X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জোট গঠন রাজনৈতিক কৌশল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:২৮আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০৬

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে আলোচকরা নির্বাচনের আগে জোট গঠনের হিড়িক পড়ে যায়। ছোট বড় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল একত্রে জোট গঠন করে। এর পেছনে কিছু উদ্দেশ্য থাকে। এতে কিছু লাভ আছে। নির্বাচনে জেতা যেমন অনেকটা সহজ হয়ে যায়, অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে আন্দোলন করতে জোটের নেতারা সম্মিলিতভাবে কাজ করেন। এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘জোটের রাজনীতি’ শীর্ষক বৈঠকিতে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর শুক্রাবাদে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকির এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে লাইভ দেখা যায়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মুন্নী সাহা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই জোট করেছে তার প্রতিটির পেছনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। নানা সময় নানারকম জোট আওয়ামী লীগ গঠন করেছে। আর সেই জোট থেকে দেশবাসীকে একটি তথ্য দেওয়া হয়েছে। জাতিকে একটি আদর্শের জায়গা থেকে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন যারা জোট করছেন তাদের তেমন কোনও লক্ষ্য দেখি না। জোট করতে হয় তাই করে।’

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে যা যা বলা হয়েছিল তার বেশিরভাগই পূরণ করা হয়েছে। ১৪ দলীয় মহাজোট গঠন করার সময়ও একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ আমাদের লক্ষ্যগুলো স্পষ্ট করে বলা হয় কিন্তু অন্যরা তা করে না।’

এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘কেউ কেউ নির্বাচনের তিন মাস আগে হঠাৎ উঠে পড়ে লাগে জোট গঠনের জন্য। নির্বাচনের পরে আবার যা তাই হয়ে যায়। জনগণ এখান থেকে কী নেবে? কী আশা করবে? আমাদের জোট গঠনের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল। অন্যতম ছিল লুটপাটের রাজনীতি বন্ধ করা। বিরোধী দলের নেতাদের ওপর গ্রেনেড হামলা বন্ধ করা। আমরা এই আদর্শেই কাজ করি।’

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে অনেকই আছে, যারা নির্বাচন করেনি। অনেক দিন ধরে তারা দলের সঙ্গে আছে, কাজ করে যাচ্ছে। কেন? কারণ তারা ধারাবাহিকভাবে দেশের জন্য কাজ করতে চায়। দেশের মানুষের কাছে তাদের একটি কমিটমেন্ট আছে। তাদের একটি উদ্দেশ্য আছে, সৎ চিন্তা আছে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘জোট গঠন নির্বাচনের একটি কৌশল। এটা সবদলই করে। প্রত্যেকের লক্ষ্য থাকে নির্বাচনে জয়লাভ করা। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ছোট ছোট শক্তিগুলোকে একটি ধারায় নিয়ে আসা হয় জোটের মাধ্যমে। ছোট ছোট দলের অল্প অল্প ভোট একত্রে আনা হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ২০ দলীয় জোট করেছে। ফলে মহাজোট বর্তমানে নেই। ১৪ দলীয় জোট আছে। সে যাই হোক,নির্বাচন আসলেই এই জোটগুলো গঠন করা হয়।’

বিএনপি এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা যারা ভোটের রাজনীতি করি,তাদের কাছে মূলত এই নির্বাচনি মৌসুমে জোটের রাজনীতিই মূখ্য হয়ে ওঠে। নির্বাচনকে সমানে নিয়ে কীভাবে তা ভালো হবে,কতটুকু সুষ্ঠু হবে,এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়। এছাড়া ভালো নির্বাচনের উদ্দেশ্যে সরকারকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সরকার যদি আলোচনায় বসতে রাজি না হয় তাবে আন্দোলনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর শুধু নির্বাচনে জেতার জন্যেই যে জোট গঠন করা হয় তা কিন্তু নয়, ভালো নির্বাচনের জন্যেও জোট গঠন করা হয়, যাতে আন্দোলনের মাধ্যমে সেই ভালো নির্বাচন করানো সম্ভব।’

জাতীয় পার্টির প্রধান সমন্বয়কারী সুনীল শুভ রায় সম্মিলিত জাতীয় জোটের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রধান সমন্বয়কারী সুনীল শুভ রায় বলেন, ’জাতীয় পার্টির শরিক ৫৮ নয়, মূলত পাঁচ। মূলত এরশাদের নেতৃত্বে যে শরিক তার সংখ্যা পাঁচ। হয়ত এই দলগুলোর অস্তিত্ব আমাদের দলের ভেতরে ঠিকই আছে কিন্তু শরিক সংখ্যা ৫। ছোট ছোট দল যাদের নিবন্ধন নেই তাদের সংখ্যাই বেশি। জাতীয় পার্টি একটি নিবন্ধিত দল,এমন নিবন্ধিত দলগুলোই আমাদের শরিক দল। যারা নিবন্ধিত নয় তারা একত্রে নিবন্ধিত শরিক দলগুলোর হয়ে কাজ করবে।’

সাংবাদিক বিভূরঞ্জন সরকার বৈঠকে অংশ নিয়ে সাংবাদিক বিভূরঞ্জন সরকার বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু জিনিস আছে মৌসুমী। যেমন, মাছের মৌসুম, ফলের মৌসুম। এখন রাজনীতিতে চলছে জোটের মৌসুম। আর এই জোটের মৌসুমটিই হলো ভোটের মৌসুম। মোটামুটি ভোটের আগে জোট গঠনের হিড়িক পড়ে যায়। এখন মহাসমারহে জোটের মৌসুম চলছে। কিছু কিছু মানুষ আছেন,যারা এই সময় আসলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন। জোটের প্রতি আগ্রহী হন,ভোটের জন্য জোটবব্ধ হন।’

বিভূরঞ্জন সরকার বলেন, ‘আমরা এর আগেও দেখেছি দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোও একা একা জয়লাভ করার সাহস রাখতে পারেনি। তাই জোট গঠন করেছে। এমনটা বহুদিন ধরেই দেশে হয়ে আসছে।’ তিনি আরও বলেন,’ভোটে জেতার জন্য যেমন জোট হয় তেমনি হারানোর জন্যও জোট হয়। যখন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলর নির্বাচন হয়, তখন দেখা যায় কেউ যদি একাই প্রার্থী থাকেন তখন তাকে অনায়াসে জেতা ঠেকাতে গিয়েও প্রার্থী হন কেউ কেউ। জোট গঠন করেন, যাতে অনায়াসে তিনি জিততে না পারেন।’

নাগরিক ঐক্যের রাজনীতিক ডা. জাহেদ-উর রহমান যুক্তফ্রন্টের কর্মসূচি প্রণয়নকারী কমিটির সদস্য এবং নাগরিক ঐক্যের রাজনীতিক ডা. জাহেদ-উর রহমান বলেন, ‘দলের ইমেজ বাড়ানোর জন্যই ছোট দলগুলোকে জোটভুক্ত করতে চাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো দলগুলো।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি বড় দল। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি করছে। তারা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছে ছোট ছোট দলগুলো দলের ইমেজ বাড়াই। আর তাই তাদেরকে জোটে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করে।’

জাহেদ-উর রহমান বলেন, ’জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য বড় দুটি দল কিন্তু বহুদিন ধরে রাজনীতি করছে। এই দলগুলোকে নিয়ে অনেকেই নানা কথা বলছেন। যখন জোট হচ্ছে, যখন আমরা গণফোরামের সঙ্গে বসছি,দলের পজিশন কখন কোন দিকে যাচ্ছে তা তারা খেয়াল করছে। গণমাধ্যমগুলোই সেগুলো নিয়ে লিখছে। কিন্তু আমি মনে করি,এটা এক ধরণের বিদ্রুপ। শুনতে অবাক লাগতে পারে তবু আমি এই বিদ্রুপগুলো নিয়ে আনন্দবোধ করছি।’

বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল নাগরিক ঐক্যের এই রাজনীতিক আরও বলেন, ‘বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে সরিয়ে রাখি। পত্রিকায় দেখেছি আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে অন্যান্য দলের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ আসন ছাড় দেবে। কিন্তু এ সংখ্যা হয়তো বাড়তেও পারে। এর মধ্যে দেখা যাবে নিজে ভোট করে জিততে পারে এমন দল তেমন নেই। ফলে জোট করতে হচ্ছে। এই জোটে ছোট দলগুলো যুক্ত হলে,কিছু অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পজিটিভ ইমেজ তৈরি করে। আর সে কারণেই তাদেরকে জোটে নেওয়া হয়।’

এটিএন নিউজ এর প্রধান নির্বাহী মুন্নী সাহা যুক্তফ্রন্টের কর্মসূচি প্রণয়নকারী কমিটির সদস্য এবং নাগরিক ঐক্যের রাজনীতিক ডা. জাহেদ-উর রহমানের উদ্দেশ্যে বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ কেন রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশ্বাস করে? যেখানে বেশিরভাগ নেতাদের নিজেদের আসনে নিজেদেরই জামানত বাজেয়াপ্ত। তাদের প্রতি যখন একটি নির্বাচনি আসনের জনগণের আস্থা থাকে না, সেখানে সারাদেশের মানুষ কীভাবে আস্থা রাখবেন?’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা জোট গঠনের পর সরকার গঠন করেন। সেই জোটের নেতারাই সংসদে যান। যদি একই জোটের ভিন্ন ভিন্ন দলের নেতাদের মধ্যে আদর্শের মিল না থাকে তখন কীভাবে কাজ করেন? বক্তারা এমন প্রশ্নের উত্তরে বক্তব্য দেন।

 



/আরএআর/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ