X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিলের চার ওভারব্রিজে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাই

রাফসান জানি
২৭ আগস্ট ২০১৭, ১০:২৩আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৩৭

হাতিরঝিলে চিহ্নিত চার ওভারব্রিজ নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিল দিনে দিনে পরিণত হচ্ছে অস্বস্তির কেন্দ্র হিসেবে। এখানকার চারটি ওভারব্রিজের অন্তত ৮টি স্পটে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন বিনোদন পিয়াসীরা। ওভারব্রিজের ওপর হাতিরঝিলের নিজস্ব সিকিউরিটি গার্ড না থাকা ও পুলিশের কম নজরদারির কারণে প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা  ঘটেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তি, হাতিরঝিলের সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধুবাগ ও মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় দু’টি ব্রিজের পাশাপাশি চারটি ওভারব্রিজ রয়েছে। মধুবাগ এলাকায় রয়েছে বেগুনবাড়ি ও মধুবাগ ওভারব্রিজ। মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় রয়েছে আড়ং ও মহানগর সাইড ওভারব্রিজ। এই চারটি ওভারব্রিজের ওঠা ও নামার পথে আটটি স্পটে ছিনতাইয়ে ঘটনা বেশি হচ্ছে।

প্রতিদিন একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যায়। সারা সপ্তাহের কাজের ফাঁকে এই তিন দিন হাতিরঝিলে বেশি লোক সমাগম ঘটে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরের সময়টা বেছে নেয় ছিনতাইকারীরা।

হাতিরঝিলে ছিনতাইয়ের সঙ্গে কারা জড়িত? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, নিরাপত্তারক্ষী, পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তেজগাঁও, কুনিপাড়া, মধুবাগ এলাকার বখাটেরা এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। এদের অধিকাংশের বয়স ১৫-২০ বছর। এই বখাটেদের অন্তত ৫-৭টি গ্রুপ রয়েছে। প্রতি গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ৮ জন। তারা সবাই আশেপাশের এলাকায় বসবাস করে।

ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিদের দাবি, অভিনব কায়দায় টাকা, মোবাইল ফোনসহ অলঙ্কার ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ওভার ব্রিজগুলোতে পায়ে হেঁটে পারাপারে নিষিধাজ্ঞা থাকার পরও নির্জনে সময় কাটানো জন্য সেখানে যান অনেকেই। আর এই সুযোগটাই নেয় অপরাধীরা।

সম্প্রতি ছিনতাইয়ের শিকার একটি সরকারি কলেজের ছাত্র রেজাউল কবির বলেন, ‘এরা ফাঁদ পেতে ছিনতাই করে। ব্রিজের ওপরে একটু নিরিবিলি একসঙ্গে বসে থাকা ছেলে-মেয়েদের টার্গেট করে তারা। ব্রিজে বসে থাকা ভ্রমণকারীদের সামনে দিয়ে প্রথমে হেঁটে যায় ২/৩ জন বখাটে। তারা ইচ্ছে করে বসে থাকা ব্যক্তিদের  পায়ের সঙ্গে নিজেদের ধাক্কা লাগিয়ে দেয় এবং ঝগড়ার সূচনা করে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে দলের অন্য বখাটেরাও চলে আসে। তখন শুরু হয় মূল পর্ব।’

ছিনতাইকারীরা তাদের টার্গেট লোকদেরকে গোয়েন্দাদের মতো প্রশ্ন করে, এখানে বসে কী করেন? এরপর পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখায়। এছাড়া অশ্লীল কথাও বলে। এধরনের কথা বলে বিব্রত করার চেষ্টা করে বলে জানান রেজাউল কবির।

কথার ফাঁকে জটলা পাকিয়ে নারী-পুরুষের সঙ্গে থাকা মোবাইল মানিব্যাগ কেড়ে নেয়। এরপর কোনোদিকে না তাকিয়ে ব্রিজ থেকে নেমে যেতে বলে। এরপর ভুক্তভোগীরা ব্রিজের যেদিক দিয়ে নেমে যায়, ছিনতাইকারীরা তার ঠিক বিপরীত দিক দিয়ে পালিয়ে যায়।

একই অভিজ্ঞতার কথা জানান গার্মেন্টস কর্মী জয়নাল। তিনি বলেন, ‘এরা দলবদ্ধ হয়ে  ছিনতাই করে। তাদের সঙ্গে ছুরি-চাকু থাকে। এগুলো দিয়ে ভয় দেখায়। বাধ্য হয়ে সবকিছু দিয়ে তাদের হাতে তুলে দিয়ে ছাড়া পেতে হয়।’

হাতিরঝিলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নিজস্ব সিকিউরিটি গার্ড রয়েছে। ‘রেড ফোর্স’ নামের একটি সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন। প্রতিদিন দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করেন তারা। সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ও সন্ধা ৭টা থেকে সকাল ৭টা। দিনের শিফটে গড়ে ৩০-৩৫ জন এবং রাতের শিফটে ৪০-৪৫ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত থাকেন।

তারা মাঝে মাঝে ছিনতাইয়ের খবর পান বলে জানান অন্তত ১০ জন সিকিউরিটি গার্ড। তারা বলেন, ‘আমাদের সামনে এধরনের কিছু ঘটতে দেওয়া হয় না। কিন্তু হাতিরঝিল এলাকায় সব স্থানে সিকিউরিটি গার্ড না থাকায়, কিছু স্থানে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ হয়ে থাকে।’

চারটি ওভারব্রিজের ওপরে হাতিরঝিলের কোনও সিকিউরিটি গার্ড থাকে না বলে জানিয়েছেন ‘রেড ফোর্স’র একাধিক গার্ড। সিকিউরিটি গার্ড রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দুই শিফটে ডিউটি থাকে ব্রিজের নিচে। আর সাধারণ মানুষের পায়ে হেঁটে ব্রিজের ওপরে ওঠা নিষেধ। এ কারণে ওপরে কোনও সিকিউরিটি থাকে গার্ড না।’

নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সাধারণ জনগণ কিভাবে ব্রিজের ওপর ওঠেন, এমন প্রশ্নের সঠিক কোনও জবাব দিতে পারেননি তারা। নিরাপত্তা কর্মীরা বলেন, ‘আমরা তো সবাইকে নিষেধ করি। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনে না।’ তাই  ঝামেলা এড়াতে এখানে ঘুরতে আসা লোকজনের সঙ্গে তর্কে জড়ান না এখানকার নিরাপত্তা কর্মীরা। যারা ব্রিজের ওপরে উঠেন, তারা নিজেদের রিস্কে ওঠেন বলে জানান নিরাপত্তা কর্মীরা ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার একজন এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত টহল চলে। ব্রিজের ওপরে পায়ে হেঁটে চলা নিষেধ। এছাড়া গাড়ি পার্ক করাও নিষেধ। কিন্তু কোনও নিষেধাজ্ঞাই কেউ মানে না। অবৈধভাবে তারা সেখানে অবস্থান করেন। টহল না থাকলে ব্রিজগুলো অরক্ষিত থাকে। ফলে যেকোনও দুর্ঘটনাই ঘটতে পারে। নিষিদ্ধ এলাকায় অবস্থান না করলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।’

ছিনতাই ও হাতিরঝিলের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছু ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসে। কিন্তু সেটার পরিমাণ খুব বেশি না। হাতিরঝিলে আমাদের নিয়মিত টহল অব্যাহত আছে।’

 

/আরজে/এপিএইচ/ আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী