X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘হচ্ছে না, কথা হচ্ছে না!’

জাকিয়া আহমেদ
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৩১আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৩৭

হাসপাতালের বিছানায় মেয়ের সঙ্গে মা রহিমা খাতুন মেয়েটি ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে, হাঁটাচলা করতে পারছে, কিন্তু কথা বলতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলে। অনেক কিছু মনে করতে পারছে না। হয়তো যা বলার চেষ্টা করছে, সেটা বলতে পারছে না।আর তখন নিজেই বলে ওঠে, ‘হচ্ছে না, কথা হচ্ছে না।’

জয়পুরহাটের সেই নির্যাতিত মেয়েটিকে নিয়ে একথাই জানালেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি’র (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) কর্মকর্তা ডা. আফরোজা বেগম। একই কথা বলেন মেয়েটির মা রহিমা খাতুন।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে গিয়ে জানা যায়, কিছুক্ষণ আগেই মেয়েকে নিয়ে দাঁতের সিটিস্ক্যান করাতে গিয়েছেন মা রহিমা খাতুন। একটু পরেই সিটিস্ক্যান পরীক্ষা শেষ করে মেয়ের হাত ধরে সেখানে হাজির তিনি। এ প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মেয়েটা এখন হাঁটতে পারছে। কথা বলতে পারছে। তবে সেই কথা স্পষ্ট না। তবুও আমি খুশি। ডাক্তাররা বলছেন, মেয়ে আমার সুস্থ হয়ে উঠবে।’

প্রসঙ্গত, গতবছরের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঘরে ঢুকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কালাই থানার বানদিঘী গ্রামের দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহতাবস্থায় মেয়েটিকে ২৪ ডিসেম্বর সকালে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সেদিনই রাত দেড়টার দিকে ঢাকার আগারগাঁও নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢামেকে তার অপারেশন হয়। এরপর মেয়েটির চিকিৎসায় গত ২৮ ডিসেম্বর ঢামেকের নিউরো সার্জারি, গাইনোকোলজি, জেনারেল সার্জারি এবং ওসিসি (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার)-এর কনসালটেন্টদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়।

এরপর আইসিইউতে ১০দিন, এইচডিইউতে ১ মাস ৩ দিন থাকার পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই থেকে মেয়েকে নিয়ে এখানেই আছেন রহিমা খাতুন।

মেয়েকে ওসিসির ভেতরে থাকা নির্ধারিত ওয়ার্ডে রেখে এসে রহিমা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোট ১ মাস ২দিন পর আমার মেয়েটার জ্ঞান ফিরে এলেও অনেক কথাই সে বলতে পারে না। শুধু একদিন ওর বাবাকে দেখে জোরে জোরে কেঁদেছিল। নিজের নাম, বড় ভাইয়ের নাম বলতে পারলেও ছোট ভাইটার নাম বলতে পারে না। আর শুধু বলে বাড়ি যাবো।

রহিমা খাতুন বলেন, ওর সঙ্গে অনেক গল্প করতে বলেছেন চিকিৎসকরা, কিন্তু বেশি কথাও আবার বলা যায় না। অনেক কথা বললে মাথা চেপে ধরে,  বলে মাথার ভেতরে ব্যাথা করছে। আর মেয়েটা বোঝে তার অনেক কথা স্পষ্ট না, তখন নিজেই বলে ওঠে, আমার কথা হচ্ছে না।

এসময় সামনে বসা ওসিসির কর্মকর্তা ডা. আফরোজা বেগম বলেন, ও যখন আইসিইউতে ছিল তখন ভাবিনি মেয়েটাকে ফিরে পাবো আমরা, আর এখনতো সে হাটাচলা করতে পারছে, খাবারও খাচ্ছে ঠিকমতো। কিন্তু কথা বলতে পারছে না, আধো আধো বোলে কথা বলে শিশুদের মতো। কিছু জিজ্ঞেস করলে বেশিরভাগই পাশে থাকা মা থাকা মাকে দেখিয়ে দেয়, তাকে উত্তর দিতে বলে।

এসময় মা রহিমা খাতুন বলেন, আগামীকাল দাঁতের সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট পাওয়ার পর একটা অপারেশন হবে, তারপরই বাড়ি যেতে চাই, মেয়েটা বাড়ি যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।

এদিকে, নির্যাতিত মেয়েটার প্রথম চিকিৎসক  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের দিক থেকে এখন আর কিছু করার নেই, সে সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে মানসিক ট্রমা থাকায় তাকে হাসপাতালের মানসিক বিভাগের চিকিৎসকরা দেখছেন। একটু সময় লাগলেও মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠবে বলেই বলেন ডা. অসিত চন্দ্র সরকার।

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত