X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিগ্রি নেই, তবু পালমনোলজিস্ট!

জাকিয়া আহমেদ
০১ জুন ২০১৭, ০৮:০০আপডেট : ০১ জুন ২০১৭, ১৪:২০

চেম্বারে রোগী দেখছেন ডা. পারভেজ তার দুই কার্ডের একটিতে নাম লেখা পারভেজ সোহেল আহমেদ, অন্যটিতে পারভেজ এস. আহমেদ। মিরপুরে দুইটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার চেম্বার রয়েছে। তবে তার দাবি, তিনি কোথাও রোগী দেখেন না! পালমনোলজিতে এফসিপিএস না করেও ভিজিটিং কার্ড ও প্রেসক্রিপশনে দিব্যি লিখে রেখেছেন ‘এফসিপিএস (পালমনোলজি)’। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কখনও চিকিৎসক না থাকলেও ভিজিটিং কার্ডে ব্যবহার করেছেন এই প্রতিষ্ঠানের নামও। ডা. পারভেজ এস. আহমেদ ওরফে ডা. পারভেজ সোহেল আহমেদ এভাবেই রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে আসছেন দুই যুগ ধরে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ, ডিগ্রি ছাড়াই পালমনোলজি বিষয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন ডা. পারভেজ। সেই সূত্র ধরেই অনুসন্ধানে নামে বাংলা ট্রিবিউন। এরপর এ প্রতিবেদক রোগী সেজে তার চেম্বারে গেলে সত্যতা মেলে এসব তথ্যের।
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ডা. পারভেজের দু’টি ভিজিটিং কার্ডের একটিতে মিরপুরের পল্লবীতে অবস্থিত ল্যাবএইড লিমিটেড (ডায়াগনস্টিক), অন্যটিতে আল হেলাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঠিকানা দেওয়া। এর মধ্যে প্রথমটিতে তার নাম লেখা ডা. পারভেজ সোহেল আহমেদ, দ্বিতীয়টিতে ডা. পারভেজ এস. আহমেদ। একটি কার্ডে তার পরিচয় মেডিসিন, বক্ষব্যাধি এবং চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ; অন্যটিতে মেডিসিন, বক্ষব্যাধি ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ। দুই কার্ডের একটিতে সময় দেওয়া আছে বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, অন্যটিতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা।
গত ২২ মে সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর-১০-এ অবস্থিত আল হেলাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী সেজে ডা. পারভেজের চেম্বারে পৌঁছান এ প্রতিবেদক। সিরিয়াল দিতে গেলে এ প্রতিবেদককে বলা হয় রাত ৮টায় যেতে। পরে রাত ৮টার দিকে তার চেম্বারে গেলে জানানো হয়, ডা. পারভেজ এখনও আসেননি, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আসবেন তিনি। চেম্বারের সামনে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষমাণ এক রোগী জানান, তিনি সন্ধ্যা ৭টা থেকে সিরিয়াল নিয়ে বসে আছেন। মূলত, দুইটি চেম্বারে প্রায় একই সময় লিখে রাখার কারণেই ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তার রোগীদের।
ডা. পারভেজের দুই চেম্বারের ভিজিটিং কার্ড অপেক্ষা করতে করতে রাত পৌনে ১০টার দিকে এ প্রতিবেদকের ডাক পড়ে ডা. পারভেজের চেম্বারে। ফুসফুসের সমস্যার কিছু উপসর্গের কথা জানাতেই তিনি চারটি ওষুধ দেন এবং ফুসফুসের কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পারমর্শ দেন।
দুই কার্ডে দুই রকম নাম, ভুয়া ডিগ্রি ও বিএসএমএমইউয়ের নাম ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে এই চিকিৎসক প্রথমে পেশাগত ব্যস্ততা দেখিয়ে পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। পরে তিনি উল্টো দাবি করেন, এতদিন কেবল রোগীর সেবা করে গেছেন। পালমনোলজিতে এফসিপিএস না করেও কার্ডে এই ডিগ্রির উল্লেখ প্রসঙ্গে তিনি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, তার অগোচরেই এসব হয়েছে।
ডা. পারভেজের কার্ডে পালমনোলজিতে এফসিপিএস ডিগ্রির উল্লেখ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করা চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘কী করে সম্ভব! বাংলাদেশে আমরা মাত্র চার জন এ বিষয়ে এফসিপিএস করেছি। এর বাইরে আর কেউ নেই। আর তিনি যদি এফসিপিএস পার্ট ওয়ান-ও করে থাকেন, তাহলেও তিনি অপরাধ করছেন। কারণ বিএমডিসির (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) নীতিমালা অনুযায়ী কোনও কোর্স শেষ না করে কেউ নামের পরে এই ডিগ্রি যোগ করতে পারেন না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আদতে পালমনোলজিতে এফসিপিএস নেই ডা. পারভেজের। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস থেকে প্রকাশিত ফেলোস ডিরেক্টরিতেও পালমনোলজিতে এফসিপিএস হিসেবে তার নাম নেই।
ডা. পারভেজেকে দেখালে প্রতিবেদককে এই প্রেসক্রিপশন দেন তিনি ডিগ্রি না নিয়েও কার্ডে এফসিপিএস লেখাকে ‘অ্যাবসলুটলি পানিশ্যাবল অফেন্স’ (সন্দেহাতীতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ) বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রার জাহিদুল হক বসুনিয়া। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ডাক্তার রীতিমতো অন্যায় করছেন, প্রতারণা করছেন রোগীদের সঙ্গে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
দুই কার্ডে দুইভাবে নাম লেখাকেও প্রতারণা বলছেন চিকিৎসক নেতারা। বিএসএমএমইউয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দীন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিনি রীতিমতো জালিয়াতি করছেন রোগীদের সঙ্গে। একজন চিকিৎসকের নাম সব কার্ডে একইরকম থাকবে।’ ডা. পারভেজের কোনও কার্ডেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর না থাকাকেও গুরুতর অপরাধ বলছেন তিনি।
পরে মোবাইলে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে ডা. পারভেজ জানান, পালমনোলজিতে তিনি কোর্স শুরু করেছিলেন, শেষ করেননি। কোর্স শেষ না করেই ডিগ্রির নাম উল্লেখ করে বিএমডিসির আইন লঙ্ঘন করছেন কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি খেয়াল করিনি। আজই কার্ড থেকে এ লেখা বাদ দেওয়ার কথা বলে দেবো।’ দুই কার্ডে দুই রকম নাম লেখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে কার্ডের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারিনি। এখন সংশোধন করিয়ে নেবো।’
মোবাইলে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে ডা. পারভেজ দাবি করেন, গত কয়েকমাস ধরে তিনি দুই চেম্বারের কোনোটিতেই রোগী দেখছেন না। প্র্যাকটিস নিয়েও তিনি আগ্রহী নন বলে জানান। এ প্রতিবেদক নিজেই রোগী সেজে তার আল হেলালে তার চেম্বারে গিয়েছেন জানালে তিনি দাবি করেন, গত ১৫ দিনে তিনি কোনও নারী রোগীকে চিকিৎসা দেননি। পরে তিনি এ প্রতিবেদককে একটি মেসেজে লিখেন, ‘আমি নিজে ক্যান্সারের রোগী। দয়া করে বিষয়টিকে কনসিডার করবেন।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
আরও পড়ুন-

দেশের চতুর্থ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সিলেটে

/টিআর/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ