সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। দিনের শুরুতেই মুসল্লিরা ঈদের জামাতে অংশ নিতে ছুটছেন ঈদগাহের পথে।
পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে শুক্রবার সন্ধ্যায়। আজ শনিবার (১৬ জুন) পালিত হচ্ছে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।
সারাদেশে ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের জামাত। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে দেশের প্রধান ঈদ জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত নামাজে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। তবে বড় ধরনের কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিচারপতি, কূটনীতিক, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেবেন।
রাষ্ট্রপতিসহ বিশিষ্টজনেরা ঈদগাহে প্রবেশ করবেন হাইকোর্ট সংলগ্ন গেট দিয়ে। সর্ব-সাধারণের জন্য খোলা রয়েছে ঈদগাহ ময়দানের মূল গেট। নারীরা প্রবেশ করবেন পূর্ব দিকে পানির পাম্প সংলগ্ন গেট দিয়ে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের শামিয়ানার ভেতরে ৮৫ হাজার পুরুষ ও পাঁচ হাজার নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। দুই লাখ ৬০ হাজার বর্গফুটের জাতীয় ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নজরদারি। জাতীয় ঈদগাহে প্রবেশের সময় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর মুসল্লিদের আর্চওয়ের ভেতর আসছেন মুসল্লিরা। জায়নামাজ ও ছাতা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না মুসল্লিরা। জাতীয় ঈদগাহ ছাড়াও বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদের ঈদ জামাতকে ঘিরে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে,জাতীয় ঈদগাহের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় রয়েছে। ঈদগাহের নিরাপত্তায় সোয়াত,বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডও রয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাতে অংশ নিতে আসছেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। লাইন ধরে নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে ঈদগাহে প্রবেশ করছেন শত শত নারী-পুরুষ।
রাজধানীর মগবাজার থেকে এসেছেন তাসলিমা আক্তার। সঙ্গে তার দুই মেয়ে নাজমা সুলতানা ও আফরিন সুলতানা। আসলিমা আক্তার বলেন, ‘মেয়েদের অনেকে দিনের ইচ্ছে ছিল জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়ার। তাই তাদের নিয়ে আসলাম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে লম্বা লাইন ধরে আসতে হয়েছে। তবুও এত মানুষের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে পারবো, এটাই অন্য রকম আনন্দ।’
মিরপুর থেকে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছেন ওবায়দুল আলম। তিনি বলেন, ‘ছোট ছেলেদের নিয়ে এসেছি। সমস্যা হচ্ছে অনেক দূরে গাড়ি পার্কিং করে দীর্ঘ লাইন ধরে আসতে আসতে বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। তবুও অনেক মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়া, কোলাকুলি করা, আনন্দ করার জন্য আসা।’
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রথম জামাত সকাল ৭ টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ জামাতের ইমামতি করছেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়,দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম। তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, এ জামাতের ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মুফতি মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান। চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায়, এ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মাওলানা জুবাইর আহাম্মদ আল আযহারী। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে, এ জামাতে ইমামতি করবেন তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলানা মুশতাক আহমাদ।
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এবছর মোট ৪০৯টি স্থানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ৮টায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল ৮টায় এবং ৯টায় দুটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামবাগ ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৭টায়, সকাল ৮টা, ৮টা ৪৫ মিনিটে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামি পরিভাষায় ঈদের এর অর্থ হলো পুরস্কারের দিবস। দীর্ঘ একমাস সংযম পালনের পর মুসলমানরা এ দিনে আনন্দ করেন। হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী রমজান শেষ হলেই শুরু হয় শাওয়াল। উৎসব হিসেবে ঈদুল ফিতর পালন করা হয় এ মাসের প্রথম দিনে।
ছবি- সাজ্জাদ হোসেন