X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তবু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন জীবনের আলো

নাসিরুল ইসলাম, কক্সবাজার থেকে
১০ অক্টোবর ২০১৭, ০৯:১১আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:১১

নতুন জীবনের স্বপ্ন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে ছেড়ে এসেছেন নিজের দেশ, নিজের গ্রাম। কোনোমতে জীবনটাই কেবল নিয়ে আসতে পেরেছেন বাংলাদেশে। ঘর-বাড়ি,সহায়-সম্পদ, যতটুকু সঞ্চয়— তার কিছুই তারা আনতে পারেননি সঙ্গে। তাদের অনেককেই চলে আসতে হয়েছে সম্পূর্ণ এক কাপড়ে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীসহ সরকারি বাহিনীর নৃশংসতার মুখে যে জীবনকে পেছনে ফেলে এসেছেন রোহিঙ্গারা, তার সঙ্গে ফেলে আসতে হয়েছে ভিটেমাটির টানও। দরিদ্র হলেও হয়তো সেখানে তাদের ছিল কুঁড়ে ঘর। কিন্তু জীবন চলে জীবনের নিয়মেই। তাই প্রাণ বাঁচাতে সব সম্পদ ফেলে বাংলাদেশে এসে তাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্পে। এখন নতুন আশা নিয়ে, নতুন জীবনের আলোর সন্ধানেই দিনযাপন রোহিঙ্গাদের।

নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নতুন করে গড়তে হয়েছে ঘর কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশের। নৃশংস নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের মুখে পালিয়ে এসে তারা নতুন জীবন পেয়েছেন এসব ক্যাম্পে। হয়তো ত্রাণ সহায়তাতেই চলছে তাদের জীবন, তবু রাখাইনের বঞ্চনা আর নিষ্পেষণের বিপরীতে এখানে ভালোই আছেন রোহিঙ্গারা। অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তেমন কথাই জানালেন বাংলা ট্রিবিউনকে।

রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারে তারা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো কোনও মৌলিক সেবাই মিলত না রোহিঙ্গাদের। তাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতিটুকুও কেড়ে নেয় মিয়ানমার সরকার। অথচ সব অধিকার থেকে বঞ্চিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রিত হিসেবেও পাচ্ছেন খাদ্য, চিকিৎসাসেবা, বাসস্থানের সুবিধা। তাতেই খুশি তিন সন্তানের জনক ইয়াসিন (৩৫)।

দুপুরের খাবারের পর সন্তানদের দেখভাল করছেন এক রোহিঙ্গা নারী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে মিয়ানমারের সঙ্গে এখানকার নিত্যপণ্যের দামের পার্থক্যটাও তুলে ধরছেন। সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের জীবনমানেও যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, সেটাও মেনে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে সস্তা বলে জানান রোহিঙ্গারা রোহিঙ্গারা জানালেন, বাংলাদেশে যে মুরগি তারা কিনছেন ১৪৫ টাকায়, রাখাইনে তার জন্য তাদের খরচ করতে হতো ১০ হাজার কিয়াত বা বর্মি টাকা। সেখানে এক কেজি চালের দাম ৫শ’ কিয়াত, এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৫শ’ কিয়াত, পৌনে দুই কেজি গরুর মাংসের দাম ১২ হাজার কিয়াত। রাখাইনে যেকোনও মাছের দামই কেজিতে ৫ হাজার বর্মি কিয়াত, ইলিশের কেজি ১০ হাজার কিয়াত। সাধারণ শাক-সবজিও রোহিঙ্গা দিনমজুরদের নাগালের বাইরে।

জানা গেল, রাখাইনে একজন সাধারণ দিনমজুরের মজুরি দিনে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার বর্মি কিয়াত। আর মাদ্রাসার একজন শিক্ষকের মাসিক বেতন ৪০ থেকে ৫০ হাজার বর্মি কিয়াত। অন্যান্য চাকরির সুযোগও তেমন নেই তাদের জন্য।

গ্যাসের চুলায় রান্না করা ভাত, মাছ, শাক ও ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন মো. শোয়েব ঠ্যাংগাখালির ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মো. শোয়েবের এক রুমের ঘরে রয়েছে গ্যাসের চুলা। সাড়ে চার হাজার টাকায় তিনি কিনেছেন একটি চুলা ও গ্যাসের সিলিন্ডার। রাখাইনে কখনও গ্যাসের চুলা ব্যবহার করেননি তিনি। জানালেন, দুপুরের খাবারে ভাতের সঙ্গে রয়েছে মাছ, শাক ও ডাল।

ছয় সন্তানের জননী মমতাজ বেগম দুপুরের রান্নায় ব্যস্ত শোয়েবের পাশের ঘরেই থাকেন মমতাজ বেগম। ছয় ছেলেমেয়ে নিয়ে তার বড় সংসার। তার ঘরে দুপুরে ভাতের সঙ্গে রান্না হয়েছে আলু দিয়ে ছোটমাছ, সবজি ও ডাল।

হামিদুরের হাতে দুই রকমের মাছ, অন্য হাতে করলা ও পুঁইশাক বিকালে ক্যাম্পের মধ্যে হাঁটার সময় দেখা মেলে ১০ বছর বয়সী হামিদুর রহমানের। তার হাতে দুই রকমের মাছের একটি ব্যাগ, সঙ্গে করলা ও পুঁইশাক। মা-বাবাসহ তাদের ৯ জনের সংসার।

সন্তানদের নিয়ে ব্রয়লার মুরগি পরিষ্কার আমেনা আরেকটু ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ব্রয়লার মুরগি পরিষ্কার করছেন এক রোহিঙ্গা নারী। ছয় সন্তানের জননী ওই নারীর নাম আমেনা। জানালেন, ২০৫ টাকায় কিনেছেন মুরগিটি।

পর্দা সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে ৯ বছরের মায়া পাশের ঘরটি বেশ পরিপাটি করে গোছানো। একটি ঘরের ভেতরে ছোট ছোট আরও তিনটি রুম। প্রথম ঘরে কয়েকটি লাল রঙের প্লাস্টিকের চেয়ার, দরজায় চাদরকে পর্দা বানিয়ে ঝোলানো হয়েছে। পর্দা সরিয়ে ৯ বছরের এক মেয়ে উঁকি দিলো। তার নাম মায়া। তার মা সুনসুননাহার, বাবা মো. বাকের। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে মায়া তৃতীয়।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এভাবে সারি সারি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। সব হারানো এসব মানুষের চোখেও যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন।

/টিআর/টিএন/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন