X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কারনেট সুবিধার গাড়ি বিক্রি: ব্যবস্থার মুখে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রধানরাও

জামাল উদ্দিন
১২ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:০৭আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:০২

রাজধানী থেকে আটক একটি রোলস রয়েস শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসা গাড়ি ব্যবহারে বাংলাদেশের আইন ভঙ্গ করায় বিদেশি কূটনীতিক ও সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। দীর্ঘদিন ধরে এসব গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তো বটেই সংস্থাগুলোর বর্তমান প্রধানদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউএনডিপির শীর্ষ কর্মকর্তাদের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে তলব করা হয়েছে। কয়েকজন এসে তাদের কর্মকর্তাদের শুল্ক আইন ভঙ্গের বিষয়ে জবাব দিলেও কেউ কেউ আরও সময় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শুল্ক গোয়েন্দারা।
সর্বশেষ, সোমবার উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকের নামে মিথ্যা ঘোষণায় আনা একটি রোলস রয়েস ঘোস্ট মডেলের দামি গাড়ি আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। এর আগে গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানের ইংলিশ ইন অ্যাকশনের অফিস থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মকর্তা জুনিয়র প্রফেশনাল মিজ নিসকে জ্যানসেনের পাজেরো জিপ, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ইউএনডিপি’র সাবেক কর্মকর্তা কিশোর কুমার সিং এর ব্যবহৃত একটি বিলাসবহুল গাড়ি ও গত ২৮ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা থেকে জব্দ করা হয় ইউএনডিপির সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. স্টিফেন প্রিজনারের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা মিতসুবিসি পাজেরো মডেলের একটি বিলাসবহুল আরেকটি গাড়ি আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩৯টি গাড়ি এখন পর্যন্ত আটক করেছেন তারা।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, কারনেট সুবিধায় এসব গাড়ি নিয়ে আসার প্রধান শর্ত হচ্ছে ব্যবহার শেষে ওই কর্মকর্তা দেশে ফেরার সময় শুল্ক অধিদফতরকে অবহিত করে নিজ দেশে গাড়িটি ফেরত নিয়ে যাবেন। আর যদি গাড়ি তিনি হস্তান্তর বা বিক্রি করতে চান তাহলে সরকারি প্রচলিত বিধি অনুযায়ী যথাযথ শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে তা হস্তান্তর করা যাবে। কিন্তু, শুল্ক অধিদফতরকে অবহিত না করেই এসব গাড়ি গোপনে হস্তান্তর অথবা বিক্রি করে দিয়েছেন এসব কর্মকর্তা ও বিদেশিরা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসীরাও আছেন এমন তালিকায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ৩৯টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছি। এসব গাড়ির মালিকদের অধিকাংশই বাংলাদেশি বংশদ্ভূত বিভিন্ন বিদেশি নাগরিক। তারা দেশে আসার সময় শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি নিয়ে আসেন। কিন্তু, ফেরত যাওয়ার সময় গাড়িগুলো নিয়ে না গিয়ে শুল্ক কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই থার্ড পার্টির কাছে বিক্রি করে দেন।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দাতা সংস্থা, এনজিও কিংবা কূটনৈতিক মিশনে চাকরি করছেন এমন ব্যক্তিরাও শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি নিয়ে আসেন। তাদেরও অনেকে আইন ভঙ্গ করে শুল্ক না দিয়ে এসব গাড়ি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই শুল্ক গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সম্প্রতি আমরা এসব গাড়ি জব্দের মিশনে নেমেছি। এ পর্যন্ত তিনটি উন্নয়ন সংস্থার ও একজন কূটনীতিকের গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু গাড়ির ব্যাপারে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলোকেও আমরা পর্যায়ক্রমে আটক করবো’, বলেন তিনি।
সিলেট থেকে আটক তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যিনি শুল্ক আইনসহ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করছেন তিনি চলে গেলেও তার প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান আছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সনদের ভিত্তিতেই তাকে কাস্টমস থেকে পাশবুক দেওয়া হয়েছে। সেজন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরও এখানে দায় রয়েছে। যদি কোনও কারণে কোথাও কোনও গরমিল হয়, শুল্ক ফাঁকি হয়, মিশন প্রধান নিজে দায়িত্ব নিয়ে সেটা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন সেটাই নিয়ম। তাই আমরা শুধুমাত্র ব্যবহারকারীকে নয়, মিশনের প্রধানকেও তলব করছি। তাদের বক্তব্য নিচ্ছি। তারা কী দায়িত্ব পালন করছেন সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি।’
তিনি বলেন,‘গাড়ি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাশবুকের বাইরে বাড়তি কোনও সুবিধা নিয়েছেন কিনা সেটাও তদন্ত করা হচ্ছে। শুল্ক আইন ভঙ্গের সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিও সামনে চলে আসছে।’
মইনুল খান আরও বলেন, ‘যারা চলে গেছেন তারা না আসলে তাদের সদর দফতর আছে। তাছাড়া প্রত্যেকটি সংস্থারই নিজস্ব নিয়মনীতি ও আইন রয়েছে। কেউই সেই আইনের ঊধ্বে নন। যদি কেউ তার পূর্ববর্তী কর্মস্থলে অপরাধ করে থাকেন সেটা প্রমাণিত হলে তাহলে বর্তমান কর্মস্থলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।এছাড়া তাকে চিরদিনের জন্য বাংলাদেশে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হবে। বিষয়টি জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবরেও চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাতে সে অন্য কোনও দেশে গিয়েও আর এ ধরনের কাজ করতে না পারে।’
এদিকে, গত ৭ ডিসেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন,‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের শুল্ক আইন ভঙ্গের ঘটনায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চার প্রকট অভাব বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশের শুল্ক আইন ভঙ্গ করার মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাবেক কর্মকর্তাগণ জেনেভা কনভেনশনের স্বীকৃত রীতিনীতিও নির্লজ্জভাবে লঙ্ঘন করেছেন।’
এ ঘটনায় টিআইবি উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ জানিয়ে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় এসব শুল্ক আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সকল প্রকার সহায়তা দিতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন-

আইএলও কর্মকর্তার গাড়ি আটক
সিলেটে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ

রাজধানী থেকে রোলস রয়েস গাড়ি আটক


/জেইউ/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা