X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরিতেই আছেন বাবুল আকতার, চান পদায়ন

জামাল উদ্দিন
০৭ আগস্ট ২০১৬, ২১:০৮আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৬, ২২:৫৩

 

বাবুল আকতার চাকরিতেই আছেন পুলিশ সুপার বাবুল আকতার। এখন তিনি পদায়ন চান। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এমন অভিমতই জানিয়েছেন তিনি। গত ২৫ জুলাইয়ের পর সদর দফতরে না যাওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। যা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। শিগগিরই তার পদায়ন কিংবা বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে। পুলিশ সদর দফতরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনোভাবও ইতিবাচক বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পদোন্নতি পাওয়ার পর তাকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। তাকে কোথায় পদায়ন করা যায় কর্তৃপক্ষের এমন চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি’র মোড় এলাকায় তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। স্ত্রী খুন হওয়ার দিন তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। মিতু হত্যাকাণ্ডের ছয় দিনের মধ্যেই পুলিশ সদর দফতরে অপরাধবিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আইজিপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় উঠে আসে মিতু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আইজিপিসহ কয়েকজন কর্মকর্তা মিতু হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা জড়িত থাকতে পারেন—এমন বক্তব্য দেওয়ার পর কয়েকজন কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক বক্তব্যে বলেন, না। এ হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা জড়িত নয়। ঘটনা ভিন্ন। এর কয়েকদিন পর গত ২৪ জুন মধ্য রাতে বাবুল আকতারকে রাজধানীর বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ ঘণ্টা পর ২৫ জুন সন্ধ্যায় আবার তাকে বনশ্রীর শ্বশুরের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় পর গত বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনি সদর দফতরে গিয়ে এ সময়ে সদর দফতরে না যাওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়ে যে কথা উঠেছিল সেই বিষয়টি তার ব্যাখ্যায় নেই বলেও সূত্র জানিয়েছে।

বাবুল আকতারের পুলিশ সদর দফতরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাবুল আকতার তার কাছে গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত কোনও কর্মকর্তার কোথাও পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত তার হাজিরা দেওয়ার কোনও বিষয় থাকে না। কেবল প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট সংযুক্ত কর্মকর্তার অবস্থান সম্পর্কে অবহিত থাকাই হচ্ছে নিয়ম।

বাবুল আকতার পদত্যাগপত্র দিয়েছেন কিনা কিংবা ছুটি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ উইং) আকতার হোসেন ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এমন কোনও বিষয় আমার নলেজে নেই। এছাড়া ছুটির বিষয়টিও আমার হাত দিয়েই যাওয়ার কথা। সে রকমও কোনও চিঠিও তার হাত দিয়ে যায়নি।

গত বুধবার পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসপি বাবুল আকতারের পুরো বিষয়টি আমার নলেজে আছে। তার কাজে যোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে তো কোনও সমস্যাও দেখছি না।’

ঘনিষ্ট জনদের বাবুল আকতার জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন সেটা যেন কোনও শত্রুরও মোকাবিলা করতে না হয়। এ দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চান তিনি। স্ত্রী মিতু নিহত হওয়ার পর দুই শিশু সন্তানকে সান্ত্বনা দিতেই বেশি সময় কাটে তার। যেদিন রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান বাবুল আকতার। ওই সময় তার ছোট মেয়েটিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন তিনি। ওই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা রেহাই পেলেও দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তিনি। তাই তিনি চাকরিটা অব্যাহত রাখতে চান বলেও ঘনিষ্টজনদের জানান।

পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাবুল আকতার কাজে যোগ দিতে চান। সেজন্যই তিনি পুলিশ সদর দফতরে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে আর কোনও জটিলতা তারা আশা করেন না। খুব শিগগিরই এর সুরাহা চান তারা।

গত ৫ জুন স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বাবুল আকতার তার দুই সন্তানসহ রাজধানীর বনশ্রীর শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে ২৪ জুন মধ্যরাতে হঠাৎ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ডেকে নেওয়া হলে এ মামলার গতি প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এমনকী গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এসপি বাবুল আকতার স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে আইজিপি একে এম শহীদুল হক গত ২১ জুলাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (বাবুল আকতার) এখনও চাকরিতে বহাল আছেন।’ এর আগে দুয়েকটি গণমাধ্যমে এসপি বাবুল আকতার গত ২০ জুন পদত্যাগ করেছেন বলেও খবর প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ পুলিশের ২৪তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা বাবুল আকতার ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৫ সালে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পিপিএম পদকও পান তিনি। তখন তিনি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ