X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি লিটন হত্যা: যেভাবে গ্রেফতার হলেন কর্নেল কাদের খাঁন

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:০৫আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:১৩

ডা. আবদুল কাদের খান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ফাহিম মিয়া (২১) নামে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রের মোবাইল ফোনের ছিনতাইয়ের সূত্র ধরেই এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার মামলায় একই আসনের সাবেক এমপি (অব.) কর্নেল ডা. আবদুল কাদের খাঁনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশ হত্যায় অংশ নেওয়া চার কিলারকেও গ্রেফতার করে। গ্রেফতারদের মধ্যে তিনজনই ফাহিমের মোবাইল ফোন ছিনতাই করে।

১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ পাকা সড়কের নতুন বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাইবান্ধা সরকারি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র ফাহিম মিয়া। পাহারা দিচ্ছিলেন তার মুরগির খামার। রাত ১২টার পর ফাহিম মুরগির খামারের পাশেই পাকা রাস্তার ধারে বসে তার মোবাইল ফোন দেখছিলেন। এ সময় গাইবান্ধার দিক থেকে মোটরসাইকেলে করে আসা তিন যুবক তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘কে তুই, এখানে এতো রাতে কি করিস?’। এরপর মোটরসাইকেল থেকে দুজন নেমে এসে একজন তার মাথায় পিস্তুল ঠেকায় আর অন্যজন তার শরীর তল্লাশি চালায়। এদের মধ্যে একজন মোটরসাইকেলেই বসা ছিল। কিন্তু কিছু না পাওয়ার পর তারা ফাহিমের হাতে থাকা সিম্ফোনি কালো রংয়ের মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত গতিতে সুন্দরগঞ্জের দিকে চলে যায়।

ফাহিম মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি চিৎকার করি। আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসে। পরে তারা আলো জ্বালিয়ে দেখতে পান একটি পিস্তল পড়ে আছে, তাতে ছয়টি গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন। সেটি উদ্ধারের পর ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. সবুজ চৌধুরীকে বিষয়টি অবগত করি। পরে সবুজ চৌধুরী বিষয়টি পরের দিন সকালে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করেন।’ তবে ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় ওই তিনজনের কাউকে তিনি চিনতে পারেননি বলে জানান।  

মেম্বর মো. সবুজ চৌধুরী বলেন, ‘পিস্তলের ম্যাগাজিন ভর্তি গুলির বিষয়টি অবগত হওয়ার পর পরের দিন (২ ডিসেম্বর) সকালে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কলেজছাত্র ফাহিমের বাড়িতে পুলিশ পাঠায়। এরপর পুলিশ ফাহিমসহ স্থানীয় এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।’

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘গুলিভর্তি কালো রংয়ের ৭ দশমিক ৬৫ পিস্তলের ম্যাগাজিন উদ্ধারের ঘটনায় ২ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়। এরপর ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারে নানা তৎপরতা চালান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে মোবাইল ফোনের আইএমইএ নম্বর সংগ্রহ করা হয়। এরপর ট্র্যাকিং করে খুঁজে বের করা হয়, গাইবান্ধা জেলা শহরের পুরাতন ব্রিজ রোড় এলাকার মুজাহিদ নামে এক যুবক মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুজাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মুজাহিদ মোবাইল ফোনটি ২ হাজার ৫০০ টাকায় তার পরিচিত সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের রায়হানের কাছে থেকে কিনেছেন। এরপর রায়হানকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি আনোয়ারুল ইসলাম রানার কাছ থেকে মোবাইলটি কেনার কথা স্বীকার করেন। এরপর রানার পরিচয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর নানা দিক মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যায়। পরে এমপি লিটন হত্যায় রানা, মেহেদী ও শাহীনের অংশ নেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে তাদের তিনজনের মোবাইল ফোন ট্রাকিং করে সাবেক এমপি কর্নেল আবদুল কাদের খাঁনের যোগসূত্র পাওয়া যায়।’

ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াকুব আলী বলেন, ‘সাবেক এমপি কাদের খাঁনের একাধিক ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। তার ক্যাডার বাহিনী অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করেন। এসব অবৈধ অস্ত্র রাতের আধারে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দিয়ে ছিনতাই করতেন। এভাবে নতুন বাজারের ফাহিম নামে কলেজ ছাত্রের মোবাইল ফোনও অন্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করেন।’

এদিকে, এমপি লিটন হত্যার ১ মাস ২০ দিন পর পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আবদুল কাদের খাঁনকে নজরদারিতে রাখেন। এর মধ্যে পুলিশ রানা, মেহেদী ও শাহীনকে গ্রেফতার করে। এরপর বগুড়ার বাসা থেকে কাদের খাঁনকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার রানা, মেহেদী ও শাহীন ইতোমধ্যে আদালতে তাদের জবানবন্দিতে ফাহিমের মোবাইল ছিনতাইসহ এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

উল্লেখ্য, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে শাহবাজ (মাস্টাপাড়া) এলাকায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় লিটনের বোন বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে নামে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সকল বিভাগ।

এদিকে, এমপি লিটন হত্যার পর থেকে লিটনের স্বজন ও আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করে আসছিলেন, জামায়াত-শিবির এমপি লিটনকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করেছে।

তবে এ বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘লিটন হত্যার পর আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এমপি লিটন হত্যার রহস্য এখন অনেকটা উন্মোচন হয়েছে। তবে তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আটক ও গ্রেফতারদের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষে এ বিষয়টি দেখা হবে।’

/এমডিপি/টিএন/


আরও পড়ুন: 
এমপি লিটনকে হত্যার সময় ডা. কাদের ‘অফিসিয়ালি’ ছিলেন ভারতে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কলকাতায় নামতেই পারলো না কেকেআরের বিমান!
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কলকাতায় নামতেই পারলো না কেকেআরের বিমান!
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ ভবন ধস, আটকা পড়েছে অনেকে
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ ভবন ধস, আটকা পড়েছে অনেকে
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি