X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে তৈরি হয় এমপি লিটন হত্যার প্রেক্ষাপট

জামাল উদ্দিন ও জিল্লুর রহমান পলাশ
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৪৩আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৪৯

ডা. আবদুল কাদের খান

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনকে চিরতরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন একই আসনের সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খাঁন। আর এজন্য নানামুখী প্রেক্ষাপট তৈরিতেও কাজ করেন তিনি। সর্বোপরি সুন্দরগঞ্জের রাজনৈতিক মেরুকরণের পুরো সুযোগটিই কাজে লাগান ধুরন্ধর কাদের। সুবিধা না পেয়ে এমপি লিটনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা-কর্মীদের প্রলোভন ও উস্কানি দিয়ে লিটনের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়।শিশু সৌরভের গুলির ঘটনায় গড়ে তোলা হয় আন্দোলন।এমপি লিটনের লাইসেন্স করা অস্ত্র জব্দ ও ফেরত না দেওয়ার নেপথ্যেও ভূমিকা রাখেন কাদের।তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সুন্দরগঞ্জের রাজনৈতিক নেতারা এমনটাই মনে করেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, রাজনৈতিক কারণে কাদের খাঁনের সঙ্গে কিছু বিরোধ ছিল এমপি লিটনের। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে, সেটা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। এমনকি হত্যাকাণ্ডের পরও পারিবারিক বিরোধসহ কিছু বিষয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামনে নিয়ে আসা হয়। এর নেপথ্যের কুশীলবও ছিলেন কাদের খান  বলে মনে করেন তারা।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৪ সালে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজুরুল ইসলাম লিটন এমপি হওয়ার পর থেকেই তার ইমেজ নষ্ট করার জন্য নানা প্রপাগান্ডা করতে থাকেন একই আসনের সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খাঁন।’

রাজু আহমেদ বলেন, ‘‘শিশু সৌরভের গুলির ঘটনার কয়েকদিন পর এক সন্ধ্যায় ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কয়েকজন ক্যাডার নিয়ে উপস্থিত হন কাদের খাঁন।  তিনি সেখানে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই প্রপাগান্ডা করতে থাকেন। কাদের বলেন, ‘গাইবান্ধা-১ আসনে আবার নির্বাচন হবে।’ এ অবস্থায় হাবিবুর ও ইয়াকুবসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী তাকে ‘পঁচা মাল’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ করেন। তখন কাদের খাঁন অস্ত্র বের করে তাদের গুলি করার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘লিটন জেলে যাবে এবং তার সাজা হয়ে যাবে।’ পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। 

শিশু সৌরভের গুলির ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে সেখানে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠে। যার নেপথ্যে স্থানীয় জাতীয়পার্টি ও জামায়াত নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। এই আন্দোলন চাঙ্গা করতে প্রচুর অর্থও খরচ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, জাতীয় পার্টির মনোনয়নে কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খাঁন এমপি নির্বাচিত হন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এরপর তার বিরুদ্ধে টিআর-কাবিখার অর্থ আত্মসাতসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে। ২০১২ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) চন্দন কুমার সরকার কাদেরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন দফতরে টিআর-কাবিখার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চারটি মামলা দায়ের করে।যা এখনও বিচারাধীন আছে। তখন চন্দন সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজুরুল ইসলাম লিটনের সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতেন। কাদেরের ধারণা ছিল,চন্দনকে ব্যবহার করে লিটন তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করিয়েছেন। পরে লিটন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরও চন্দন তার সঙ্গে ছিলেন বেশ কিছু দিন। কিন্তু বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিতে না পেরে চন্দন সাবেক এমপি কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সুযোগটি লুফে নেন কাদের। হত্যাকাণ্ডের দিন পর্যন্ত কাদের তাকে ব্যবহার করেছেন।   

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক বিরোধের কারণে হয়েছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন। জামায়াত সবসময় তাকে সরিয়ে দিতে এবং আওয়ামী লীগের অবস্থান দুর্বল করতে নানাভাবে প্রেক্ষাপট তৈরির কাজ করেছে। সাবেক এমপি কাদেরের সঙ্গেও রাজনৈতিক কারণে তার কিছুটা বিরোধ ছিল। কিন্তু কাদের খাঁন এভাবে একজন এমপিকে হত্যা করে পথ পরিষ্কার করবেন ভাবিনি। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এমপি লিটনের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ান তিনি ।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ শামস উল আলম হিরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘রাজনীতিবিদদের সরিয়ে রাজনীতি দখলে কাউকে হত্যা ঘৃণিত ও জঘন্য। নিজ বাড়িতে সরকার দলের একজন এমপিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা নজীরবিহীন। হত্যাকারী হিসেবে কাদের খাঁন নিজে দায় স্বীকার করেছেন।’ এজন্য কাদের খাঁনের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডে ভাড়াটে কিলারসহ তার উপযুক্ত শাস্তি হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে আর কেউ সাহস পাবে না ।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সুন্দরগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটের অংশ হিসেবে কাদের খাঁন যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজের সঙ্গে বৈঠক করেন।’ এমপি লিটন হত্যার নেপথ্যে যতগুলো কারণ রয়েছে, সবগুলো সামনে রেখেই তারা তদন্তের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন এবং শিগগির এ হত্যা মামলার চার্জশিট দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।

/জেইউ/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন: 

এমপি লিটন হত্যা: যেভাবে গ্রেফতার হলেন কর্নেল কাদের খাঁন

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!