X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার নেতার মৃত্যুঞ্জয়ী কক্ষের সামনে নির্বাক মানুষের ভিড়

আমানুর রহমান রনি
০৩ নভেম্বর ২০১৬, ০২:১৬আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ০২:২৪

বুধবার সারাদিন অনেক দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধু ও চার নেতাকে হত্যার সেল পরিদর্শন করেন ‘এতোদিন শুধু ইতিহাস পড়ে জেনেছি এবং মানুষের মুখে শুনেছি, কারাগারের ভেতরে চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আজ সেই সেলটির সমানে দাঁড়িয়ে এমন নৃশংসতা বিশ্বাস হয় না। কিভাবে এমন দেশপ্রেমিক মানুষের বুকে ঘাতকরা গুলি চালিয়েছে! তাদের ধিক্কার জানাই। এসব ঘাতকদের বিচার নিশ্চিত করা উচিৎ।’

নাজিম উদ্দিন রোডের পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর শিক্ষার্থী জেমন আহমেদ অরন্য এভাবেই বাংলা ট্রিবিউনের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।  ২২৮ বছরের ঐতিহাসিক পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে বুধবার কারাগারের ভেতরে প্রদর্শনী সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। আলোকচিত্রের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার সেল দেখারও সুযোগ ছিল দর্শনার্থীদের। উদ্বোধনের দিন ব্যাপক মানুষের ঢল নামে। এমনকি অনেকেই টিকিট না চলে যেতে বাধ্য হন।

বুধবার সর্ব সাধারণের জন্য প্রদর্শনীটি উন্মুক্ত করা হয়।

শুধু অরণ্যই নয়, কারাগার ও আলোকচিত্র প্রদর্শন করতে আসা অনেকেই তাদের অনুভুতির কথা জানিয়েছেন। অরণ্যের সঙ্গেই এসেছেন তার ৮ সহপাঠি। অরণ্য বলেন, ‘খবর পেয়েই ছুটে এসেছি। জেলখানার ধারণা আগে যেমন ছিল তা এখন পাল্টে গেছে। বুঝার চেষ্টা করছি, বন্দিরা এখানে কিভাবে ছিলেন।’

জাতীয় চার নেতাকে হত্যার সেলটির সামনে দাঁড়িয়ে অরণ্যের বেদনার্ত প্রশ্ন, ‘মানুষ কীভাবে এতো নৃশংস হয়! দেশের গুরুত্বকপূর্ণ ব্যক্তিদের এভাবে হত্যা করলো?’ অরণ্য জানান, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতাকে হত্যার সেলটি আরও ভালো করে সংরক্ষণ করা উচিৎ। সব সময় সবার জন্য উন্মুক্ত করলে আরও ভালো।  

জাতীয় চার নেতাকে যে সেলে হত্যা করায় তা ‘মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ স্মৃতি কক্ষ’ নামে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেলটি পরিদর্শন শেষে মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘এটা উন্মুক্ত করায় ভালো হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। আমাদের নেতারা যে কত কষ্ট করেছেন। তা চোখে দেখে নতুন প্রজন্ম উপলব্ধি করবে।’ তিনি মনে করেন, আরও বৃহৎ পরিসরে এই প্রদর্শনীর বিষয়টি প্রচার করা ও সময় আরও বাড়ানো উচিৎ। তাহলে আরও বেশি মানুষ আসতে পারবে।

কারাগারের ভেতরে সব বয়সের মানুষের ভিড় করেন

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম রাফি। বাবা নজরুল ইসলামের সঙ্গে কারাগার দেখতে এসেছে। রাফি বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘আমিই বাবাকে এখানে নিয়ে আসতে বলেছি। বন্দিদের সেল, চার নেতাকে হত্যার সেল ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘরটি দেখেছি। ভয়াবহ সব দৃশ্য! গুলিচিহ্ন এখনও রয়েছে। আমরা দুঃখ লাগছে। আমার বন্ধুরাও আসবে। সবাইকে আসতে বলব এখানে।’ রাফি জানায়, টিকিটের মূল্য আরও কম হলে ভালো হতো।

বাবা একেএম হোসেনের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ আলোকচিত্র দেখছিল পাঁচ বছরের মারিজ সিনতাহা উমামা। স্কুল শেষ করে বুধবার দুপুরে বাবার সঙ্গে কারাগারে আসে সে। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ছবি দেখেই সে চিনতে পেরেছে। যে ছবির বিষয়বস্তু সে বুঝতে পারছিল না, বাবা ঘটনার বর্নণা করে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এরকম অসংখ্য  দৃশ্য চোখে পড়েছে।

দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলো বঙ্গবন্ধুর সেল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। এই কারাগার তার সাক্ষী। এটিকে আরও ভালো করে সংরক্ষণ করা দরকার।’

এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যখন বাংলা ট্রিবিউন প্রতিবেদকের কথা হয় তার সহপাঠি রবিউল্লাহ ছিল পাশে দাঁড়ানো। তিনি বলেন, ‘২২৮ বছরের ইতিহাস আমাদের অনেক কিছুই মনে করিয়ে দেয়।’ রবিউল্লাহ মনে করেন, এখানে আসলে মানুষের দেশপ্রেম বৃদ্ধি পাবে।

টিকিট না পেয়ে অনেকেই ফেরত গেলেন

বুধবার কারাগার উন্মুক্ত করার প্রথম দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ছিলো উপচেপড়া ভিড়। তবে বিকাল সোয়া ৩ টায় কারা কর্তৃপক্ষ টিকিট বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়। এ সময় অনেকেই টিকিট নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে তারা চলে যান। অনেকেই এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।প্রথম দিনে পাঁচ ঘণ্টায় চার হাজার দুইশ মানুষ কারাগারে টিকিট কেটে প্রবেশ করেছেন।

দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন। অনেকেই টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পুরনো কারাগার সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তিনটি সেশনে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা প্রথম, দুপুর ১টা থেকে ৩টা দ্বিতীয় ও সাড়ে ৩টা  থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তৃতীয় সেশনে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। প্রতিজন হিসেবে টিকেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০টাকা।

কর্নেল ইকবাল হাসান জানান, প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সাবেক প্রতিনিধি ইমিরেটাস প্রফেসর ড. এ কে আব্দুল মোমেন। টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ নতুন কারাগারে মহিলা বন্দিদের সন্তানদের জন্য খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয়ে ব্যয় করা হবে।

ছবি: আমানুর রহমান রনি।

/এএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী