X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টনক নড়েছে প্রশাসনের, নিয়ন্ত্রণে আসছে হার্টের রিং এর দাম

জাকিয়া আহমেদ
২২ এপ্রিল ২০১৭, ০৭:৫৯আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০১৭, ০৭:৫৯

হার্টের রিং ওষুধ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হার্টের রিং বা করোনারি স্টেন্ট বিক্রি হচ্ছে আমদানি মূল্যের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি দামে। তবে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর টনক নড়েছে ওষুধ প্রশাসনের। তারা উদ্যোগ নিচ্ছে করোনারি স্টেন্টের দাম নির্ধারণের।

ইতোমধ্যেই মূল্য নির্ধারণে গঠিত হয়েছে কমিটি, তবে কেবলমাত্র মূল্য নির্ধারণ করে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না, সেখানে নিয়মিত মনিটরিং রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল হার্টের রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্টেন্ট বা রিং এর মূল্য নির্ধারণে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। সেখানে অধিদফতর ২৮ রকমের করোনারি স্টেন্টের এমআরপি (ম্যাক্সিমাম রিটেইল প্রাইজ) নির্ধারণ করে দেয়। এই দাম অনুযায়ী দেশের সব সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে রোগীদের কাছে রিং বিক্রি করতে হাসপাতাল বাধ্য থাকবে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবলমাত্র একটি বা দুটি নয়, বাংলাদেশে ব্যবহৃত সবগুলো করোনারি স্টেন্টের মূল্য না কমালে রোগীদের ভোগান্তি কমবে না। কারণ, রোগী কিংবা তার পরিবার এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শের ওপরই নির্ভরশীল, তারা নিজেরা কখনোই কোম্পানি নির্ধারণ করেন না।

মো. ইলিয়াস হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বাবার হার্টে রিং পড়ানোর তারিখ চলতি মাসের ২৯ তারিখ। গত ১৫ তারিখ রিং পড়ানোর কথা থাকলেও দুইটা রিং এর জন্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ আরও টাকার দরকার ছিল। তখন টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় ১৫ দিন সময় নিয়েছিলাম। এখন যদি সরকার নির্ধারিত দামে রিং পাই তাহলে কেবল আমি নই, দেশের মানুষ উপকৃত হবে।’

বাংলাদেশে সব ধরণের মেডিক্যাল ডিভাইস শুল্কমুক্ত। কিন্তু দেশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত বছরের অক্টোবর মাসে এক রোগীর হার্টে রিং (করোনারি স্টেন্ট) পরানো হলে তার থেকে তিনটি রিং এর দাম রাখা হয় ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। অথচ সেই সময়ে তার আমদানি মূল্য ছিলো ৯৩ হাজার টাকা। দেশের ক্যাথল্যাবগুলোতে বহুল ব্যবহৃত একটি DES স্টেন্ট হলো বোস্টন সাইন্টিফিক কোম্পানির একটি করোনারি স্টেন্ট হলো ‘প্রোমাস এলিমেন্ট’। যার আনুমানিক আমদানি মূল ২৩ হাজার টাকা, অথচ এটি জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে বিক্রি হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিক্রি হয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে বিক্রি হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ল্যাবএইড হাসপাতালে বিক্রি হয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অপরদিকে, রেজুলেট ইন্টেগ্রিটি রিং আমদানিমূল্য আনুমানিক ৪৭ হাজার টাকা হলেও জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এর দাম ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে ১ লাখ ৫০ হাজার এবং ল্যাবএইডে এর মূল্য ২ লাখ টাকা। করোনারি স্টেন্টের দাম আমদানি মূল্যের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি। অথচ ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের পর সেখানে বোস্টন কোম্পানির সিনার্জি স্টেন্টের দাম হয় ৩৬ হাজার ৪০৮ টাকা।

জাতীয় অধ্যাপক ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিক ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মূল্য নির্ধারণের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এতোদিন নিয়ন্ত্রণহীনতার অভাবে লাগামহীন ব্যবসা করেছে, যার নিরসন দরকার। সাধারণ মানুষ এতোদিন প্রতারিত হয়েছেন। জনস্বার্থ বিবেচনা করে স্টেন্টের মূল্য ও মানের মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে।’

এদিকে, জাতীয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, করোনারি স্টেন্টের মূল্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা মাথায় রেখেই ওষুধ প্রশাসন স্টেন্টের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে দেশে ২১টি প্রতিষ্ঠান ৪৭ ধরণের ১৮ হাজারের মতো স্টেন্ট আমদানি করা হচ্ছে বছরে। কিন্তু এসব মেডিক্যাল ডিভাইসের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আমদানিমূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম নিতো রোগীর থেকে।

মূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য যুগ্ম সচিব মাহবুব কবীর মিলন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় সবাই স্বীকার করেছেন হার্টের রিং-এর দামের ক্ষেত্রে অরাজকতা এবং অনিয়ম ছিল। এখন অধিদফতর এমআরপি নির্ধারণ করে দেওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি কমবে।’

মাহবুব কবীর আরও বলেন, ‘এমআরপি নির্ধারণে আরও একটি সুবিধা হলো, নির্ধারিত এমআরপির বাইরে একটাকাও যদি বেশি রাখা হয় তাহলে ভোক্তা অধিকার আইনেও তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’

একই কথা বললেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল ডিভাইসেস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গাজী এ কে শাহীন। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে ওষুধ প্রসাশন রিং এর ধরণ অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করবে, এতোদিন এটি না থাকায় অনিয়ম হয়েছে।’

তবে বিষয়টি এতো সহজ নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘১৫ থেকে ২০ বছর ধরে এতোদিন বিষয়টি একভাবে চলে এসেছে, একটি ফ্রেম ওয়ার্কের ভেতরে আসতে সময় নেবে। প্রসেসটি আমাদের কাছে নতুন হলেও কাজ শুরু হয়েছে, এতে করে বর্তমান মূল্যের চেয়ে দাম অনেক কমে যাবে।’

/এমও/আপ-এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত