X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকদের ওপর হামলা বন্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

উদিসা ইসলাম
১১ মার্চ ২০২০, ০৯:৫৯আপডেট : ১১ মার্চ ২০২০, ১০:৩৫

১৯৭২ সালের ১১ মার্চের পত্রিকা ১১ মার্চ ১৯৭২। স্বাধীনতা লাভের প্রায় তিন মাস পরের এই দিনটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগে অন্যতম কর্মচঞ্চল দিন। তার দেশে ফিরে ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক দু’মাস পরের এই দিনে টঙ্গী শিল্প এলাকায় সাধারণ শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণে যেকোনও মূল্যে শ্রমিকদের ওপর সব ধরনের হামলা বন্ধ করতে ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া পাকিস্তানের আটকে পড়া বাঙালিদের জন্য প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা বিধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন দেশের কাছে যেসব বার্তা পাঠিয়েছিলেন তাতে সেসব দেশের নেতৃত্ব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের আর্কাইভ ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কাজী জাফর আহমেদ ১৯৭২ সালের ১১ মার্চ শনিবার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে টঙ্গীর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু আলোচনার ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান এবং টেলিফোনে টঙ্গী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তাদের যেকোনও মূল্যে শ্রমিকদের ওপর হামলা বন্ধ করার নির্দেশ দেন বলে ফেডারেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। যারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। এবিষয়ে ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বাংলা শ্রমিক ফেডারেশন ও টঙ্গীর স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতাদের এক যুক্ত বৈঠক হয়। বঙ্গবন্ধু জানান, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শিল্পনীতি ঘোষণা করা হবে।

১৯৭২ সালের ১২ মার্চের পত্রিকা পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের বিষয়ে সাড়া দিলো বিশ্ব

পাকিস্তানে বসবাসকারী বাঙালিদের বাংলাদেশে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন দেশের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেসব দেশের কাছ থেকে এই দিনে প্রত্যক্ষ সাড়া পাওয়া যায়। ১৯৭২ সালের এইদিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ বাসসকে জানান, বাঙালিদের জন্য পাকিস্তানের ওপর প্রভাব খাটানোর আবেদন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু সব বন্ধুভাবাপন্ন দেশের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশগুলো এটাকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখে। তারা পাকিস্তানে বসবাসকারী বাঙালিদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

১৯৭২ সালের ১২ মার্চের দৈনিক বাংলা পত্রিকা পশ্চিমবঙ্গে আর কোনও উদ্বাস্তু শিবির নেই

পশ্চিমবঙ্গে আর কোনও উদ্বাস্তু শিবির নেই বলে এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। বলা হয়, অধিকাংশ শরণার্থী দেশ স্বাধীন হওয়ায় বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এনার বরাত দিয়ে দৈনিক বাংলার খবরে জানানো হয়, কয়েকটি জেলায় এখনও হাজার ত্রিশেক উদ্বাস্তু আছেন তবে এরা কেউই শিবিরে থাকছেন না। তারা শিগগিরই স্বদেশে ফিরে আসবেন। এদিকে মধ্যপ্রদেশ উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের বিভিন্ন শিবিরে এখন প্রায় ষাট হাজার উদ্বাস্তু আছেন। এরাও এ মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

আরও অস্ত্র উদ্ধার

দায়িত্ব গ্রহণের পর মুক্তিযোদ্ধাসহ সবাইকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। এ নির্দেশনার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নামে পুলিশ। এর ধারাবাহিকতায় নবাব বাড়িতে খাজা খয়ের উদ্দিনের বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে এদিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সব সংবাদমাধ্যমে। বলা হয়, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কোতোয়ালি পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে রাইফেলসহ বেশকিছু দেশি অস্ত্র ও তরবারি উদ্ধার করে। এদিকে এইদিনেই তেজগাঁও, সূত্রাপুর এলাকা থেকেও বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

১৯৭২ সালের ১২ মার্চের পত্রিকা

ফটো সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান প্রস্তাবিত আলোকচিত্র সাংবাদিক একাডেমির প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদ গ্রহণের প্রস্তাবে সম্মতি দেন। ১১ মার্চ ঢাকার সব আলোকচিত্র সাংবাদিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করে এ প্রস্তাব পেশ করলে তিনি তাদের সম্মতি দেন। বঙ্গবন্ধু আলোকচিত্র সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত আলোচনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ফটোগ্রাফারদের সঙ্গত কিছু দাবি মেনে নেন।

আলোকচিত্র সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ভারতের নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে উপহার দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ অ্যালবাম তৈরি করা হয়। এটি বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ১৭ মার্চ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রসঙ্গত বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সামনে রেখে এর ৬ দিন পর ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী  বাংলাদেশ সফরে আসেন।

ফটোজার্নালিস্টদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু

ফিরে দেখা: একাত্তরের এই দিনে

১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ অসহযোগ আন্দোলনের চতুর্থ দিন শান্তিপূর্ণভাবে পার করে। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সব অফিস, আধা সরকারি অফিস, হাইকোর্টসহ অন্যান্য আদালত, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগের দিনগুলোর মতোই বন্ধ ছিল। জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ চার দফা দাবি পেশ করে তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণে এই  আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

যেসব অফিস বা সংস্থাকে আন্দোলন হতে অব্যাহতি দেওয়া হয় সেগুলো ছাড়া অন্য কোনও অফিসের একজন কর্মচারীও এইদিনে কাজে যোগ দেননি। এদিকে সব দোকানপাটে কালো পতাকা ওড়ানো থাকে, জনসাধারণ কালোব্যাজ ধারণ করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে হরতালের খবর ঢাকায় পৌঁছাতে থাকে। একইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্থা, ছাত্র সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আন্দোলনের প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেয়।

/ইউআই/এসটি/টিএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
রাহমানের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’, ভিডিও করলেন মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
তীব্র তাপে গলছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের কার্পেটিং
তীব্র তাপে গলছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের কার্পেটিং
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী