প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকের বাস সৌদি আরবে। সঙ্গত কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও অন্য দেশের প্রবাসীদের তুলনায় বেশি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছর ধরে সৌদি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে গেছে। উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিরসনে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীদের নিয়ে রেমিটার্স কনফারেন্স (অর্থপ্রেরক সম্মেলন) করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাতে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
রিয়াদের শেরাটন হোটেলের লবিতে আয়োজিত এই কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্। এ সময় বক্তব্য রাখেন শ্রমকাউন্সেলর সারোয়ার আলম, ইকোনমিক কাউন্সেলর ড. মো. আবুল হাসান, কাউন্সিলর ও কার্যালয় প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে মো. ফারুক উল-হক এবং দূতাবাসের ডিপুটি চিফ ড. মো. নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সোনালী ব্যাংক শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল ওয়াহাব।
দূতাবাসের সোনালী ব্যাংক প্রতিনিধি শাখা আয়োজিত ওই সম্মেলনে প্রবাসীদের জানানো হয়, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের মধ্যে সৌদি আরব থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠানো হয়ে থাকে। গত পাঁচ অর্থবছরে ব্যাংকের মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি এবং দেশের উন্নয়নে তা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এসব খতিয়ান তুলে ধরে সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সৌদি আরবের পর রেমিট্যান্স পাঠানো দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরব আমিরাত, তৃতীয় অবস্থানে আমেরিকা। এরপরে রয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলি।
সম্মেলনে দূতাবাস কর্মকর্তারা গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্সের তথ্য উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দেখা যাচ্ছে কয়েক বছর ধরেই রেমিট্যান্স প্রবাহের খতিয়ানগুলি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। অথচ ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এর পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। যদিও সৌদি আরবের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহের সূচক এখনও অন্য দেশগুলো থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের তুলনায় ওপরে।
অবশ্য বক্তারা বলেছেন, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে তুলনামূলক কম দেখা গেলেও ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরেও দেশে অর্থ পাঠানো বলবত রয়েছে। তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন, এসব অর্থ অন্য কোনও পন্থায় হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানো হচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহের সূচক কমে যাচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অর্থপ্রেরণকারী প্রবাসীরা তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনায় অংশ নেন। এতে ইউসুফ খান, আব্দুল জলিল, জিয়াউদ্দিন, মাহফুজুর রহমান, গোলাম মহিউদ্দিন, জাকির হোসেন এমআর মাহবুবসহ রিয়াদে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজের দুই চেয়ারম্যান।
বক্তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, দূতাবাসের সোনালী ব্যাংক শাখার প্রচারণা সৌদি আরবের সব অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত তেমনভাবে বিস্তার লাভ করেনি। প্রকৌশলী জিয়াউদ্দিন বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকটি প্রবাসীদের জন্য সরকারের প্রধান সহায়ক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এর কার্যকর পদক্ষেপ সম্পর্কে সিংহভাগ প্রবাসীরা এখনও জানেন না।
অনুষ্ঠানে আরেক প্রবাসী এমআর মাহবুব ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের জন্য পেনশন স্কীম চালু করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, এতে করে প্রবাসীরা দেশে ফিরে গিয়ে অবসর জীবনে একটি স্বাচ্ছন্দ্যমূলক অবলম্বন খুঁজে পাবে। ফলে একমাত্র ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠবে তারা।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্ও প্রবাসীদের জন্য পেনশন স্কিম চালুর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এটি একটি উপযোগী প্রস্তাব। পরিশ্রমী প্রবাসীদের অবসর জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণে আমাদের আন্তরিকতা রয়েছে। এছাড়া তিনি বিকাশের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর বিষয়টিকে ‘নীরব হুন্ডি’ উল্লেখ করে এ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
তিনি শংকা প্রকাশ করে বলেন, বিকাশ খুব দ্রুত সময়ে দেশে টাকা পাঠালেও এক সময়ে এটি গ্রাহকের জন্য বড় ধরনের বিপদ আনতে পারে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ডেসটিনি’র অর্থ সংগ্রহের উদারহণ টেনে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির মতো একদিন দেখা যাবে বিকাশ-এর গ্রাহকরাও তাদের পাঠানো অর্থ হাতে পাচ্ছেন না।
অনুষ্ঠানে দেশে সর্বাধিক অর্থ প্রেরণের জন্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জেডইউ সাইদ সিআইপিকে পুরস্কৃত করা হয়।
/টিএন/