জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষকদের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে বিভাগে তালা ঝুলিয়েছেন তারা। শিক্ষকদের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।মার্কেটিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্স (ইভিনিং এমবিএ) ও হেকেপ (HEQEP) প্রকল্পের অর্থের ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় বিভাগীয় সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আরিফের মধ্যে। এ নিয়ে বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফলে দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন বিভাগের শিক্ষকরা। বিভাগে এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে একাধিকবার কথা কাটাকাটি হয়েছে বলেও জানা যায়। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেন তালুকদার বিভাগের প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর থেকে বিভাগে ক্লাস পরীক্ষাসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক বিল্ডিং-এর ৪র্থ তলার একপাশে ফিন্যান্স বিভাগ ও অন্যপাশে মার্কেটিং বিভাগ রয়েছে। পাশেই ফিনান্স বিভাগে শিক্ষার্থীদের পদচারণা থাকলেও মার্কেটিং বিভাগ অংশে নেই কোনও ছাত্রছাত্রী। প্রবেশপথ থেকে শুরু করে বিভাগটির প্রতিটি ক্লাসরুম, শিক্ষকদের বসার রুম, সেমিনার, বিভাগীয় অফিসরুম সবখানেই ঝুলছে তালা। শিক্ষকদের এমন সিদ্ধান্ত আগেভাগে শিক্ষার্থীদের না জানানোর ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এলেও হয়নি কোনও ক্লাস বা পরীক্ষা। এতে চরম ক্ষুব্ধ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিভাগ ঘুরে পাওয়া যায়নি কোনও শিক্ষককে। এমনকি বিভাগীয় চেয়ারম্যানকেও পাওয়া যায়নি। অফিসরুম তালাবদ্ধ থাকায় অফিসে কর্মরত কর্মচারীরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন অফিসের সামনেই। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেটিং বিভাগের একজন শিক্ষক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভাগের এ রকম অন্তঃকোন্দল নতুন নয়। ইভিনিং এমবিএ থেকে প্রাপ্ত মোটা অঙ্কের টাকার হিসাব না মেলায় ও ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়েই মূলত এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি।’
এদিকে শিক্ষকদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, শিক্ষকদের হুটহাট এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া আগের শিক্ষার্থীদের কথা ভাবা উচিত ছিল। শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের জের শিক্ষার্থীরা ভোগ করবেন, এটা তো হয় না। শিক্ষকদের কোনও সমস্যা থাকলে তা নিয়ে উপাচার্যের কাছে তারা যেতে পারতেন। কিন্তু হঠাৎ এমন ক্লাসরুমে তালা লাগানো তাদের মোটেও উচিত হয়নি। অবিলম্বে পুনরায় ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে বিভাগের চেয়ারম্যানকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেন তালুকদারের ফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান ইভিনিং এমবিএ কোর্সের ডিরেক্টর মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিভাগ কেন বন্ধ তা বিভাগের চেয়ারম্যান বলতে পারবেন। যেহেতু তিনি বিভাগ পরিচালনা করেন, সেহেতু তার জানার কথা বিভাগ কেন বন্ধ। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ এ সময় বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে টাকার ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে তার কোনও দ্বন্দ্ব নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। আজ (২২ মার্চ) ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারিনি। আগামীকাল বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’
/ এমএনএইচ/
