X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নামেই আছে, কাজে নেই ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’

এস এম নূরুজ্জামান
১৮ এপ্রিল ২০১৭, ২০:৩৬আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:০৮





বডি ওর্ন ক্যামেরা ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাম। সোমবার (১৭ এপিল) রাজধানীর ব্যস্ততম সোনারগাঁও মোড় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। মোটরসাইকেলের ওপর বসে ফার্মগেটগামী যানবাহন ও চালকদের কাগজপত্র পরীক্ষা করছিলেন তিনি। সার্জেন্ট সাইফুল ইসলামের বুক পকেটে ওয়াকিটকি ও কোমরে মামলা দেওয়ার যন্ত্র রয়েছে। এ দুটো ছাড়াও তার কাছে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’ থাকার কথা। কিন্তু এ যন্ত্রটি তার কাছে দেখা যায়নি। কেন বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করছেন না-এ প্রশ্নের জবাবে সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বডি ওর্ন ক্যামেরার কথা শুনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাইনি।’

২০১৪ সালের ডিসেম্বর ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্যকারী যানবাহন ও চালক শনাক্ত, দুর্ঘটনা, কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয় বাড়াতে সড়কে দায়িত্বরত পুলিশের অনিয়ম প্রতিরোধ ও তল্লাশি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করা হয়। কিন্তু আড়াই বছরে এ ক্যামেরা দিয়ে সড়কের একটি অনিয়ম ও অসঙ্গতির ঘটনাও ধরা পড়েনি। কারণ পুলিশ সদস্যরা এখন আর এ ক্যামেরা ব্যবহার করেন না। সাড়ম্বরে চালু করা এ কার্যক্রম কার্যত বন্ধ।


বডি ওর্ন ক্যামেরা শুধু সোনারগাঁও মোড় নয়, গাবতলী, টেকনিক্যাল, সংসদ ভবন এলাকা, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, পল্টন মোড়, শাহবাগ, মগবাজার ও হাতিরঝিল এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কোথাও কোনও ট্রাফিক সার্জেন্টের শরীরে এই বিশেষ ক্যামরার ব্যবহার দেখা যায়নি।  
হাতিরঝিল এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সার্জেন্ট বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্ডি ওর্ন ক্যামেরা দেখেছি, তবে ব্যবহার করিনি। এই ক্যামেরার বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে স্টোরে। বেশিরভাগ ক্যামেরার ভিডিও ধারণের ক্ষমতা নেই। নতুন করে আরও ক্যামেরা আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেগুলো আসলে হয়তো আবার চালু করা হবে।’

রাজধানীর আরেক ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাদের কারও শরীরে এই ক্যামেরা দেখা যায়নি। দায়িত্বরত সার্জেন্ট মাসুদ রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বডি ওর্ন ক্যামেরা পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। কিন্তু ফার্মগেট এলাকায় এই ক্যামেরা দেওয়া হয়নি। ক্যামেরা থাকলে উল্টো পথে চলাচলকারী সব চালকের চিত্র ধারণ করতে পারতাম। ভিআইপি, আইনজীবী, পুলিশ ও মিডিয়ার গাড়ির চালকরা নিয়ম মানতে চায় না। আবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে পরে অস্বীকার করে বসেন। তাই ক্যামেরা থাকলে আমাদেরই কাজে সুবিধা হতো।’
শেরে বাংলা নগরে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্ট সোহেনা রেজা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদের মধ্যে এমনিতেই বাঁচি না। তার ওপর কোমরে থাকে মামলার মেশিন, বুকে থাকে ওয়াকিটকি। আর কত বহন করবো এই শরীরে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা অসঙ্গতির চিত্র ধারণ করতে এ ক্যামেরা চালু করা হয়েছিল। সড়কে প্রায়ই যানবাহন চালক, পথচারী ও ট্রাফিক পুলিশের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। পথচারী ও যানবাহন চালকরা আইন অমান্য করে থাকনে। আবার কখনও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের অস্বাভাবিক আচরণের অভিযোগ ওঠে। এসব ক্ষেত্রে যাত্রী বা চালকের অভিযোগ থাকে পুলিশের বিরুদ্ধে। আবার পুলিশের অভিযোগ থাকে যাত্রী বা চালকের বিরুদ্ধে। অনেক সময় রাস্তায় দুর্ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটন করা যায় না। তাই সবগুলো বিষয় মনিটরিংয়ের জন্য ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার রাস্তায় বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ক্যামেরাটি দায়িত্বরত পুলিশের বুকে কিংবা কপালে লাগানো থাকে। ১৫টি ক্যামেরা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের চারটি জোনে ১০০টি ক্যামেরা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপ কমিশনার মাইনুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাস্তায় পাবলিক কিংবা পুলিশের অস্বাভাবিক কোনও কর্মকাণ্ড এখন পর্যন্ত বডি ওর্ন ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। তবে গুরুত্বর্পূণ কাজে এগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।’
বডি ওর্ন ক্যামেরা
ডিএমপি’র আরেক কর্মকর্তা জানান, চীনে তৈরি জিও-পিআরও মডেলের প্রতিটি ক্যামেরার দাম ২০ হাজার টাকা। এই হিসেবে ১০০ ক্যামেরার দাম ২০ লাখ টাকা। এছাড়া এসব ক্যামেরা সচল রাখতে আনুষাঙ্গিক আরও যন্ত্রপাতি কেনা হয়ে থাকে নিয়মিতভাবে। রক্ষণাবেক্ষণ ও টানা লাইভ রেকর্ডের জন্যও এটি ব্যয়বহুল। সম্পূর্ণ এইচডি ফরম্যাটে ১৬ মেগাপিক্সেলের এ ক্যামেরায় একটানা ৮ ঘণ্টা দৃশ্য ও শব্দ ধারণ করা যায়। ঝড়-বৃষ্টিতেও এগুলো সচল থাকে। রাতের অন্ধকারে ভিডিও না হলেও রেকর্ড করা যায়। ইচ্ছে করলেই কেউ সেটি মুছে ফেলতে পারবে না। প্রয়োজন হলে এই ক্যামেরা দিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন র্কমর্কতারা মাঠের চিত্র কন্ট্রোল রুমে বসেই সরাসরি মনিটরিং করতে পারেন। তবে সেটি আরও ব্যয়বহুল। আবার মেমোরিকার্ড থেকে ডাউনলোড করে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে এতসব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এসব ক্যামেরা রাস্তার কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ধরতে পারেনি।
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাস্তায় যখন বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু থাকে, স্বাভাবিকভাবেই তখন সেই ক্যামেরার সামনে ট্রাফিক পুলিশ কিংবা সাধারণ লোকজন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে না। রাস্তায় বহুমাত্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এ ক্যামেরা একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।’

ছবি- নাসিরুল ইসলাম

/জেইউ/এসটি/টিএন/

আরও পড়ুন: যেভাবে বাস লুকিয়ে রেখেছেন মালিকরা

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ