X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে সাক্ষাৎকারে তাকসিম এ খান

ওয়াসার পানিতে নয়, বাসাবাড়ির লাইনে সমস্যা

রিয়াদ তালুকদার
২২ মার্চ ২০২৩, ১৬:২০আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ১৬:৫০

নগরবাসীর ঘরে পানি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে ওয়াসা। যারা পানি সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের কাজে এবং পানি ব্যবস্থাপনায় আরও গতিশীলতা আনা দরকার বলে মনে করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। রাজধানীর কাওরানবাজারে ওয়াসা ভবনে রবিবার (১৯ মার্চ) একান্ত সাক্ষাৎকারে তাকসিম এ খান জানান, রাজধানীতে এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণে কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। একই এলাকায় বাসার ধরন, জমির মূল্য, আর্থিক সক্ষমতা এসব বিষয় বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হবে পানির দাম।

তিনি কথা বলেছেন ওয়াসার পানির মান নিয়ে। টাকা দিয়ে পানি কিনলেও তা ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন ঢাকা ওয়াসার এই কর্মকর্তা।

বাংলা ট্রিবিউন: নগরবাসীর ঘরে পানি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে নগরবাসীকে কোনও বার্তা দিতে চান কিনা?

তাকসিম এ খান: পানি মানুষের জীবনের একটি অপরিচ্ছেদ্য অঙ্গ– এটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য পানি দিবস পালিত হয়। আর আমরা যারা পানির অপারেটর, তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য যে পানি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কী কী করা উচিত। এছাড়া সারা দেশের মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয় পানির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মূল বিষয়টি হওয়া উচিত, পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। আপনি যথেচ্ছা পানি ব্যবহার করবেন তা হবে না। বলতে পারেন পানি আমি পয়সা দিয়ে কিনি, তাতে কী হয়েছে। পানি প্রাকৃতিক সম্পদ, এটা যথেচ্ছ ব্যবহার করবেন তা ঠিক নয়। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যবহার করবেন। পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়াই এই দিবসের মূল লক্ষ্য। এই দিনটা আমাদের জন্য একটা অ্যালার্ট। পানির নিশ্চয়তা বিধানে আমরা যেন কামিয়াব হতে পারি, অ্যাট দ্য সেম টাইম পানির ব্যবস্থাপনায় যাতে আরও পদক্ষেপ নিতে পারি এটাই কাম্য।

বাংলা ট্রিবিউন: এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ নিয়ে কী ধরনের অগ্রগতি রয়েছে?

তাকসিম এ খান: আপনার আয় কী রকম, আপনি কেমন বাসায় থাকেন এবং আপনি কত বড় বাসায় থাকেন। সাধারণত কোনও গরিব লোক বড় বাসা নিয়ে থাকতে পারেন না। তার বাসা সবসময় ছোট হয়। এজন্য এটা একটা ক্রাইটেরিয়া ধরা হয়েছে পানির দামের ক্ষেত্রে। আপনি যদি খিলগাঁওয়ে থাকেন কিংবা গুলশানে থাকেন, এই দুই জায়গার জমির মূল্য কি এক হবে? দুই এলাকায় বাসা ভাড়া কি একই রকম হবে? তার মানে গুলশান কিংবা খিলগাঁওয়ে জমির দাম পানির মূল্য নির্ধারণে কাজ করবে।

শুধু এলাকা নয়, পাঁচটি ক্রাইটেরিয়াতে আমরা পাঁচ ভাগ করে দিচ্ছি মূল্য নির্ধারণে। প্রথম ভাগে থাকবে, প্রোডাকশন খরচ ২৫ টাকার নিচে। যারা বস্তি এলাকায় থাকে নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের জন্য। দ্বিতীয় ভাগে থাকবে মধ্যম আয়ের মানুষ। তাদের পানির দাম থাকবে প্রোডাকশন খরচের নিচে নিম্নের মানুষের থেকে একটু বেশি দাম। তৃতীয় ভাগে থাকবে প্রোডাকশন খরচ ২৫ টাকা সেই হিসেবেই মূল্য ধরা থাকবে, মধ্যবিত্ত আপার ক্লাসের। বাকি দুই ভাগ থাকবে মাচ হায়ার। অতি উচ্চবিত্তদের। যারা এফোর্ট করতে পারবে। এখানে ক্রস সাবসিডি করা হবে। আমার উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা, আমার বিক্রিও করতে হবে ঠিক ২৫ টাকায়। তাহলে আমার লাভ হবে না লস হবে না। বস্তিবাসীর কাছে ২৫ টাকার কম মূল্যে পানি বিক্রি করা হলে বারিধারাতে করে দেওয়া হবে ৪৫ টাকা। বারিধারায় লোকসংখ্যা কম। কিন্তু বস্তি এলাকায় লোক সংখ্যা বেশি। বারিধারা উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে ২০ টাকা বাড়তি নিয়ে নিম্নবিত্তদের কাছ থেকে ১০ টাকা কম নিয়ে দামের তারতম্য সমন্বয় করা হবে। এ থেকে ক্রস-সাবসিডি হবে। যার যা ব্যয় করার ক্ষমতা, তাকে সেই ক্ষমতার মধ্যে থেকে পানির দামের বিষয়টি ধরা হবে।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান

বাংলা ট্রিবিউন: এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণের বিষয়টি কবে থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ?

তাকসিম এ খান: প্রকল্পটি এ বছরের মধ্যেই শুরু করতে চাই আমরা। তবে প্রকল্পটি শুরু করতে বেশ কিছু বিষয়ে আমাদের সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে। ফাইন টিউনিং করতে হবে। কম্পিউটার বেইজড সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। প্রতিবারই বাড়ি গিয়ে হিসাব করা সম্ভব নয়। পাঁচটি প্যারামিটার দেওয়া আছে। তা পূরণ হলেই এক একটা বাড়ি বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করে সেভাবে পানির দাম নির্ধারণ করা হবে। গত এক বছর ধরে এ বিষয়ে স্টাডি চলছে। ডোর টু ডোর সার্ভে করা হয়েছে। জিআইএস-এর মাধ্যমে ম্যাপিং করা হয়েছে। এটি করতে গেলে বর্তমান বিলিংয়ে যে সফটওয়্যার রয়েছে সেটার আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। বিলিং সফটওয়্যার ডেভেলপ করতে হবে। সরকারও এ বিষয়ে আন্তরিক।

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকার পাশ ঘেঁষে চারটি নদী রয়েছে সেখান থেকে পানি উত্তোলনের বিষয়ে কোনও প্রকল্প চলমান রয়েছে কিনা ?

তাকসিম এ খান: ঢাকার পাশ দিয়ে যে চারটি নদী গিয়েছে তার পানি পরিশোধন করে ব্যবহার করার উপযুক্ত নয়। আমরা এখন বুড়িগঙ্গা ঠিক না, শীতলক্ষ্যার পানি শোধন করি। এমন একটা সময় আসে বছরে যেটা শোধন করার মতো পর্যায়ে থাকে না। বিধায় প্রি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, স্পেশাল ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ব্যবহার করে প্রথমে শোধন করে নদীর পানিতে কনভার্ট করা হয়। পরবর্তীতে নরমাল শোধনাগারে দিয়ে পানিটা খাবার পানিতে রূপান্তরিত করি। কাজে আমাদের ডবল কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণে আমরা চলে গিয়েছি পদ্মা এবং মেঘনায়।

বাংলা ট্রিবিউন: পানির উৎপাদন খরচ এবং বিক্রিতে কী ধরনের তারতম্য রয়েছে? সরকার কি কোনও ভর্তুকি দিচ্ছে?

তাকসিম এ খান: পানির দাম অবশ্যই ইকোনমিক প্রাইস হওয়া উচিত। অর্থাৎ লাভ দরকার নেই। উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা আর বিক্রি করা হচ্ছে ১৫ টাকায়। এভাবে বিক্রি করলে যেকোনও প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাবে। তবে আমরা হচ্ছি না। কারণ, সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। সরকার আর ভর্তুকি দিতে চায় না। আর সরকার কার টাকা দেয়? সেটা জনগণের ট্যাক্সের টাকা। সরকার ভর্তুকি দিয়ে পানি খাওয়াবে এটা টেকসই কোনও সমাধান না। তাই পানির প্রাইসিংটা সঠিক হওয়া উচিত।

বাংলা ট্রিবিউন: রাজধানীর খিলগাঁও বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও পানিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সে বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

তাকসিম এ খান: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানিতে সমস্যা হচ্ছে এটা সাময়িক। সবসময় থাকার কথা নয়। আর লাল পানি তখনই থাকবে যখন সোর্সে পানি খারাপ আসে। আমার সোর্সে শতভাগ পানি সুপেয়। ঢাকা শহরের পানিতে আর্সেনিক নেই, তবে আয়রন রয়েছে। সোর্সের পানিতে সমস্যা নেই। বাসাবাড়ির লাইনে সমস্যা রয়েছে। পানি ট্রিটমেন্ট করার পর পানি টেস্ট করে পাইপে দেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের যে প্যারামিটার রয়েছে সেই প্যারামিটারে এই পানিগুলো ঠিক আছে। ডিস্ট্রিবিউশনের সমস্যা থাকার কারণে বাসাবাড়ির পানিতে সমস্যা দেখা দেয়। আগে অবৈধ লাইন নেওয়ার সময় পানির লাইনগুলো ফুটো করতো। সেই ফুটোর কারণে বিভিন্ন ময়লা পাইপে ঢুকে যেতো। একাধিক ফুটো থাকার কারণে যখন পানি প্রেসার কম থাকে তখন সেসব পাইপ দিয়ে পোকামাকড় ঢোকে। যতক্ষণ না পর্যন্ত এই লিকগুলো সারানো না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ময়লা পানি পাওয়া যাবে। সেসব পাইপ আমরা চিহ্নিত করার কাজ করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ঢাকা ওয়াসা কী ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে?

তাকসিম এ খান: ঢাকা শহরে আমরা পানি এক্সট্র্যাক্ট করছি। যে হারে ভূগর্ভস্থের পানি তুলছিলাম ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ পানি তোলাটা পরিবেশের জন্য খুব সহায়ক নয়। ২০০৯ সালে আমরা যখন আমাদের মাস্টারপ্ল্যান করি, আমাদের মূল লক্ষ্যই ছিল ভূগর্ভস্থ পানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে ভূপৃষ্ঠের পানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। তখন একটি রেশিও হয় ৭০/৩০। ৭০ শতাংশ সারফেসওয়াটার ও ৩০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করলে তা পরিবেশের জন্য ব্যালেন্স হবে। আমরা শুরু করেছিলাম ১২ শতাংশ সারফেসওয়াটার‌ আর ৮৮ শতাংশ ভূগর্ভস্থের পানি দিয়ে। এখন পর্যন্ত আমরা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫ পার্সেন্ট পানি উত্তোলন করতে পারছি। আর বাকি ৬৫ শতাংশ এখনও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছি। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পাঁচটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হওয়ার কথা ছিল। যদিও আমরা পাঁচটি থেকেই পানি উত্তোলন শুরু করেছি। তিনটি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ হয়ে গেছে। একটি আগে ছিল আরেকটি কাজ চলমান রয়েছে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে ৭০/৩০ পার্সেন্ট আমরা যেতে চাই। ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে কখনও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়, হবে না। এজন্য সারফেস ওয়াটারে যেতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলা ট্রিবিউনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তাকসিম এ খান: আপনাকেও ধন্যবাদ। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য রইলো আন্তরিক শুভকামনা।

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
দুই দফা অভিযানেও খোঁজ মেলেনি শিশুটির
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
সর্বশেষ খবর
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন চালু
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন চালু
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে