X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকারে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

সরকারি ও বিরোধী দলের সহাবস্থানে সংসদ সমৃদ্ধ হয়

এমরান হোসাইন শেখ
০৫ এপ্রিল ২০২৩, ২২:০০আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫২

সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দবিন্দুতে জাতীয় সংসদের অবস্থান বলে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সংসদ কার্যকর থাকলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের উপস্থিতি, পারস্পরিক আলোচনা ও গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সংসদ সমৃদ্ধ হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

স্পিকার বলেন, ‘৫০ বছরে সংসদের পথ চলার যে অভিজ্ঞতা, সেখান থেকে আমাদের অনেক জ্ঞান সঞ্চয় করতে হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক কিছু দেখতে হবে। তার প্রতিফলন ঘটিয়ে সামনের দিকে যেতে হবে।

মাইক অব করে দেওয়া গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়

জাতীয় সংসদকে আরও কার্যকর করে তুলতে স্পিকারের ভূমিকা প্রশ্নে শিরীন শারমিন বলেন, ‘জাতীয় সংসদ পরিচালনার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের যতখানি সময় পাওয়ার প্রয়োজন আছে, বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ আছে, সেগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে— সংসদ সঠিকভাবে কার্যকর থাকবে। বিরোধী দলকে যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে। তাদের কথাগুলো বলার সুযোগ দেওয়া গেলে, তাদের ভেতরে কোনও অসন্তোষ তৈরি হবে না। সংসদ বর্জন করা বা সংসদ বয়কটের সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো। মাইক অব করে দেওয়ার কালচার গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না, অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়। আমি এটাকে উৎসাহিত করি না। কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, কাউকে উপেক্ষা করলে এবং স্পিকার পক্ষপাতদুষ্ট হলে সদস্যরা কিন্তু আস্থা হারাবে। এজন্য স্পিকারের বিশেষ কিছু দায়িত্ব আছে। সেটা তাকে খুব সচেতনভাবে পালন করতে হয়। অনেক ধরনের চাপ স্পিকারকে অনুভব করতে হয়। সেই চাপ সহ্য করে নিয়ে ব্যালেন্স করতে হয়। এভাবে অনেক ব্যালেন্সিংয়ের জায়গা স্পিকারকে বুঝতে হয়।

 জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী (ফাইল ফটো) পার্টির অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে বিএনপির পদত্যাগ

বিএনপির সংসদ সদস্যদের একযোগে পদত্যাগ প্রশ্নে স্পিকার বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যরা যতদিন সংসদে ছিলেন, নিয়মিত সংসদে আসতেন। কথা বলার যথেষ্ট সুযোগও সংসদে তারা পেয়েছেন। যেকোনও কার্যক্রমেই তারা অংশগ্রহণ করেছেন। সেটি বক্তৃতা দেওয়া হোক, প্রশ্নোত্তর হোক বা পয়েন্ট অব অর্ডার হোক— সেই সুযোগগুলো তাদের সব সময় দেওয়া হয়েছে। তারা কিন্তু সংসদের কারণে পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগ করেছেন তাদের পার্টির সিদ্ধান্তে। এখানে সংসদ থেকে কোনোভাবে বিরূপ কোনও আচরণ পেয়েছেন, বা তাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি, তাদের কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে— এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমার জানামতে আসেনি বা নেই। কাজেই সদস্যরা সে রকম কোনও অভিযোগও করেননি। এটা একটা পলিটিক্যাল ডিসিশন ওনাদের, সে কারণে ওনারা পদত্যাগ করেছেন।

সংসদের বাইরের পরিবর্তে ভেতরে থেকেই বেশি ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘আমি মনে করি, সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদে থেকে যতটা কার্যকর ভূমিকার রাখতে পারেন, সেটি সংসদের বাইরে থেকে সম্ভব হয় না। কাজেই আপনি যদি বাইরে আন্দোলন করতে চান, সেটি করতে পারেন, কিন্তু সংসদে আপনার উপস্থিতির অন্য রকম একটা  গুরুত্ব রয়েছে। জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আপনাকে সংসদে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছে। কাজেই তাদের প্রতিও তো আপনার একটি দায়িত্ব রয়েছে যে, আপনি সংসদে তাদের কথা বলেন। তাদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন। সেই কারণেই তারা প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠান। কাজেই সংসদে থেকে যে ভূমিকা একজন  সদস্য রাখতে পারেন, সেটি সত্যিই একটি অনন্য সুযোগ বলে আমি মনে করি।

সংসদে আইন পাসের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে পরপর তিন বার নির্বাচিত এই স্পিকার বলেন, ‘আইন সভার কাজ আইন প্রণয়ন করা। একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আইন পাস হয়। অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে জাতীয় সংসদে বিল আকারে আসে। সংসদে উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিলটিকে স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। স্থায়ী কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি তারা মনে করে যে, বিলে অভিজ্ঞ মতামত প্রয়োজন, সেটাও তারা গ্রহণ করে। সেটিকে তারা একটি রিপোর্ট আকারে সংসদে উপস্থাপন করে। সেই পর্যায়েও যদি কোনও সংসদ সদস্য চান সংশোধনী আনতে পারেন। মন্ত্রী যদি মনে করেন যে, এই সংশোধনী গ্রহণের সুযোগ আছে— তাহলে সেই পর্যায়েও সেটির সুযোগ আছে। তারপর সেই বিল পাস হয়। স্পিকার সেই বিলে সই করার পর সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতির সইয়ের পরই সেটি আইন আকারে প্রকাশিত হয়। কাজেই একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে এই আইনগুলো হয়ে থাকে।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী (ফাইল ফটো) নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, ‘৫০ বছরে সংসদের পথ চলার যে অভিজ্ঞতা, সেখান থেকে আমাদের অনেক জ্ঞান সঞ্চয় করতে হবে। অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক কিছু দেখতে হবে। তার প্রতিফলন ঘটিয়ে আমাদের সামনের দিকে যেতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসন দিয়ে সংবিধানসহ সব কিছু ক্ষতবিক্ষত করা হয়। তখন সব কিছুর চাকা পেছনের দিকে ঘুরে যায়। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। অনেক মৌলিক বিষয় পরিবর্তন করে ফেলা হয়। তবে ৫০ বছরের পথ চলায় গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার পথে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, সেগুলো কিন্তু এখন দূরীভূত হয়েছে। আমরা এখন একটি সাংবিধানিক রেলে (ট্র্যাকে) এসেছি যে,  নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন। সেই নির্বাচনকে অবশ্যই সুষ্ঠু হতে হবে। অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে। অবশই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এটা আমরা সবাই চাই। সেটা আমাদের সবার লক্ষ্য। আশা করি, আগামীতে সেই বিষয়গুলো আরও সুনিশ্চিত করতে পারবো। সুশাসনের বিষয়গুলোতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবো। তবে এর আগে বেসিক ফের্মওয়ার্ককে যথা জায়গায় স্থাপন করতে হবে।’ তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ পরপর তিন বার ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভীতটা তৈরি হয়েছে। সেটাকে আরও সুন্দর করে সাজানোর জন্য আমাদের অনেক কাজ হয়েছে। আরও কাজ করার সুযোগ আছে।

সরকারি ও বিরোধী দলের সহাবস্থানে সংসদ সমৃদ্ধ হয়

পরপর তিন মেয়াদের ধারাবাহিতার মাধ্যমে ব্যাপক অর্জন হয়েছে দাবি করে স্পিকার বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুতেই জাতীয় সংসদ। কাজেই সংসদ যখন কার্যকর থাকে, সেখানে বিরোধী দল ও সরকারি দলের উপস্থিতি, পারস্পরিক আলোচনা ও গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সংসদ সমৃদ্ধ হয়। জনগণের প্রত্যাশাপূরণ ও আশার  প্রতিফলনও সেখানে  ঘটে। এই মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। যার কারণে বাইরে উত্তেজনা, বিশৃঙ্খলা, গাড়ি ভাঙচুর, হরতাল— এ ধরনের বিষয়টি সেভাবে অনুভূত হয়নি। দেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। উন্নয়শীল দেশের কাতারে দেশ উন্নীত হয়েছে। সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে এক সংসদ থেকে আরেক সংসদের ট্রানজেশন সম্ভব হয়েছে বলেই এই অর্জন হয়েছে।

জাতীয় সংসদ, ছবি: সাজ্জাদ হোসেন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে

তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। ৫০ বছরের যাত্রাকালে সব সময় যাত্রাটা কিন্তু এত মসৃণ ছিল না। ’৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাহাত্তরের সংবিধানকে কাটাছেড়া করা হয়েছে। সামরিক ফরমান জারি করে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতিকে আঘাত করা হয়েছে। সেই সময় গণতন্ত্রকে মোটামুটি নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। সংবিধানের মূল জায়গাগুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে আবারও  উত্তরণ ঘটানো এবং গণতন্ত্রকে মূল ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা, সংবিধানের আলোকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রক্রিয়াটা আবারও স্টাবলিস্ট করা সম্ভব হয়েছে। সেই অর্জনটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই। সংবিধানের আলোকে আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চাই। সংসদীয় গণতন্ত্রকে যখন আমরা আরও ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারবো— তখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি শক্তিশালী করার পথ সুগম হবে।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
শ্রমিকরাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখে: স্পিকার
মানবিক সমাজ বিনির্মাণে তরুণদের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে: স্পিকার
শিশু অধিকার বিষয়ে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: স্পিকার
সর্বশেষ খবর
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে