X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন থেকে উজাড় শতবর্ষী মাতৃবৃক্ষ

সমির মল্লিক
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৩:৪৮আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৩:৫৫

শতবর্ষী মাতৃবৃক্ষ থেকে কেটে নেওয়া কাঠ নিয়ন্ত্রণহীন থাকায় অবাধে বৃক্ষ নিধন চলছে পাহাড়ে। বিশেষ করে মাতৃবৃক্ষ ধ্বংস করায় পাহাড়ি বনের টিকে থাকাটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বৃক্ষ নিধন থেকে বাদ যাচ্ছে না রির্জাভ ফরেস্টও। ধারাবাহিকভাবে মাতৃবৃক্ষ নিধন হতে থাকলে একসময় বনের অস্তিত্ব ও বন্যপ্রাণির আবাসস্থল হুমকির মুখে পড়বে।
একসময় পাহাড়ের বনে দেড়-দুইশ বছর বয়সী চম্পাফুল গাছ, আদি গর্জন, জারুল, জাম আর সেগুন গাছের দেখা মিলত। কিন্তু বনায়ন ধ্বংস, নতুন করে বনসৃজন বন্ধ, অবাধে গাছ কাটার পরিণতিতে শতবর্ষী এসব বৃক্ষ আজ বিলুপ্তির পথে।
পাহাড়ে বিভিন্ন বনাঞ্চল, বিশেষ করে রির্জাভ ফরেস্টে দেড়-দুইশ বছর বয়সী মাতৃবৃক্ষ ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি অঞ্চলে কাচালং রিজার্ভ রেঞ্জের অধীনে প্রায় ৪ লাখ একর বন রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের কাচালং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মাচালং-সাজেক অংশ থেকে প্রায় ২শ বছর বয়সী চম্পা ফুল গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা। সাজেকে পর্যটন এলাকা গড়ে ওঠায় নতুন রিসোর্ট নির্মাণের কারণেই অবাধে চলছে চম্পা ফুল গাছসহ শতবর্ষী চাপালিশ, জাম, গর্জন, আদি জারুল, সেগুনসহ মূল্যবান কাঠের গাছ।
মাতৃবৃক্ষ থেকে কেটে নেওয়া কাঠ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাজেকে রিসোর্ট নির্মাণের জন্য গত দুই বছরে প্রায় শতাধিক মাতৃবৃক্ষ নিধন হয়েছে। মূলত বেশি বয়সী বৃক্ষের কাঠ নির্মাণ কাজে বেশি উপযোগী ও এসব কাঠের স্থায়িত্ব বেশি হওয়ার কারণেই নির্বিচারে কাটা হচ্ছে এসব শতবর্ষী বৃক্ষ। এতে এদিকে যেমন বন ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে পশুপাখির আবাসস্থল।
সাজেকের স্থানীয় আদিবাসী কারবারি মনা লুসাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিসোর্ট নির্মাণের জন্য গভীর বন থেকে গাছ কেটে বনেই সনাতনি কড়াত দিয়ে গাছ চেরা হচ্ছে। এসব গাছ থেকে পাওয়া কাঠ রিসোর্টের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক-দেড়শ বছর বয়সী চম্পা ফুলের কাঠ অনেক বেশি টেকসই। এসব গাছ লম্বা ৫০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হয়, প্রস্থে এগুলো ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক লকে (এক টুকরো কাঠ) প্রায় ৭০-৮০ ঘনফুট কাঠ হয়।’
একেকটি শতবর্ষী চম্পা ফুলের গাছ এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয় বলে জানান মনা লুসাই। রিসোর্টের কাজ ছাড়াও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও অনেকে এই গাছের কাঠ ব্যবহার করে থাকেন বলে জানান তিনি।
কাচালং রির্জাভ ফরেস্টসহ রাঙামাটি জেলার বনাঞ্চলের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ লাখ একর। এই এলাকার সবচেয়ে বড় রির্জাভ ফরেস্ট কাচালং সংরক্ষিত বন। এর আয়তন একসময় ছিল প্রায় ৪ লাখ একর, যার অনেকাংশই এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। দীর্ঘ বিস্তৃতি, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নজরদারির অভাবে ধ্বংস হচ্ছে বন। বন বিভাগের লোকবলের সংকটের কারণে বনের সার্ভে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। মাচালং-সাজেক অংশের বাঘাইহাট রেঞ্জের এক রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্ব ১১ জনের জনবল নিয়ে চলছে রেঞ্জটি। এ রেঞ্জের আয়তন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার একর।
পাহাড়ি বনাঞ্চল এসব সংকটের কারণেই প্রতিনিয়ত চলছে মাতৃবৃক্ষ নিধন। অথচ মাতৃবৃক্ষ নিধন হলে বনে নতুন করে চারা গাছ জন্ম নেওয়ার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে মাতৃবৃক্ষের নিধনের কারণে তাই বন্ধ হয়ে গেছে বনের প্রাকৃতিক বিস্তৃতি। মাতৃবৃক্ষ পাহাড়ি ভূমির ক্ষয়রোধেও বড় ভূমিকা রাখে। এর শেকড় অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকায় তা মাটির ক্ষয় রোধ করে। তাই মাতৃবৃক্ষ নিধন হওয়ায় প্রতিবছর পাহাড়ে ভূমিধ্বস বাড়ছে আশংকাজনক হারে।
মাতৃবৃক্ষ নিধনের কারণে একইসঙ্গে বিপন্ন হচ্ছে বণ্যপ্রাণির আবাসস্থল। আর একসময় সাজেক-লক্ষীছড়ি-মাচালং রেঞ্জে প্রচুর পাখি চোখে পড়লেও বর্তমানে এই অঞ্চলে পাখির দেখা পাওয়া ভার। এছাড়া, আগে পাহাড়ে বুনো হাতির পাল, কয়েক প্রজাতির বানর, ধনেশ পাখি, সাম্বার হরিণ, বনরুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির বসবাস ছিল। বন ধ্বংসের কারণে এগুলোও আর চোখে পড়ে না। বন ধ্বংস হওয়ার পরিণতিতে কমে গেছে পাহাড়ের ঝিরিতে পানির পরিমাণও। শুষ্ক মৌসুমী ঝরনা-ঝিরিতে এখন পানি থাকে না বললেই চলে।
দেশের বিভিন্ন রিজার্ভ ফরেস্টের মাতৃবৃক্ষসহ বন রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন বন বিভাগের কঠোর নজরদারি ও স্থানীয়দের সচেতনতা। তা নিশ্চিত করতে না পারলে অবিলম্বে নিশ্চিহ্ন হবে পার্বত্য অঞ্চলের মূল্যবান প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
ছবি: জীবন চৌধুরী

আরও পড়ুন-

আকাশে উড়াল ভালোবাসা

কুমিল্লার নামেই বিভাগের দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন

/এফএনএ/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ