মাঠপর্যায় থেকে এবার কোরবানির পশুর চামড়া কিনে বিপদে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন রাজধানীর অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী বা ফড়িয়ারা। বিশেষ করে যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী সাতশ’ টাকার বেশি দামে চামড়া কিনেছেন, তারা পাইকারের কাছে বেশি দামে তা বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া কিনে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের মুখ দেখার আশঙ্কা করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকে।
এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় বাবুল মোল্লাহ নামের একজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি জানান, মিরপুর এলাকা থেকে প্রায় দেড় হাজার পিস চামড়া কিনেছেন। এরপর তা বিক্রি করতে তিনি লালবাগের পোস্ত এলাকার পাইকারদের কাছে যান। কিন্তু পাইকাররা গড়ে সাতশ’ টাকার বেশি দাম হাকছেন না।
চামড়ার দামের প্রসঙ্গে বাবুল মোল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন রাত ৯টারও বেশি। অথচ পাইকাররা দামই বলছেন না। আমরা বেশ কিছু চামড়া আটশ’ থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। অথচ পাইকাররা সাতশ’ টাকার বেশি দিতে চাচ্ছে না।’ এভাবে চামড়া বিক্রি করতে হলে প্রায় তিন লাখ টাকা তার লোকসান হবে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
কেবল বাবুল মোল্লাহ নয়, তার মতো চামড়া কিনে বিপদে পড়েছেন ইব্রাহিম খান নামের আরেকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী। মগবাজার এলাকা থেকে চামড়া কিনেছেন তিনি। ইব্রাহিম খান জানান, তার মতো শত শত মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চামড়ার বাজার এখন একেবারেই ভালো না। যে কারণে চামড়ার দাম কমে গেছে।’ বিগত তিন দশক পর এখন চামড়ার দাম সর্বনিম্ন বলেও জানান তিনি।
এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব ও আজিমপুরে দেখা যায়- চামড়া বেচাকেনা চলছে। মূলত পোস্তার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকেরা এসব অস্থায়ী হাটে চামড়া কিনছেন। লালবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ কোরবানির পশুর চামড়া কেনায় ব্যাপারে আগ্রহ কম আড়তদারদের।
এর আগের ঈদের সময় দেখা গেছে, সাধারণত ঈদের দিন দুপুর থেকেই পাইকাররা তৎপর হন; বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে ঘুরে তারা মৌসুমি ব্যবসায়ীরে কাছ থেকে চামড়া কিনে নেন। কিন্তু এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা চামড়া নিয়ে পাইকারের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের যেহেতু কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের সুযোগ থাকে না, তাই তারা যতটা দ্রুত সম্ভব তা আড়তারদদের হাতে তুলে দিতে চান। কারণ, রাত ১২টার পর থেকে লবণ লাগানো শুরু না হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। আড়তদাররা কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করেন। পরে তাদের কাছ থেকে সেই চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা।
এদিকে চামড়ার দামের ব্যাপারে আড়তদাররা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা তাদেরকে গড়ে প্রতি পিস চামড়া এক হাজার টাকার কমে কিনতে বলেছে।
এ প্রসঙ্গে পোস্ত এলাকার চামড়ার আড়তদার মকবুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবছর আকার ও মানভেদে সবচেয়ে ভালো গরুর চামড়া আটশ’ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। তবে যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকায় চামড়া কিনেছেন, তারা ফুরফুরে মেজাজে আছেন।’
জানা গেছে, অনেক ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ী এবার গড়ে পাঁচশ’ টাকায় চামড়া কিনেছেন। আর রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে গড়ে চারশ’ টাকায়।
রাজধানীর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ১২ থেকে ২৫ বর্গফুটের প্রতিটি চামড়া সাতশ’ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পরামর্শ দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। আর ঢাকার বাইরে এই সাইজের চামড়া তিনশ’ থেকে নয়শ’ টাকার মধ্যে কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা; ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা; ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।