X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঢামেক হাসপাতালে ‘স্পেশাল দুইশ ওয়ার্ডবয়’ যেন ডাক্তার!

আমানুর রহমান রনি ও আমিনুল ইসলাম বাবু
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২৩:০০আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২৩:৫২

ঢামেক

রোগীর ওষুধ খাওয়ানো, খাবার বণ্টন করা, স্যালাইন লাগিয়ে দেওয়া, বেড ঠিক করা, ইনজেকশন দেওয়া, ঝাড়ু দেওয়াসহ চিকিৎসকদের সঙ্গে ছুটে চলেন তারা। দেখলে যে কেউ মনে করবেন, তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের স্টাফ। আবার তাদের ঢাকাও হয় ‘স্পেশাল ওয়ার্ডবয়’। কিন্তু আসলে তারা কেউ এই হাসপাতালের স্টাফ না। এদের সংখ্যা দুইশ থেকে তিনশ।পুরনো ওয়ার্ডবয় ও ওয়ার্ড-মাস্টারদের সহযোগিতায় তারা হাসপাতালে এসেছেন। কারণ, নিয়মিত স্টাফরা তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিজেরা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এরা স্বেচ্ছাসেবক। এরা চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতা করেন। তাদের একটি ফরম্যাটে (ছকে) আনার চেষ্টা চলছে।



স্পেশাল ওয়ার্ড বয় সুমন অভিযোগ রয়েছে, সিনিয়র ওয়ার্ডবয়রা কাজে ফাঁকি দিতে এদের নিয়ে আসেন। অদক্ষ এসব ‘স্পেশাল ওয়ার্ডবয়’ রোগীর ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তবুও তারা হাসপাতালে রয়েছেন।
সর্বশেষ, শুক্রবার বিকেলে এই বয়দের চিকিৎসার পর বিপ্লব মণ্ডল (২৪) নামে এক তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় ‘স্পেশাল ওয়ার্ডবয়’ সুমনকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ।

শনিবার সকালে ঢামেক হাসপাতালের মর্গের সামনে গিয়ে পাওয়া গেল বিপ্লব মণ্ডলের বাবা বিনোদ মণ্ডল, বড়ভাই মিন্টু মণ্ডল ও অন্যান্য স্বজনদের। তারা নিহত বিপ্লবের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

নিহত বিপ্লবের গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জের মডেল থানার শাক্তা ইউনিয়নের মধ্যকচড়ে। তারা তিন ভাই। বিপ্লব সবার ছোট। ঢাকার কেরানীগঞ্জে গত রবিবার রাতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয় সে। এরপর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক)হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় থেকেই মিন্টু মণ্ডল তার ভাইয়ের সঙ্গে ঢামেক হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন।

বিপ্লব মণ্ডল মিন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর বিপ্লবকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। ঢামেক হাসপাতালের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে সে চিকিৎসাধীন ছিল। সে সুস্থ হয়ে উঠেছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসক আমার ভাইকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্রও দেন। আজ শনিবার সকালে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। বৃহস্পতিবার রাতে আমার মা নন্দী রানী ও বাবা বিনোদ মণ্ডল আমাদের সঙ্গে হাসপাতালেই ছিলেন। শুক্রবার সকালে বিপ্লব খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে। এরপর সে বাইরে যাওয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করে। এরপর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমি, মা, বাবা ও বিপ্লবসহ কলেজ ভবনের সামনে হাঁটতে বের হই। এসময় বিপ্লব সিএনজি অটোরিকশা দেখিয়ে দিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা বলছিল। দুর্ঘটনার পর ও ভালো করে কথা বলতে পারতো না। তাই,ইশারায় বারবার গাড়ি দেখিয়ে দিচ্ছিল। আমি বললাম, শনিবার সকালে চলে যাবো। তারপর আমরা কিছুক্ষণ হেঁটে আবার ওয়ার্ডে ফিরে যাই। সকালের নাস্তা খাওয়ানোর পর বিপ্লবকে ওষুধ খাওয়ানো হলে বিপ্লব ঘুমিয়ে পড়ে। মা-বাবা দুপুরে বাড়ি চলে যান। দুপুর দুইটার দিকে বিপ্লব ঘুম থেকে ওঠে। এসময় সে জানি কেমন কেমন করছিল। তার বুকের ভেতরে কফের শব্দ হচ্ছিল।’

মিন্টু মণ্ডল বলতে থাকেন, ‘এরপর আমি দৌড়ে ওয়ার্ডের নার্সের রুমে যাই। এসময় সেখানে কোনও ওয়ার্ডবয়, নার্স ছিল না। ওয়ার্ডবয় সুমন ছিল। সুমনকে আমি বলি, বিপ্লব যেন কেমন কেমন করছে। তিনি আমাকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে যেতে বলেন। আমি সুমনকে নিয়ে সেখানে গিয়ে রেহানা নামে এক সিনিয়র স্টাফ নার্সের সঙ্গে কথা বলি। তিনি বিপ্লবকে অক্সিজেন দিতে বলেন এবং একটি ইনজেকশন লিখে দেন। আমি হাসপাতালের সামনে থেকে ইনজেকশন কিনে নিয়ে আবার ওই নার্সের কাছে যাই। নার্স একটি সিরিঞ্জে ইনজেকশন নিয়ে নেন। এরপর তিনি বলেন, এটাতো সুমনই দিতে পারবে। ওকে দিতে বলেন। এরপর অক্সিজেনের মাস্কের ভেতর দিয়ে সুমন বিপ্লবের নাকের ভেতরে ইনজেকশন পুশ করে। এর দুই মিনিটের মাথায় বিপ্লব মারা যায়।’

নিহত বিপ্লব মণ্ডলের পরিবার সুমন সম্পর্কে মিন্টু বলেন, ‘আমি দেখতাম সুমন ওয়ার্ডে ঝাড়ু দেয়। অথচ তাকে এই কাজ করতে বলা হলো। কেন বলা হলো, তা আমি জানি না। আমার ভাইকে তারা মেরে ফেলেছে। আমার ভাই কথা বলতো, হাঁটতো। নিজে নিজে ভাত খেতো। তার বাড়ি যাওয়ার কথা; অথচ এখন লাশ নিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে, বিপ্লবের মৃত্যুর পর তার স্বজনেরা এর প্রতিবাদ করেন। ওয়ার্ডের ভেতরে সুমনকে আটক করে তারা বিচার দাবি করেন। পরবর্তীতে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের পুলিশ সদস্যরা সুমনকে আটক করে বক্সে নিয়ে যান। এরপর সেখানে শাহবাগ থানার পুলিশ যায়। তারা সুমনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। নিহত বিপ্লবের ভাই মিন্টুর কাছ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি)গ্রহণ করে পুলিশ। তারপর লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ২০০ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিল ওয়ার্ড বয় শহিদুল। কিন্তু তিনি ছুটিতে থাকায় তার স্থলে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড বয় হানিফের সেখানে দায়িত্ব পালনের কথা। তবে হানিফ তখনও ওই ওয়ার্ডে যায়নি। সে কারণে বহিরাগত ওয়ার্ড বয় সুমন ইনজেকশন পুশ করেন।

শনিবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের প্রভাষক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বিপ্লবের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার (বিপ্লব) ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। যেহেতু, বিষয়টি আমাদের হাসপাতালের, সে কারণে এবিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারবো না।’

এদিকে, শনিবার সকালে সুমনকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠায় শাহবাগ থানা পুলিশ। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সুমনকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তবে এ ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও কথা বলতে চায়নি। জানা গেছে, শনিবার সকালে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঢামেক হাসপাতালের উপপরিচালক (ডিডি) ডা. খাজা আব্দুল গফুরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, সহকারী পরিচালক (এডি) মোজাম্মেল হক ও জরুরি বিভাগের আরএস মাহবুব এলাহী।
এ ঘটনার পরও বহিরাগত ওই সব ‘স্পেশাল ওয়ার্ড বয়’ শনিবারও দায়িত্বে পালন করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি স্বীকার করেছে।

ঢামেক হাসপাতালের উপপরিচালক (ডিডি) ডা. খাজা আব্দুল গফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে এই রকম দুইশ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তারা আমাদের নিয়োগপ্রাপ্ত কোনও কর্মচারী নন। হাসপাতালের পুরনো কর্মচারীরা তাদের নিয়ে আসেন। বেশির ভাগই তাদের আত্মীয়-স্বজন। তারা চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতা করেন। তাদের কোনও পরিচয়পত্র নেই। তারা কাজ শিখছে। মূলত ট্রলি আনা-নেওয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন।’

ডা. খাজা আব্দুল গফুর আরও বলেন, ‘আমরা চিন্তাভাবনা করছি তাদেরকে একটা ফরম্যাটের মধ্যে নিয়ে আসার। সে কাজ চলছে এখন।’

এসব বয় চিকিৎসা দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের কোনও রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার কথা নয়। সেই সুযোগও নেই। তারা কেন এটা করলো, তা খতিয়ে দেখার জন্যই আমার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করে পাঁচ অথবা সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে।’

নিহত বিপ্লব মণ্ডলের বাবা বিনোদ মণ্ডল (বামদিকে) নিহত বিপ্লবের বাবা বিনোদ মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। আর কোনও বাবা যেন এরকম সন্তান না হারায়।’

ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মূলত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করেন। তারা ট্রলি টানা, ওয়ার্ডে খাবার আনা, মূল্যবান কাগজপত্র আনা, ঝাড়ু দেওয়া, ফ্লোর মোছাসহ পরিচ্ছন্ন কাজ করে থাকেন। এছাড়াও তারা চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতা করেন।  অভিযোগ রয়েছে, ওয়ার্ড বয়দের কেউ কেউ তাদের কাজ নিয়মিত করেন না। তারা এসব কাজ বহিরাগতদের দিয়ে করিয়ে নেন।

২ হাজার ৬শ বেডের ঢামেক হাসপাতালে সবসময় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার রোগী থাকেন। হাসপাতালে চারটি ব্লক রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে একজন করে ওয়ার্ড মাস্টার থাকেন। প্রশাসনিক ব্লকের ওয়ার্ড মাস্টারের নাম শামসুল আলম। তিনি চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। ১০৫ থেকে ১১৫ নম্বর ওয়ার্ড, বাগান, পরিচালকের কার্যালয় ও নতুন ভবনের নিচতলা থেকে চারতলা পযন্ত তার নিয়ন্ত্রণে। তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করার কথা। তবে শনিবার গিয়ে তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি।

জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টারের নাম আবুল হোসেন। তার নিয়ন্ত্রণে জরুরি বিভাগের নিচতলা থেকে পঞ্চমতলা পর্যন্ত। এছাড়াও ওটি, জরুরি বিভাগের ওটি এবং ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডের আরও তিনটি ওয়ার্ড তার নিয়ন্ত্রণে। এই ব্লকে স্পেশাল বয় সবচেয়ে বেশি।

২০৪ থেকে ২২০ নম্বর ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান। কেবিন ব্লকের ওয়ার্ড মাস্টার বাবুল মিয়া। বহির্বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন। এখানে ১০ থেকে ১২ জন স্পেশাল বয় কাজ করেন। নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুল আজিজ সরকার। নতুন ভবনের পঞ্চম থেকে দশমতলা পর্যন্ত তার অধীনে। এখানে ৮০ থেকে ৯০ জন স্পেশাল বয় কাজ করেন। বার্ন ইউনিটের ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুল গফুর। এখানেও স্পেশাল ওয়ার্ডবয় কাজ করেন।

হাসপাতালে কর্মরত স্পেশাল ওয়ার্ড বয়রা জানিয়েছেন তিনশয়ের মতো ওয়ার্ড বয় রয়েছেন। তাদের চাকরি হবে হবে করেও হচ্ছে না। তারা তাদের জীবন-বৃত্তান্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে না। এদের অধিকাংশই তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।

শারমিন শনিবার বিকেলে হাসপাতালের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, এক নারী ঝাড়ু দিচ্ছেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার নাম শারমিন। এক বছর ধরে তিনি এ কাজ করেন। তার স্বামী নেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টাই এখানে কাজ করেন বলে জানান তিনি।

শারমিন বলেন, ‘কোনও স্টাফ আসেন না। তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করি আমরা। এখনও আমাদের নিয়োগ হয়নি। কোনও কোনও সময় দুই শিফটেরও কাজ করতে হয় আমাদের।’

তার সঙ্গে কথা বলে ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা হয়, নুরুল ইসলাম নামে এক স্পেশাল ওয়ার্ড বয়ের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে এখানে কাজ করেন তিনি। তিনি একজন প্রতিবন্ধী। রোগীদের সেবা করে যে বকশিস পান, তা দিয়ে সংসার চলে তার। তার বাসা হোসেনি দালান এলাকায়।

ওই ওয়ার্ডে মনির নামে আরও এক স্পেশাল বয় জানান,তিনিও ১০ বছর ধরে কাজ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজ করেন। এক স্বজনের মাধ্যমে তিনি এখানে এসেছেন।এ রকম ২০৫ নম্বর ওয়োর্ডের মো. আলম সাত বছর,২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিরিন ১৫ বছর, ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের জেসমিন সাত বছর ধরে ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ‘স্পেশাল বয়’ হিসেবে কাজ করছেন।

শনিবার বিকেলে জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আজও স্পেশাল বয় রয়েছেন। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে কম। প্রতি শিফটে সেখানে ২০ থেকে ২৫ জন স্পেশাল ওয়ার্ড বয় কাজ করলেও আজ  পাঁচ থেকে সাতজন কাজ করছেন। বিপ্লবের মৃত্যুর কারণে অনেকেই আজ  ভয়ে কাজে আসেননি বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। হাসপাতালের নিয়মিত স্টাফরা  নিজেরা কাজ না করে এদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। দিনশেষে রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে স্পেশাল বয়দের যে টাকা-পয়সা দেন, তাতেও ভাগ বসান নিয়মিত স্টাফরা।

স্টাফদের নিয়মিত হাজিরা নিশ্চিত করার জন্য একটি ফিঙ্গার-প্রিন্ট মেশিন বসানো হয়েছিল। তবে সেটি বর্তমানে নষ্ট হয়ে আছে।

এ বিষয়ে ওয়ার্ড মাস্টার ও কর্মাচারীদের নেতা শামসুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে নতুন নতুন ভবন হচ্ছে। হাসপাতাল বড় হচ্ছে। কিন্তু এখনও ৭৮০ ওয়ার্ড বয়। তা দিয়ে কীভাবে আপনি ২৪ ঘণ্টা চার হাজার রোগীকে সেবা দেবেন! এই সুযোগে স্পেলাশ বয়রা ঢুকে পড়েছে। তারপরও আমরা বলেছি, এদের যাচাই-বাছাই করে যাদের রাখার মতো, তাদের একটি পরিচয়পত্র দিয়ে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, ‘সবকিছুতেই সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এসব ঠিক করা দরকার। চিকিৎসক, নার্সদের কাজ কেন ওয়ার্ড বয়রা করবেন। ওয়ার্ড বয় করবেন তার নিজের কাজ।’

ঢামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল গনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্টাফদের মনিটরিংয়ের জন্য কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা নিয়মিত হাজিরাও দেন। তবে আমাদের জনবল কম। একারণে এরা (স্পেশাল বয়) কাজ করেন।’

আরও পড়ুন:

ওয়ার্ড বয়ের ইনজেকশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি

ওয়ার্ড বয়ের ইনজেকশনে মারা গেল রোগী!

/এআরআর//এআইবি/এবি/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘বারবার নিষেধের পরেও চালক বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন বাসটি’
‘বারবার নিষেধের পরেও চালক বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন বাসটি’
পোশাকশ্রমিকদের ৯ দাবি
পোশাকশ্রমিকদের ৯ দাবি
প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের দাবিতে আইনি পরামর্শ চায় ফিফা
ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের দাবিতে আইনি পরামর্শ চায় ফিফা
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক