X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুনদের বরণ করতে প্রস্তুত ডাকসু, সাজবে নেতাদের পছন্দে

আদিত্য রিমন
১৪ মার্চ ২০১৯, ১০:৩০আপডেট : ১৪ মার্চ ২০১৯, ১০:৩০

নবনির্বাচিত নেতাদের বরণ করতে প্রস্তুত  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ

নব নির্বাচিত নেতাদের বরণ করে নিতে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কার্যালয় (ডাকসু) ভবন।  ভবনটির চারপাশের দেয়ালে ও ভেতর রঙ করা হয়েছে।  দেয়ালে করা হয়েছে বিভিন্ন কারুকাজ। নিরাপত্তার জন্য ভবনে সিসি ক্যামেরাসহ দরজায় লাগানো হয়েছে নতুন তালা । তবে দ্বিতলবিশিষ্ট ভবনটির দ্বিতীয়তলার যে ৮ টি কক্ষ থেকে পরিচালিত হবে ডাকসুর কার্যক্রম সেখানে এখনও রাখা হয়নি কোনও আসবাবপত্র। 

ডাকসুর অফিস কক্ষ জানা গেছে, ডাকসুর নব নির্বাচিত নেতারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কক্ষের ডিজাইন করে নিতে পারবেন। কিনতে পারবেন পছন্দসই আসবাবপত্র। এজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনও কক্ষের আসবাবপত্র কেনা হয়নি।      

দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর গত ১১ই মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন না হওয়ার ফলে দীর্ঘদিন কর্মচাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়ে থাকা ভবনটিতে এখন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সম্পাদক ও সদস্যদের কক্ষ এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত কক্ষগুলোতে দীর্ঘদিন জমে থাকা ধুলো- ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে নতুন ফ্যান। এছাড়া নেতাদের জন্য ২০ টি দৈনিক পত্রিকাও রাখা হচ্ছে।  

সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ গত ১২ বছর ধরে ডাকসু ভবনের সার্বিক দেখভাল করেন সহকারী স্টাফ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে ভবনের অনেক কাজ করা হয়েছে। নতুন করে রঙ করা, ধোয়া-মোছা করা, দেয়ালে কারুকাজ করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৯ টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কক্ষগুলোতে নতুন তালাও লাগানো হয়েছে।

বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ডাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় আটটি কক্ষ রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে প্রথমে পড়ে ডাকসুর অফিস কক্ষ। সেখানে বসে কাজ করছেন আবুল কালাম। তিনি তার সহকারীকে বিভিন্ন বিষয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যান উপস্থিত হলে করমর্দন করেন তিনি। এরপর কাজের কথা বলতে আবুল কালাম সহকারীকে চাবি দিয়ে কক্ষগুলো খুলে দিতে বলেন।

ডাকসুর সংগ্রহশালা ডাকসু ভবনের কলাপসিবল গেট পার হয়ে বাম পাশের প্রথম কক্ষটি সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ও দ্বিতীয় কক্ষটি  সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এর জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬ টি কক্ষের মধ্যে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), সাহিত্য সম্পাদক, সম্পাদকবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ, খেলাধুলার কক্ষ, কনফারেন্স হল ও পত্রিকা পড়ার জন্য রাখা হয়েছে। এসব কক্ষের মধ্যে পুরনো বেশ কয়েকটি আলমারি, কিছু বই, পত্রিকা ও ফাইল দেখা গেছে।

আবুল কালাম আজাদ জানান, কক্ষগুলো পরিষ্কার করে পুরনো জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখা হয়েছে। নতুন আসবাবপত্র ক্রয় করা হয়নি। কারণ, আমরা আসবাবপত্র ক্রয় করলে যদি নেতাদের পছন্দ না হয়, এই কারণে নেতারা দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্র ক্রয় করে কক্ষগুলো সাজানো হবে।

ডাকসুর সংগ্রহশালা জানা গেছে, নতুন নেতাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ডাকসু ভবনের চারপাশে ৯ টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এছাড়া ভবনের চারপাশে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা ধরা পড়বে এসব সিসি ক্যামেরায়। যা পরবর্তীতে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।

আবুল কালাম বলেন, সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সিসি ক্যামেরাগুলো লাগানো হয়েছে। এসব ক্যামেরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে।

তিনি আরও জানান, ডাকসুর দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরও ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া ডাকসুর কাজের জন্য একজন কম্পিউটার অপারেটরও নিয়োগ দেওয়া হবে।

ডাকসুর ইতিহাসে স্মরণীয় ব্যক্তিরা ডাকসু ভবনের নিচের তলায় রয়েছে ডাকসু সংগ্রহশালা ও ক্যাফেটেরিয়া। সংগ্রহশালায় গিয়ে দেখা যায়, ৭ মার্চ হাত উঁচিয়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আদলে নির্মিত ভাস্কর্য, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন যেখানে শুরু হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক আম গাছের গোড়ার অংশও স্থান পেয়েছে সংগ্রহশালায়। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিভিন্ন দেশের প্রাচীন মুদ্রাও রাখা হয়েছে সংগ্রহশালায়।  

গত ১১ মার্চ ৩৭তম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ডাকসুর সহ-সভাপতি(ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরল হক নুর। আর জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। যদিও আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে এ নির্বাচন প্রত্যাখান করে বিভিন্ন প্যানেল। রাতে ফল ঘোষণার পর সভাপতি পদে হেরে যাওয়ায় এই পদে পুনর্নির্বাচনের দাবি করে ক্ষমতাসীন ডাকসুতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তবে পরদিন ১২ মার্চ দুপুরে সংগঠনটি এ দাবি থেকে সরে আসে। অন্যদিকে, সবগুলো পদেই নতুন নির্বাচন দাবি করে এখনও আন্দোলনে আছে বাকি প্যানেলগুলো।  তবে মঙ্গলবার ভিপি পদে জয়ী নুরুল হক নুর নিজেরটিসহ তার প্যানেল থেকে জেতা দুটি পদ বাদে বাকি ২৩ পদে নির্বাচন দাবি করেন। একইসঙ্গে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি দেন। এরপর পরাজিত ভিপি প্রার্থী ও ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলে নুর তার দেওয়া কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। আবার একইদিন সন্ধ্যায় বামদলসহ অন্য প্যানেলগুলোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে নিজেরটিসহ ৩১ মার্চের মধ্যে সব পদেই নির্বাচন দাবি করেন। তবে এর কিছুক্ষণ পরই নিজে শপথ নেবেন বলে জানান, যদিও ডাকসুতে শপথ বলে কিছু নেই। আর বুধবার তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা চাইলে তিনি দায়িত্ব নেবেন না চাইলে আন্দোলনে যাবেন।   

ডাকসুতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি মনিটর এদিকে, ১২ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যসব প্যানেল পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দেয়। সেই অনুয়ায়ী আজ ১৩ মার্চ ঢাবির কম্প্যাসে বিক্ষোভ মিছিল করে পুনর্নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পাঁচটি প্যানেলের প্রতিনিধিরা।

উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বামজোটের অন্যতম ছাত্রনেতা ও ভিপি লিটন নন্দী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পুনর্নির্বাচনের দাবিতে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা তাকে তিন দিনের মধ্যে দাবি মেনে পুনঃতফসিল ঘোষণার আল্টিমেটাম দিয়েছি। তবে ভিসি আমাদের কোনও কথা দেননি।

ডাকসুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, পুনর্নির্বাচন সম্ভব নয়। ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচিতদের অভিষেক নিয়মনীতি অনুযায়ী আয়োজন করা হবে।’

উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে পূর্বনাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ' গ্রহণ করা হয়। ইংরেজিতে এর নাম রাখা হয় DACCA UNIVERSITY CENTRAL STUDENTS UNION (DACSU). সেই থেকে এই সংসদ সংক্ষেপে ডাকসু নামেই পরিচিত।  প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৩৬ বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক হন যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। ডাকসুর সর্বশেষ ভিপি ও জিএস ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা  আমানউল্লাহ আমান ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। এরপর দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ঢাবি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর কোর্সের ছাত্র ওয়ালিদ আশরাফ। প্রায় ১৫ দিন অনশনের পরে উপাচার্য আখতারুজ্জামানের নির্বাচনের আশ্বাসে তিনি অনশন ভাঙেন। এরপর একই দাবিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলন চলমান রাখে। সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে হবে। এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১ মার্চ নির্বাচনের আয়োজন করে।  

ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও আদিত্য রিমন

/টিএন/
সম্পর্কিত
সেন্ট জোসেফ স্কুলে তিন দিনব্যাপী লিট ফেস্টিভ্যাল শুরু
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
সর্বশেষ খবর
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
এই গরমে ক্রিকেট খেলা অমানবিক: সাকিব
এই গরমে ক্রিকেট খেলা অমানবিক: সাকিব
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি