X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রি টিকিটের লোভ দেখিয়ে ও স্বজনদের জিম্মি করে ফাঁদে ফেলা হয় প্রবাসীদের!

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:০৫আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:০৫

প্রবাস থেকে ফেরত আসছে ছেলে, তাই তাকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু বিমানবন্দরে এসে নিখোঁজ হন যশোরের চৌগাছার সৈয়দ আলী মন্ডল (৬৫)। ৯ অক্টোবর এই ঘটনা ঘটে। পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনও খবর পাননি। পরে সৈয়দ আলীর জামাতা রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ভিকটিমের পরিবার র‌্যাব-৪ এর কাছে তাকে উদ্ধারের জন্য আবেদন করে। এরপরেই বেরিয়ে আসে এক অপরাধ চক্রের কৌশলে জাল ফেলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার তথ্য।   

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় র‌্যাব-৩ এবং র‌্যাব-৪ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত সৈয়দ আলী মন্ডলকে উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো- খোরশেদ আলম (৫২), জুয়েল রানা মজুমদার (৪০) ও মাসুম আহমেদ (৩৫)।  খোরশেদ ও জুয়েলের বাড়ি কুমিল্লায়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রসাধনী, অন্যান্য মূল্যবান পণ্যসামগ্রী উদ্ধারের তথ্য জানায় র‌্যাব। এসব পণ্যের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনকে জিম্মি করে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসছে এই চক্রটি। এর অন্যতম মূলহোতা খোরশেদ আলম।

গ্রেফতার তিন জন

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা এই অপহরণের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। ভিকটিম সৈয়দ আলীর ছেলে প্রবাসী নুরুন্নবী গত ২০ আগস্ট উন্নত জীবনযাপনের আশায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যায়। বিদেশে গিয়ে ভালো চাকরি ও সুযোগসুবিধা না পাওয়ায় একপর্যায়ে দেশে ফেরত আসার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় প্রবাসে এই চক্রের মূলহোতা আবু ইউসুফ এবং তার সহযোগীরা নুরুন্নবীর আর্থিক দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাকে বাংলাদেশে আসার ফ্রি টিকেট দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। তারা স্বর্ণালংকার এবং একটি লাগেজে বেশকিছু দামী কসমেটিক্স পণ্য, ইলেকট্রনিক আইটেম, চকলেট ইত্যাদি বাংলাদেশে নিয়ে এসে খোরশেদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার শর্ত দেয়।

নুরুন্নবী তাদের দেওয়া শর্তে রাজি হয় এবং ৯ অক্টোবর রাতে ঢাকায় আসবে বলে তার পরিবারকে জানায়। নুরুন্নবীর বাবা সৈয়দ আলী ৯ অক্টোবর রাতে ছেলেকে নেওয়ার জন্য ঢাকায় আসেন। তবে চক্রের সদস্যরা তাদের পাঠানো পণ্য নিরাপদে পাওয়ার জন্য জামানত হিসেবে সৈয়দ আলীকে কৌশলে অপহরণ করে রাজধানীর শান্তিনগরের একটি বাসায় নিয়ে জিম্মি করে রাখে।

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এই চক্রটি বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী আরও বেশ কয়েকজন দুস্কৃতিকারী বাংলাদেশির যোগসাজসে পরিচালিত হচ্ছে। প্রবাসফেরত বিভিন্ন যাত্রীদের মাধ্যমে গত ৫/৬ বছর ধরে কৌশলে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মূল্যবান পণ্য দেশে এনে বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করে আসছিল।

র‌্যাব বলছে, এই চক্রটির অন্যতম মূলহোতা আবু ইউসুফ মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে থাকে। দেশে ও বিদেশে এই চক্রটির প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রবাসীদের গ্রুপসহ বিভিন্ন স্থানে ফ্রি টিকিটে বাংলাদেশে আসার প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। বিজ্ঞাপন দেখে যে সব প্রবাসি ফ্রি টিকিটে দেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের টার্গেট করা হয়। আবু ইউসুফ ফ্রি টিকেট দেওয়ার বিনিময়ে প্রত্যেক প্রবাসীর কাছে স্বর্ণ, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন প্রকারের দামী প্রসাধনী ও অন্যান্য মূল্যবান পণ্যের ২৫ থেকে ৩০ কেজি ওজনের একটি লাগেজ দেয়। প্রতিটি লাগেজে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার পণ্য থাকে বলে জানা যায়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

এছাড়াও যারা ফ্রি টিকিটে দেশে আসতে চায় প্রথমে তাদের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক নথিপত্র চক্রটি নিজেদের জিম্মায় নেয়। প্রকৃতপক্ষে তারা দেশে আসবে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে বাংলাদেশে থাকা চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে টার্গেটকৃত প্রবাসীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রবাসী ব্যক্তির দেশে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রবাসী ব্যক্তি দেশে আসার আগের দিন চক্রের সদস্যরা কৌশলে প্রবাসী ব্যক্তিকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয় এবং লাগেজ বুঝিয়ে দেয়। একইসঙ্গে দেশে তাদের আত্মীয় স্বজনকে বাংলাদেশের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। প্রবাসীর আত্মীয়-স্বজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কৌশলে চক্রটি তাদেরও ঢাকায় এনে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয়। প্রবাসী ব্যক্তির ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করার কয়েক ঘণ্টা আগে চক্রের কয়েকজন সদস্য বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকে। পরবর্তীতে প্রবাসী যাত্রী বাংলাদেশে পৌঁছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা মালামালপূর্ণ লাগেজ চক্রের সদস্যদের কাছে যথাযথভাবে হস্তান্তর করলেই জিম্মিকৃত আত্মীয়দের ছেড়ে দেওয়া হয়।

চক্রটি নিজেদের গোপনীয়তার স্বার্থে ২-৩ মাসের মধ্যেই ভাড়াকৃত বাসা পরিবর্তন করে থাকে। যে বাসা থেকে সৈয়দ আলীকে উদ্ধার করা হয় সেই বাসাটিও ২ মাস আগেই গ্রেফতারকৃতরা ভাড়া নিয়েছিল।

/আরটি/এফএস/
সম্পর্কিত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
মুগদায় তীব্র গরমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু