X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় অধ্যাপক নেই দুই বছর

এমরান হোসাইন শেখ ও এসএম আব্বাস
২৩ মার্চ ২০১৮, ০৯:৫২আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৮, ১১:২৭

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগে তিন বছর আগে কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত বৈঠকেই বসেনি ওই কমিটি। চার সদস্যের নির্বাচনি ওই কমিটির কোনও কোনও সদস্য জানেনই না কমিটি গঠনের বিষয়। দুই বছরে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে পদটি শূন্য রয়েছে।

সবশেষ নিয়োগ পাওয়া পাঁচজন জাতীয় অধ্যাপকের তিনজন মেয়াদ চলাকালীন মারা গেছেন। বাকি দুজন মেয়াদ শেষ করেছেন প্রায় দুই বছর আগে। ফলে দেশে বর্তমানে কোনও জাতীয় অধ্যাপক নেই। জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে। শিগগিরই কমিটি বৈঠকে বসবে।

সর্বশেষ ২০১১ সালের জুন মাসে পাঁচজন শিক্ষাবিদকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ না হতেই তাদের মধ্যে তিনজন মারা যান। বাকি দুজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের জুনে।

‘জাতীয় অধ্যাপক’ বাংলাদেশের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, যা বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার জন্যে দেশের বিশিষ্ট পণ্ডিত, চিন্তাবিদ ও শিক্ষকদের দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে এই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তি জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্তি পেয়ে থাকেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে মেয়াদ আরও দীর্ঘ হতে পারে। পুনর্নিয়োগের ব্যবস্থা আছে। জাতীয় অধ্যাপকদের কিছু শর্ত মানতে হয়।

শর্তগুলো হলো— জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে তারা সরকারের দেওয়া নির্ধারিত হারে সম্মানী ভাতা পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে তারা এ ভাতা পাবেন। তারা ইচ্ছানুযায়ী কোনও গবেষণা সংস্থা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে নিজের পছন্দমতো ক্ষেত্রে গবেষণামূলক কাজ করতে পারবেন। তবে যে ক্ষেত্রে কাজ করবেন তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জানাতে হবে। তারা যে শিক্ষা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত থাকবেন সে প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের শিক্ষা বা গবেষণামূলক কাজের বার্ষিক প্রতিবেদন দেবেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে তাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাবে। তারা যে শিক্ষা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকবেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বা গবেষণামূলক কাজ করার সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ পদে থাকাকালীন তাদের যেসব বইপুস্তক ছাপানো হবে, তা থেকে পাওয়া সব সুযোগ-সুবিধা তারা নিতে পারবেন। এ পদে থাকাকালীন তারা সরকারের অনুমতি নিয়ে বিদেশে যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করতে পারবেন। জাতীয় অধ্যাপক পদে থাকাকালীন তারা অন্য কোনও বেতনভুক্ত চাকরি করতে পারবেন না। যদি করেনও, তবে ওই চাকরি থেকে কোনও বেতন বা আর্থিক সুবিধা নিতে পারবেন না। তারা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন না।

জাতীয় অধ্যাপক (নিয়োগ, শর্তাবলী ও সুবিধা) সিদ্ধান্তমালা ১৯৮১ (সংশোধিত) অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগে বাছাই করে। শিক্ষামন্ত্রী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক মন্ত্রী ও সাবেক জাতীয় অধ্যাপক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষাবিদদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত ও মনোনয়ন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দেন।

সবশেষ ২০১৫ সালের ১৮ মে কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষামন্ত্রীকে সভাপতি করে গঠিত ওই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ২০১৫ সালে নতুন কমিটি গঠন এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে সবশেষ নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপকদের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।

তবে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়া ‍শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে তারা নাম প্রস্তাবের সুপারিশ করতে চিঠি দিয়েছে। শিগগিরই নির্বাচনি কমিটির বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।

অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের উদ্যোগের কথা জানালেও এ বিষয়ে অবহিত নন কমিটির সদস্যরা। এমন কমিটি আদৌ গঠন হয়েছে কিনা, তা মনে করতে পারেননি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি এই কমিটির সদস্য কিনা সেই তথ্য তার কাছে নেই। আর গত দুই-তিন বছরে এ ধরনের কোনও বৈঠক হয়েছে বা তাকে ডাকা হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর এ ধরনের কোনও বৈঠকের আমন্ত্রণ পাননি। তবে কমিটির সদস্য যেহেতু তিনি রয়েছেন, নিশ্চয়ই সময়মতো বৈঠক হবে। জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করা হবে।’

এ পর্যন্ত যারা জাতীয় অধ্যাপক

১৯৭৫ সালে জাতীয় অধ্যাপক পদটি প্রবর্তন করার পর থেকে এ পর্যন্ত ২২ জনকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৭ মার্চ প্রথম তিনজনকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেন। তারা হলেন শিল্পাচার্য  জয়নুল আবেদীন, জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন। এরপর ১৯৮৪ সালে মোহাম্মদ ইব্রাহিম; ১৯৮৭ সালে নুরুল ইসলাম, আবুল ফজল ও সৈয়দ আলী আহসান; ১৯৯৩ সালে শামস-উল-হক, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ,  এম ইন্নাস আলী; ১৯৯৪ সালে এম আর খান ও সুফিয়া আহমেদ, ১৯৯৮ সালে কবীর চৌধুরী, ২০০৬ সালে আবদুল মালিক, একেএম নুরুল ইসলাম, একেএম আমিনুল হক ও তালুকদার মনিরুজ্জামান এবং ২০১১ সালে সরদার ফজলুল করিম, এ. এফ. সালাহউদ্দিন আহমেদ, রঙ্গলাল সেন, মুস্তাফা নূরুউল ইসলাম ও শাহেলা খাতুন জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান।

 

 

/এইচআই/আপ-এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!