোগী আসতো ১২০ থেকে ১৫০ জন। এখন সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী আরও তিন-চারদিন তাপমাত্রা এমন বেশি থাকবে। এসময় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমবে না। মূলত দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আজ মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রচণ্ড গরমের এই সময়টাতে শিশু এবং বড়রা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তবে শিশুরা সংবেদনশীল হওয়াতে তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ভাইরাসজনিত জ্বর, ডায়রিয়া, টাইফয়েড এবং চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি পাচ্ছি হাসপাতালে। সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে বলেই শিশুরা এই অস্বাভাবিক গরমে বেশি ‍অসুস্থ হচ্ছে।

শিশু হাসপাতালের বিছানায় আরেকটি অসুস্থ শিশু। ছবি-বাংলা ট্রিবিউন

ডা. রকিবুল ইসলাম বলেন, এই সময়ে বাইরের খোলা খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত না, উচিত না সংরক্ষণ করে রাখা খাবার খাওয়াও। কারণ, তাতে অনেক সময় যেসব জীবাণু তৈরি হয় সেগুলোই ডায়রিয়ার জন্ম দেয়। যথেষ্ঠ পরিমাণ পানিসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদান যেসব খাবারে রয়েছে সেসব খাবার শিশুদের খাওয়াতে হবে।যত বেশি জ্বর, তত বেশি পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে, নয়তো পানিশূণ্যতা হয়ে কিডনির সমস্যা তৈরি করবে।

অপরদিকে, মোহাম্মদপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুনীরুজ্জামান সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিশুদের যেন বেশি ঘাম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, কারণ, ঘাম জমেই বেশিরভাগ সময় ভাইরাসজনিত জ্বর এবং নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। আর বাইরের খাবার এ মুহূর্তে না খাওয়াই ভালো। পানিসহ ঘরে তৈরি সবজি জাতীয় খাবার এই সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজন।

এই সময়টায় ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, গরম থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে, নিয়ম মেনে গোসল করাতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, বেশিক্ষণ পানির সংস্পর্শে শিশুরা না থাকে।

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত