মালিকানা দ্বন্দ্ব, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসানের শিক্ষার্থীরা ‘হঠাৎ সনদের বৈধতা নিয়ে জটিলতায়’ পড়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের সনদ অবৈধ নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন, ‘২০০৬ সালের পরে নেওয়া সব সনদ অবৈধ’।ফলে বৈধ-অবৈধের জটিল ধাঁধায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সুস্পষ্ট সমাধান চান।
রবিবার সুপ্রিম কোর্টের ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল রেজা এ সব দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল্লাহ আল রেজা বলেন, ‘২০০৬ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসকে অবৈধ ঘোষণা করা হলেও ধানমণ্ডি-৯/এ, বাড়ি নম্বর-২১-এ অবস্থিত প্রধান ক্যাম্পাসকে বারবারই বৈধ ক্যাম্পাস বলা হয়েছে।’
বৈধ বলার কিছু প্রমাণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ২০০৬ এর ১১ অক্টবর প্রফেসর মনিরুল হককে উপাচার্য নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে অনেকবারই ধানমণ্ডির প্রধান ক্যাম্পাসকে ইউজিসি,শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বৈধ ক্যাম্পাস হিসেবেই প্রচার করেছে। সর্বশেষ, ৩১ মে ২০১৫ তারিখে ইউজিসি কর্তৃক জারিকৃত চিঠিতে প্রধান ক্যাম্পাসের সনদের আইনগত বৈধতাও প্রদান করা হয়।’
এদিকে, জানা যায়, ২০০৬ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসকে অবৈধ ঘোষণা করার পরে বিশ্ববিদ্যালয়টি মালিকপক্ষ আদালতে রিট আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালু রাখে। পরে গত ১৩ এপ্রিল দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার চূড়ান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের আদেশ পুলিশ সদর দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালে সে অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৫ জুলাই দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ওই রায়ের কথা উল্লেখ করে রেজা বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ অবৈধ মর্মে কোনও ঘোষণা করা হয়নি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, ২০০৬ সালের পরে নেওয়া সব সনদ অবৈধ। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস থেকে সনদ গ্রহীতাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজমান। অর্জিত সনদধারীরা এখন সমাজের সর্বস্তরে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকভাবে এবং স্ব স্ব কর্মস্থলে ব্যাপক নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। ফলে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে আগে অর্জিত সনদধারীদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন জানিয়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল রেজা বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে আগে অর্জিত সনদধারীদের বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি বলে আমরা আজ চরম অনিশ্চয়তায় ধাবিত হয়েছি।’
রেজা বলেন, ‘কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির অবৈধ এবং অনৈতিক কার্যকলাপের দায়ভার প্রকৃত শিক্ষার্থীদের ওপর আজ অর্পণ করা হচ্ছে। প্রকৃত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার এবং ইউজিসি কর্তৃক বৈধতার ভিত্তিতেই অনুমোদিত ক্যাম্পাস (ধানমণ্ডি-৯/এ, বাড়ি নং-২১) থেকে সদন অর্জন করেছেন। তাহলে কেন তারা কিছু অসাধু অনৈতিক দুর্নীতিবাজদের বোঝা নিজেরা বহন করবেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী সরকারি (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জগন্নাথ, বুয়েটসহ অন্যান্য), প্রথমসারির বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে সুনামের সঙ্গে দেশের এবং বিদেশের সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। তারাও আজ চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন।’
এসময় রেজা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চারটি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলি হচ্ছে, সব বৈধ ক্যাম্পাস (ধানমণ্ডি-৯/এ, বাড়ি নং-২১) সনদগ্রহীতাদের দেশের সব সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সব ধরনের বাধা শিথিলকরণ; সব বৈধ ক্যাম্পাস (ধানমণ্ডি-৯/এ, বাড়ি নং-২১) সনদগ্রহীতাদের দেশের সব ধরনের সরকারি এবং বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের বাধা নিবারণ; বৈধ ক্যাম্পাসের (ধানমণ্ডি-৯/এ, বাড়ি নং-২১)সনদগ্রহীতাদের সব একাডেমিক ডকুমেন্টস এবং তথ্যাদি সরকার অথবা ইউজিসি কর্তৃক নিয়োজিত অথবা অনুমোদিত কোনও কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যত শিক্ষার্থীদের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কোনও ডকুমেন্ট বা কোনও সনদ নতুনভাবে ইস্যুকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বৈধ ক্যাম্পাসের (ধানমণ্ডি-৯/এ, বাড়ি নং-২১) সনদগ্রহীতারা বিদেশে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয কর্তৃক অর্জিত সনদের সত্যায়নকরণের সুযোগ প্রদান করা।
/আরএআর//এবি/
আরও পড়ুন