‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হলো, তাদের আওতাধীন এলাকায় যেকোনও সহিংসতা রোধ করা। এর পাশাপাশি নির্বাচনি সহিংসতা বন্ধে সহনশীল হতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেও। তাদের কর্মী বাহিনীকে আরও সংযত আচরণ করতে বলতে হবে। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সহিংসতা কমানো খুব কঠিন হয়ে যাবে।’
দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজন ‘নির্বাচনি সহিংসতা’ শীর্ষক বৈঠকিতে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এবং করছে। তারা প্রতিনিয়ত হয়তো সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলছে। তবে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্ত ভূমিকা নিতে হবে, বিব্রতবোধ করার দরকার নেই, দুঃখ প্রকাশ করারও দরকার নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে তাদের এখন শক্তভাবে বলা উচিত যে, তোমার এলাকায় এরকম কেন হচ্ছে? যদি তুমি এটা (সহিংসতা) বন্ধ করতে না পারো, তোমার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না?’
মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি। রাজধানীর শুক্রাবাদে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে তা লাইভ দেখানো হয়।
এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় এ আয়োজনে মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ ছাড়া আরও অংশ নেন– আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি’র সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু, ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) নির্বাহী প্রধান সাঈদ আহমেদ এবং বাংলা ট্রিবিউন সম্পাদক জুলফিকার রাসেল। বৈঠকির সহযোগিতায় ছিল আইআইডি।
বৈঠকিতে আইআইডি’র নির্বাহী প্রধান সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলে ছিলেন, নিজেও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তার দল এখন ক্ষমতায়, তিনি যেন জিনিসটার (সহিংসতা) প্রতি খেয়াল রাখেন। আর আমরা সবসময় বলি, গণতন্ত্রের জননীতি হবে জনতা। জনতার ৫০ শতাংশ হচ্ছে নারী। বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্নভাবে ঘরে-বাইরে মত প্রকাশ করতে পারেন না। নির্বাচন হলো সেই জায়গা, যেখানে একজন নারী তার নিজের মতো করে ভোট দিতে পারেন। আশঙ্কা যদি তৈরি হয়, সহিংসতা যদি তৈরি হয়, নারীর ভোটাধিকার কমে যায় সবার আগে।’
এসময় বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল প্রশ্ন করেন, ‘বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হচ্ছে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। সেটা আপনাদের (ঐক্যফ্রন্টের) ওপর বেশি হচ্ছে, এটাও মেনে নিলাম! যদি কোনও দলের নেতা রাজনৈতিকভাবে হুমকি দেন, তাহলে তা নির্বাচনি সহিংসতার মধ্যে পড়বে?’
জবাবে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, ‘হুমকি কাকে দিচ্ছে, সেটা দেখেন, কোনও প্রার্থীকে দিয়েছে? যদি নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে হুমকি দেন, সেটা হবে নির্বাচনি সহিংসতা।’ প্রসঙ্গ পাল্টে তিনি বলেন, ‘এখানে (অনুষ্ঠানের) পরিবেশ শান্ত আছে, শান্ত থাকতে দিন।’
এসময় মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আচরণবিধিতে আছে হুমকি দিতে পারবে না প্রার্থীকে অথবা প্রার্থী সংশ্লিষ্ট কাউকে।’
এপর্যায়ে জুলফিকার রাসেল জানতে চান, ‘যারা সহিংসতা চালাচ্ছে কিংবা হামলা করছে, তাদের ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা?’
এর জবাবে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন যাদের ধরা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা অনেক আগেই হয়েছে। ২০১৪ সালে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে যেই মামলা হয়েছে, সেই মামলা তো বিএনপির বিরুদ্ধে হয়নি, একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে হয়েছে। সেই মামলার সঙ্গে কোনও না কোনও নাম সম্পৃক্ত। ব্যাপকহারে কাউকে ধরা হচ্ছে না, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এখন অপরাধীদের ধরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আমরাও বলি, আওয়ামী লীগ কিংবা তার অঙ্গসংগঠনের কেউ যদি অপরাধ করে, সেও অপরাধী। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সে শাস্তি পাবে। সেটা যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। অপরাধী খোঁজা তো আওয়ামী লীগের কাজ না।’
ডিবিসি’র সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে শিগগিরই সহিংসতা দূর হবে, এটা আমি আশা করি না। এর কারণ, সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আমরা যখন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, তখন এটা মেনে নিয়েছি। ১৯৯১ সালের পর আশা করেছিলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর চরিত্র সহিংসতামুক্ত হবে। আমরা আশা করেছিলাম, মনোনয়নের সময় পরিচ্ছন্ন প্রার্থী বেছে নেবে রাজনৈতিকগুলো। আর এটা করলে সহিংসতা কমে আসবে। কিন্তু তা হয়নি।’