X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:২৫আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:১৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি-ফোকাস বাংলা) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ ব্যাপারে তার সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।

বুধবার (১৭ অক্টোবর) সকালে বাদশাহ সৌদ রাজপ্রাসাদে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের সংগঠন সৌদি চেম্বার এবং রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পারস্পরিক স্বার্থেই আপনাদের বাংলাদেশে ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যাতে আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় একে অন্যের হাতে হাত রেখে চলতে পারি।’

শেখ হাসিনা সৌদি বাদশাহ এবং পবিত্র দুটি মসজিদের খাদেম সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সে দেশে গিয়ে পৌঁছান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৌদি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন উদীয়মান খাত, যেমন—পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের হাল্কা প্রকৌশল শিল্প, ব্লু-ইকোনমি, গবেষণা, উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পানি ও সমুদ্রসম্পদ, অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং সেবামূলক খাত, যেমন—ব্যাংকিং এবং অর্থনীতি, লজিস্টিক এবং মানবসম্পদ খাতেও বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকা এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফা নিয়ে দেশে ফেরার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। যার মধ্যে রয়েছে—আইন দিয়ে সুরক্ষিত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বল্প শুল্ক প্রদান, বিনাশুল্কে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ, রেমিট্যান্স অন রয়্যালটি, শতভাগ ফরেন ইক্যুয়িটির নিশ্চয়তা, লাভ এবং পুঁজিসহ বিনা বাধায় চলে যাওয়ার সুবিধা।

অন্যান্য সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের বৃহৎ শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশের সুবিধা। এরমধ্যে রয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইউ), অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান এবং নিউজিল্যান্ডের বাজারে প্রবেশের সুবিধা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যুৎ এবং পানি প্রাপ্তির সুবিধাও রয়েছে। রয়েছে ভালো ক্রেডিট রেটিং, স্বল্প ঝুঁকি এবং দ্রুত প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতার সুবিধা। এই সবগুলো একত্রে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের সর্বোচ্চ মুনাফা প্রাপ্তির সুবিধাই নিশ্চিত করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে।’

দেশে তার সরকারের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলো (ইপিজেড) শতভাগ রফতানি নির্ভর। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে।’

শেখ হাসিনা এই শিল্পাঞ্চলগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য দেশে প্রায় দুই ডজনেরও বেশি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকার দেশে ১০টি প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃজনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং দুই অংকের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ, হাইটেক, পর্যটন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে এ ধরনের আরও প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দু’হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছি, যেগুলো বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক তারা ব্যবহার করতে পারবেন।’

বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান, যেটি উভয়ের বিশ্বাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং আকাঙ্ক্ষার একই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের ব্যবসায়িক সম্পর্কের শুরু সেই সপ্তম শতকে, যখন আরবের ব্যবসায়ীরা প্রথমবারের মতো আমাদের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আসেন।’

দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমরা এখনও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগগুলোর পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে পারছি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের পরিমাণ এখন ২৫টি প্রকল্পে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, যার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে—কৃষিভিত্তিক শিল্প, খাদ্য এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার, বস্ত্র এবং তৈরি পোশাক, চামড়া, পেট্রোকেমিক্যাল, প্রকৌশল ও সেবা খাত।’

গত মার্চে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে তার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৮ সাল থেকে দেশে ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করেছে।’

‘উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার তার রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার পথে প্রথম ভিত্তি’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ক্রয় সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দারিদ্র্যসীমা ৪১ দশমিক ৫ ভাগ থেকে ২১ দশমিক ৮ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি এবং আমাদের অর্থনীতিও বিশ্বের ১০টি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি।’

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং এ বছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি।’

বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার উচ্চপ্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশপাশি বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং ২০০৮-২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৯ গুণ বেড়ে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই দ্রুত রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।’

‘বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক খাতে দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ, যার রফতানির পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ৬৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার’- যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উৎপাদনকারী, চতুর্থ বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী এবং তৃতীয় বৃহৎ মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ।’

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প দেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য খাত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ওষুধের ৯৮ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে।’

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পেরও ক্রমবিকাশ ঘটছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মধ্যম আকারের সমুদ্রগামী বেশ কিছু জাহাজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘তার এই কর্মসূচির লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের সক্ষমতার বিকাশ সাধন।’

তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী ইন্টারনেটভিত্তিক ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।’

এ সময় তার সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকার মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তার সরকার কয়লাভিত্তিক সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণ করছে।’

দেশের ৯০ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তার সরকার পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এক কদম অগ্রসর হয়েছে।’

সূত্র: বাসস

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২
গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি