X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সংসদে সরকারি দলের এমপিরা

বাংলাদেশের সব অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ জুন ২০১৯, ০৩:৩২আপডেট : ২৪ জুন ২০১৯, ০৩:৫৬

জাতীয় সংসদ (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিতবাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা (এমপি) বলেছেন, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যা কিছু অর্জন হয়েছে সবই আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। আওয়ামী লীগের বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা সবাই পাকিস্তানের তল্পিবাহক।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার বিকাল সোয়া তিনটায় সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। এরপর বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা হয়। প্রসঙ্গত, রবিবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ছিল। তাই বাজেটের ওপর এদিনের আলোচনায় আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও অর্জন উঠে আসে।

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালির বিরুদ্ধে পশ্চিমারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। যার প্রথম আক্রমণ আসে বাংলা ভাষার ওপর। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে ও পরে এই দেশে যা কিছু অর্জন সবই আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে এসেছে। ৬ দফার আন্দোলনের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের একক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। পাকিস্তান আমলে যারা সরকারে ছিলেন, তারা ছিলেন তল্পিবাহক। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে যে সরকারগুলো এসেছে, তারাও ছিল পাকিস্তানের তল্পিবাহক।’

আওয়ামী লীগের ৭০তম জন্মদিনের স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক বড় বড় নেতা আসবেন, যাবেন। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা কোনোদিন আসবেন না। তাঁর হৃদয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। তিনি শুধু এশিয়া নয়, সারাবিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন।  দু’টি স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। এক হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা, অন্যটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাকি কাজ বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা।’

বাজেট সম্পর্কে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট চমৎকার। কিন্তু কিছু কিছু অসামঞ্জস্য রয়েছে।’ এ বিষয়গুলো ঠিক করতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে অসামঞ্জস্যগুলো সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেননি। তার বক্তব্যের পুরো অংশ জুড়েই আওয়ামী লীগের জন্ম ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা উঠে আসে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের জন্মদিনে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘জাতির পিতা, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে দুঃখ থাকতো না, তাকে হত্যা করলো এই দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার-বেঈমান; মোশতাক-জেনারেল জিয়া গংরা।’

এক সময়কার আলোচিত জাসদ নেতা সিরাজুল ইসলামের খানের জীবনীর ওপরে প্রকাশিত বইয়ের তথ্য প্রসঙ্গে সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, ‘অনেকে নিউক্লিয়াস বলেন, কী কী বলেন। ৬২ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলার স্বাধীনতার জন্য একটি বিপ্লবী সংগঠন করেন। আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন। প্রত্যেক মহকুমার কিছু কিছু ছেলে ও লোককে রিক্রুট করেন গোপনে। ওটাকে নিয়ে অনেকে বলে আমি নিউক্লিয়াস…। আরে বঙ্গবন্ধু বাদে কেউ কথা বললে তো গণপিটুনিতে মারা যেতো। তাদের কোনও ক্ষমতা ছিল কিছু করার? তারা কারা? এখন বই লিখে কত ইতিহাস বানায়।’ শেখ সেলিম বলেন, ‘পাকিস্তানিদের এজেন্ট হিসেবে যে ক্ষতি বাংলাদেশের করেছে; তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, চার নেতাকে হত্যা করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করেছে। আমাদের ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা দেশে আসার পর তাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে শেখ সেলিম জানান, তার কাছে প্রমাণ রয়েছে, জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন। জিয়ার বাবা-মা কোনোদিন বাংলাদেশে আসেননি, তাদের কবরও পাকিস্তানে। বগুড়ায় তার পূর্বপুরুষরা কবে এসেছিল, কেউ বলতে পারে না। আর খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি জেনারেল জানজুয়ার আতিথেয়তায় পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টে আরাম-আয়েশে ছিলেন। সে কারণে জানজুয়ার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া শোক দিয়েছেন ও পাকিস্তানে গিয়ে তার মাজার পর্যন্ত জিয়ারত করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার জীবন দিয়ে আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলেছেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘জাতি হিসেবে উচ্চাভিলাষী না হলে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র আমরা পেতাম না। তাই উচ্চাভিলাষী হতেই হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত তিন দশকে সারাবিশ্বে উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তার রিপোর্টে তারেক রহমানকে দুর্ধর্ষ একজন লোক ছাড়াও বড় দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন।’

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার বক্তব্যে প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুতের নতুন গ্রাহকদের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার বিরোধিতা করেন। অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘গ্রামের গরিব কৃষকদের পক্ষে টিআইএন খোলা এবং তা পরিচালনা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ তাই তিনি সব নতুন গ্রাহকদের পরিবর্তে ৫০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেন।

জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘ঋণখেলাপিরা ঋণ নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। চীনের মতো ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’ তিনি বলেন, বাস্তবায়ন করা না গেলে বড় বাজেট দিয়ে কোনও লাভ হয় না।’

গণফোরামের সদস্য মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে ঠেলে দিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর বলেন, ‘আমি কখনও আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাইনি। আওয়ামী লীগও আমাকে বহিষ্কার করেনি।’ তিনি বলেন, ‘যারা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গাছের আগেরটা খেতেন, তলেরটাও খেতেন তারা আজকে সংসদেও আছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে স্বৈরচারদের যারা সমর্থন করতেন, তারাও আছেন, ওয়ান ইলেভেনে যারা সুবিধা নিয়েছেন, তারাও আজকে সংসদে আছেন। এদের সবাইকে নিয়ে সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণ সম্ভব হবে না।’

বিজিএমইএ-র সাবেক সভাপতি সালাম মূর্শেদী বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট শুধু ব্যবসাবান্ধব নয়, জনকল্যাণমূলক, উন্নয়নমূলক বাজেটও। বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদস্য শেষপর্যন্ত সংসদে যোগ দিয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।’

বাজেট আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলী, চট্টগ্রাম-১০ আসনের মো. আফছারুল আমীন, নওগাঁ-৪ আসনের মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রাং, ঢাকা-১১ আসনের এ কে এম রহমতুল্লাহ, ভোলা-৪ আসনের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের মো. নজরুল ইসলাম বাবু, ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী, যশোর-৩ কাজী নাবিল আহমেদ, নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের আদিবা আনজুম মিতা, তাহমিনা বেগম, জাকিয়া তাবাসসুম, জাতীয় পার্টির ঢাকা-৪ আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।

 

/ইএইচএস/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
একসঙ্গে ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন