X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাবা আমাদের জন্য ঘড়ি এনেছিলেন’

উদিসা ইসলাম
১৭ মার্চ ২০১৮, ১১:৫৫আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৮, ১৩:৪২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার বিদেশ সফরে গিয়ে বড় মেয়ে শেখ হাসিনার জন্য উপহার হিসেবে ঘড়ি এনেছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়তেন। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘লেখাপড়া শেখতে হবে এই চিন্তা ছিল। আমি যখন ক্লাস ফোর কী ফাইভে পড়ি। তখন বাবা বিদেশে গিয়েছিলেন। তিনি আমাদের দুই ভাই-বোনের জন্য ঘড়ি এনেছিলেন। শখ করে সেই ঘড়ি পরে স্কুলে গেছি। টিচার আলাদাভাবে ডেকে বললেন- তুমি যে ঘড়ি পরে আসলে, অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের ঘড়ি কিনে দিতে পারেন না। তোমার হাতে ঘড়ি দেখলে তাদেরও ঘড়ি পড়ার শখ হতে পারে, চাইতেও পারে। কিন্তু তাদের বাবা-মা দিতে পারবে না, তাদের মনটা তো তখন খারাপ হবে। তোমার কি ঘড়ি পরে আসা ঠিক হলো?’

এ ঘটনার পর থেকে আর কখনও স্কুলে ঘড়ি পরে যাননি বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমি আর কখনোও স্কুলে ঘড়ি পরিনি। সেখান থেকে আমি কী শিখলাম, স্কুল-কলেজে যেখানেই পড়াশোনা করি, আমার পোশাক-পরিচ্ছদ সাধারণ থাকতে হবে যাতে সেখানকার আর পাঁচ জনের সঙ্গে মিলিয়ে চলতে পারি। আমার বাবা-মাও সবসময় একটা কথা বলতেন, তা হলো- তোমরা নিচের দিকে তাকাবে। তোমার চেয়ে খারাপ যে আছে, তার অবস্থা দেখো। তাহলে তুমি মনে করবে তুমি অনেক ভাল আছো। ওপরের দিকে তাকিও না। তাহলে তোমার মন লোভী হবে না, কখনও বিপথে যাবে না।’

বাবার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (ছবি-সংগৃহীত)

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বিটিভিতে ‘আমাদের কথা’ নামের এক অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেশিরভাগ সময় কারাগারে থাকার কারণে দাদা-দাদির তত্ত্বাবধানে গ্রামের বাড়িতে শৈশবের দিনগুলো কীভাবে কেটেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার? কেমনইবা ছিল কৈশোরের স্কুলের দিনগুলো? সেসব নিয়ে তিনি দেশে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিশুদের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা ইউনিসেফের তৎকালীন কমিউনিকেশন অফিসার বলছেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী জানতেনও না কী ধরনের প্রশ্ন সেদিন শিশুরা করবেন তাকে। ১৭ মার্চ শিশু দিবসকে সামনে রেখে আয়োজনটি করা হয়।’

বিটিভির অনুষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিটিভিতে ‘আমাদের কথা’ নামের সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের সঙ্গে নিজের শৈশবের স্মৃতি শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমি গ্রামে থাকতাম। কারণ আমার বাবা যেহেতু রাজনীতি করতেন, জেলেই কাটাতে হতো। দাদা-দাদির কাছে থাকতাম। গ্রামে থাকা এখনও ভাল লাগে। ছোটবেলা সেই খালে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটা, গামছা ধরে ধরে মাছ ধরা, তেঁতুল গাছ থেকে তেঁতুল পেড়ে খাওয়া, এগুলো মজা লাগত। কাঁচা আম... তোমরা তো বোধহয় এসব দেখোও নাই। দেয়ালে ঝিনুক ঘষলে সুন্দর গর্ত হয়, খুব ধার। ঝিনুক দিয়ে আম ছিলে ছিলে পাতলা করে কেটে কাঁচা মরিচ দিয়ে মাখিয়ে খুব মজার খাবার.. আমরা খুব খেতাম।’

তিনি আরও বলেন,‘ গ্রামে থাকলে খুব মজা ছিল। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাইবোনেরা হেঁটে সোজা নদীর পাড়ে চলে যেতাম। শীতের সকালে নদীর পানি কুসুম কুসুম গরম থাকে, একদম ঠাণ্ডা থাকে না। নৌকায় করে ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে অনেক দূর চলে যেতাম। আরেকটা মজা আছে কচুরিপানা টেনে টেনে মাছ ধরা। মাছ ধরতাম। আমরা যখন ঢাকায় থাকতাম, তখনও বছরে দুই বার গ্রামে যাবই। বড় বড় গাছ, বরই-তেঁতুল, বৈচির ঝাড় ছিল, বেতফল পেড়ে খাওয়া কী মজা। আমরা খেতাম। আমাদের ছোটবেলা গ্রামের স্মৃতিটাই আনন্দের। গ্রামই বেশি পছন্দ করতাম।’

স্কুলে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রামটার চারদিকে পানি, নদী-খাল-বিল। খালের ওপরে পুল ছিল, ওপারে প্রাইমারি স্কুল। আমি একদিনই যেতে পেরেছি। পুলের ওপর দিয়ে যেতাম, দাদির চিন্তা ছিল আমি পানিতে পড়ে যাব। একদিন দুই দিন যাওয়ার পর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। তারপর বাড়িতেই মাস্টার-পণ্ডিত-হুজুর রাখা হতো, বাড়িতে পড়াতেন তারা। পরে ঢাকায় স্কুলে ভর্তি হলাম।’

নিজের বাল্যস্মৃতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘ছোটবেলা হাঁড়ি-কলস, ছোট চুলা সব ছিল, দাদি সব রেডি করে রেখে দিত। আমরা রান্নাবান্না খেলতাম। কলাগাছের পাতায় ভাত রান্না করতাম, সবাই মিলে পিকনিক করে খাওয়ার আলাদা মজা। কাঁচামরিচ দিয়ে আম মেখে কলাপাতার চোঙা করে.. ওই চোঙা দিয়ে ফোটা ফোটা করে রস খাওয়া খুব মজা লাগতো। ছোটবেলার স্মৃতিটাই সুন্দর।’

বিটিভির সেই অনুষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি-সংগৃহীত)

দাদা-দাদির কাছে সাত খুন মাফ হলেও মায়ের শাসনেই থাকতে হতো বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা থাকলে অবশ্য মাঝে মাঝে বকা খেতে হতো। একদিন আমরা খালের মধ্যে খুব ঝাঁপাচ্ছি। এর মধ্যে ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি। মা ডেকে পাঠাচ্ছে। আসতে দেরি করেছি। মা তো পাঙ্খার ডাঁটি নিয়ে রেডি। আরেকবার মনে আছে বরই খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূর চলে গিয়েছি, অন্য গ্রামে চলে গেছি। অনেক ভাল বরই নিয়ে আসছি খেতে খেতে। এরই মধ্যে খবর এসেছে মা খুঁজে বেড়াচ্ছে। কারণ সকাল বেলা বেড়িয়ে চলে গেছি, তাই মা খুঁজছে। ভয়ে অস্থির, আজকে তো মার হাতে পাঙ্খার ডাঁটির বাড়ি কপালে আছে। কারণ এই সাত সকালে খালি পেটে বরই খাচ্ছি। এইটাই হচ্ছে বড় অপরাধ। অতগুলি বরই ফেলতেও পারছি না। গোগ্রাসে গিলছ। কতো খাওয়া যায়! আশেপাশে যারা আছে তাদেরও দিয়ে যাচ্ছি। কী যে দুঃখ, সব খেয়েও শেষ করতে পারছি না আবার বাড়ি গেলে তো মা দিবে বকা, কারণ সকাল বেলা বের হয়েছি বাড়ি থেকে, কোনও খাওয়া নাই দাওয়া নাই, নাস্তা খাইনি, কিছু খাইনি, খালি পেটে বরই খাচ্ছি।’

ছোট বেলায় খেলার মাঠ থাকা এবং এখন শহরে মাঠ না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন এতো কমার্শিয়াল চিন্তা যে, খেলার মাঠ থাকলেও কীভাবে সেটা হাত করে নিয়ে বাড়ি দালান-কোঠা বানানো যায় সেই তালে থাকে সবাই। আমরা যে সুযোগ ছোটবেলায় পেয়েছি; শহরের যারা, তারা এখন তা পায় না। ফার্মের মুরগির মতো বাচ্চাদের পালছে। কেউ আমাদের বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে না।’

ছোটবেলার দুষ্টুমির ফাঁকে স্কুল মিস দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী হেসে বলেন, ‘স্কুলে না গেলেই খারাপ লাগতো। বন্ধু-বান্ধবরা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে খেলতাম। বন্ধুদের সাথে খেলা, দোলনায় চড়া, এগুলো তো আলাদা মজা। স্কুলে না গেলে তো ভাল লাগতো না। আমাদের স্কুল এখনকার ছোট ঘরের মতো না। যে স্কুলেই পড়েছি- খেলার মাঠ ছিল। টিকাটুলিতে শেরে বাংলা স্কুল, সেখানে পড়তাম। এরপর আজিমপুর গার্লস স্কুলে। বিশাল মাঠ। অনেক দোলনা। যখন একটু বড় হলাম ওড়নাটাকে পেঁচিয়ে ক্লাসরুমে একটু হা-ডু-ডু খেলে নিলাম। যতটুকু সময় পেতাম আমরা খুব খেলতাম, দৌড়াতাম। এখনকার বাচ্চাদের জন্য কষ্ট হয়। স্কুলে খেলার মাঠ নেই। ’

শিশুদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করেছিলেন ২০০৯ সালে ইউনিসেফ এর কমিউনিকেশন বিভাগের ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা আরিফা শারমিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। পলিসি মেকারদের সঙ্গে শিশুদের যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং তারা নিজেদের বিভিন্ন ইস্যুতে যাতে প্রশ্ন করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন শিশুরা এসেছিল তেমনই অংশগ্রহণকরীদের কেউ কেউ শ্রমিক শিশু, বস্তির শিশুও ছিল।’  

 

 

/ইউআই/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!