X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৮ বৈশাখ ১৪৩১

এবার সার্বিক ফলে ধস

এস এম আববাস ও রশিদ আল রুহানী
২০ জুলাই ২০১৮, ০১:৩০আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৮, ০১:৩৮

বৃহস্পতিবার প্রকাশ হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার ফল উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় সার্বিক ফলে এবার ধস নেমেছে। পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন, খাতা মূল্যায়ন, পরীক্ষা হলে কড়াকড়ি আরোপ এবং ইংরেজি, আইসিটি ও বিজ্ঞানে খারাপ করায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দাবি— বিজ্ঞানে জোর দিতে গিয়ে মানবিকে ফল বিপর্যয় হয়েছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে বিজ্ঞানের ফলই বেশি খারাপ। আর ধারাবাহিকভাবে ফল নিম্নমুখী হলেও শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতেই এমনটা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) প্রকাশ হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। গত কয়েক বছরে সার্বিক ফল নিম্নমুখী হওয়ায় এবার ফলাফলের ধস নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার দশ শিক্ষাবোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ১৬ হাজার ২৫ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন। এর মধ্যে পাস করে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে পাসের হার ২ দমমিক ২৭ শতাংশ কম। গত বছর পাসের হার ছিলো ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।

একইভাবে ২০১৭ সালে আগের বছরের (২০১৬) তুলনায় পাসের হার কম ছিলো। ২০১৬ সালে পাসের হার ছিলো ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। তা ৫ দশমিক ৭৯ শতঅংশ কমে পরের বছর ২০১৭ সালে হার দাঁড়ায় ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত দুই বছরে পাসের হার কমেছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।

১০টি শিক্ষাবোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন। যা গতবারের চেয়ে ৮ হাজার ৭০৭ জন কম। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। ২০১৬ সালের চেয়ে জিপিএ-৫ ২০১৭ সালে কমেছিলো ২০ হাজার ৩০৭ জন।     

আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবারও পরীক্ষার্থী বেড়েছে। তবে পাসের কমেছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে কমেছে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও পরীক্ষরার্থী বেড়েছে। তবে পাসের হার কমেছে। ২০১৭ সালে পাসের হার কমেছিলো ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫৬২ জন। যা গত বছরের তুলনায় ৭ হাজার ৬৮০ জন কম। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ৩৩ হাজার ২৪২ জন।

এবার কারিগরিতে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ। যা গতবারের চেয়ে কমেছে ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিলো ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কারিগরিতে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৪৫৬ জন। যা গত বছরের চেয়ে ২১৩ জন কম। গত বছর ছিলো ২ হাজার ৬৬৯ জন।

বিদেশের কেন্দ্রগুলোতে এবার ফল ভালো হয়নি। বিদেশে ৭টি কেন্দ্রের পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। এ বছর পাসের হার ৯২ দশমিক ২৮। গত বছর এই হার ছিল ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ।  এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ জন। গত বছর জিপিএ-৫ ছিল ৪৬ জনের।

শুধুমাত্র মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে এখানেও কমেছে জিপিএ-৫।

এ বছর বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য গ্রুপে পাসের হার ৭৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে কম ৪ শতাংশ। গত বছর ছিলো ৮৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। মানবিক, ইসলাম শিক্ষা ও সঙ্গীতে পাসের হার ৫৬ দশমিক ৪৬ শতাং, যা গত বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম। গত বছর ছিলো ৫৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। ব্যাবসায়ে শিক্ষায় পাসের হার  ৬৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ১ দশমিক ১ শতাংশ কম। গত বছর ছিলো ৬৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।  মানবিক গ্রুপের ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে ফল খারাপ হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে। এছাড়া বিজ্ঞান গ্রুপে সারাদেশেই ফল গত বছরের তুলনায় খারাপ। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলে।

ফল ধসের কারণ হিসেবে শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন— পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন, পরীক্ষা হলে কড়াকড়ি আরোপ, প্রশ্নফাঁস না হওয়া, খাতা মূল্যায়ন, গুণগত মানের দিকে নজর দেওয়া। এছাড়া ইংরেজি, আইসিটি ও বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোতে পাসের হার কমে যাওয়ায় ফলে ধস নেমেছে।

জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরি বলেন,  ঘনঘন পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণে ফেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। বাড়ছে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এদের অনেকে হয়তো আবারো পরীক্ষা দেবে, আবার অনেকে ঝরে পড়বে।’

এইচএসসি পরীক্ষার ফলে ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে ফেলের সংখ্যা বেশির বিষয়ে তিনি বলেন,  সকল বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সমান সুবিধা পাচ্ছে না। শিক্ষক সংকট, ভালো শিক্ষকের অভাবসহ নানা সমস্যার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের সন্তানদের মেধাবী হিসেবে তৈরি না করতে পারলে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। অধিকাংশ বোর্ডে ইংরেজি, আইসিটি ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ফল খারাপ হয়েছে। কেনও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। পাশাপাশি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো শিক্ষক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকট কাটাতে সরকারি উদ্দোগে একটি শিক্ষা চ্যানেল চালু করা দরকার।’

তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফল বিপর্যয় মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা গুণগত মানের দিকটায় গুরুত্ব দিচ্ছি। ক্লাস নেওয়া, ভালোভাবে পরীক্ষা নেওয়ার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ঠিকভাবে খাতা দেখার দিকে নজর দিচ্ছি। যা বাস্তব, যা সত্য সেই ফল বেরিয়ে আসছে। আমরা কাউকে নম্বর বাড়িয়ে দিতে বলি না, কমাতেও বলি না। আমরা শিক্ষকদের বাধ্য করছি সঠিক মূল্যায়নের।’

পাসের হার কমার বিষয়টি ইতিবাচক মন্তব্য করে বুয়েট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ফেল করলে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ বাড়বে। তাই উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষা প্রশ্ন আরও কঠিন হওয়া দরকার। তবেই শিক্ষার্থীরা কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারবে।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবার ফলাফল তুলনামুলক খারাপ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হল— পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন, নতুন ব্যবস্থাপনার ফলে প্রশ্নফাঁস না হওয়া, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া। এছাড়া ইংরেজি, আইটি, পদার্থ, রসায়নসহ বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে ফল খাপার হওয়ার কারণে সার্বিক ফলে প্রভাব পড়েছে।

 

/জেজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক মোটরসাইকেলে ৩ ব্যবসায়ী, কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেলো দুজনের
এক মোটরসাইকেলে ৩ ব্যবসায়ী, কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেলো দুজনের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছরই শেষ অ্যান্ডারসনের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছরই শেষ অ্যান্ডারসনের
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ কাদের মির্জার
উপজেলা নির্বাচনতার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ কাদের মির্জার
সর্বাধিক পঠিত
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, তুলছেন ভ্রমণ বিলও
সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, তুলছেন ভ্রমণ বিলও
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র