X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৮ বৈশাখ ১৪৩১

‘ব্যবসায়ীদের ‍অতি মুনাফার লোভ কমাতে হবে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ জুন ২০১৭, ২২:১৯আপডেট : ২২ জুন ২০১৭, ২৩:৪০

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি

ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভ সামলাতে পারলে দেশের সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। তারা যেকোনও উৎসব সবার সঙ্গে উদযাপন করতে পারবেন। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ক্রেতারাও উপকৃত হবেন। দেশীয় পণ্য ব্যবহারে উৎসাহী হবেন ক্রেতারা। এতে দেশের বাইরে গিয়ে কেনাকাটার প্রবণতা কমবে। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিওতে ‘ঈদ বাজার: ক্রেতা-বিক্রেতার আদ্যোপান্ত’ শীর্ষক বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে বক্তরা এসব কথা বলেন।

মুন্নী সাহা

মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বৈঠকিতে অংশ নেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, বিশ্বরঙ-এর কর্ণধার বিপ্লব সাহা, বিবিয়ানার কর্ণধার লিপি খন্দকার, বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ ও বিজনেস ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম। বৈঠকি অনুষ্ঠানটি এটিএন নিউজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

শফিকুল ইসলাম বৈঠকিতে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনও উৎসবের সময় বিক্রেতাদের অতি মুনফার প্রবণতা বেড়ে যায়। ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে দেশের বাইরে গিয়ে মানুষের কেনাকাটার প্রবণতা বাড়ছে। একজন ব্যক্তি ৫ হাজার ডলার সঙ্গে নিয়ে বিদেশে যেতে পারেন। একজন লোক যদি কমপক্ষে এক হাজার ডলার সঙ্গে নিয়ে যান এবং এক ডলারের বিনিময় মূল্য যদি ৭৮ টাকা হয়, তাহলে ১১শ ৭০ কোটি টাকা পার্শ্ববতী দেশে চলে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে অনৈকিতভাবে মুনাফার অর্জনের প্রবণতা বেড়ে যায়। দেশপ্রেম প্রমাণ করতে হয় শুধু ক্রেতাদের।’
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশীয় শিল্পের কথা বলা হয়। মানুষ দেশি শিল্পে চায় বলেই বৈশাখে দেশি কাপড় কেনে। ঈদের সময় কেন বিদেশে যায়, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। ফ্যাশন হাউসে একটা ফতুয়ার দাম রাখা হয় ১৯শ টাকা। কোথা থেকে কাপড় আসে, কী কাপড় থাকে যে এর দাম এত বেশি? কুমারখালির একটি ১৮০ টাকার দামের চাদর বিক্রি হয় ১২শ টাকায়। দেশের ভেতরে পণ্য পরিবহণে তো ট্যাক্স লাগে না। তাহলে কেন এত দাম হবে? ক্রেতাকেই কেন কেবল দেশপ্রেম প্রমাণ করতে ১৮০ টাকার ১২শ টাকায় কিনতে হবে? ফ্যাশন হাউসে একটি কাঁথা নূন্যতম ৩ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ১৫-২০ হাজারে টাকায় বিক্রি হয়। যশোরে নারীরা এ কাঁথা তৈরি করেন। কিন্তু তাদের কত মজুরি দেওয়া হয়? ব্যবসায়ীদের মুনাফা একটু কম করা উচিত। মুনাফা কম করলে বিক্রেতা, ক্রেতা সবাই ভালো থাকবেন।’

হেলাল উদ্দিন হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘উৎসব অর্থনীতি আমাদের মূল অর্থনীতি। আমরা সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করি। এ কারণে আমোদের অর্থনীতি এত ভাইব্রেন্ট। প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের। তাদের প্রায় সবার জন্যই কেনাকাটা হয়। রমজান শেষে অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান হবে, সেগুলোর কেনাকাটাও অনেকে ভারতে গিয়ে করেন। সব মিলিয়ে এক-দেড় লাখ লোকও যদি দেশের বাইরে শপিং করতে যায়, তার প্রভাব আমাদের বাজারে পড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অসততা করে ব্যবসায় ঠিকে থাকা যায় না। আমাদের ব্র্যান্ডিং ঠিকমতো হচ্ছে না, এটা ঠিক মতো করতে হবে। পহেলা বৈশাখের সময় কিন্তু মানুষ দেশের কাপড় পড়েন।’
হারুন উর রশীদ

হারুন উর রশীদ বলেন, ‘বিমানে কম মানুষ ভারতে যান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়েই বেশি মানুষ ভারতে যান। সাধারণত দিনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষ ভারতে যান। ঈদের সময়ে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে সাত থেকে আট হাজার লোক যাচ্ছেন ভারতে। তাদের বেশিরভাগই যাচ্ছেন শপিং করতে। যারা ভারতে যাচ্ছেন তাদের বক্তব্য, ভারতে ৫০০ রুপিতে যেটি কিনছেন, সেটি বাংলাদেশে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এরপর আবার কাপড়ের মান নিয়ে সমস্যা থাকে। কেনার সময় ক্রেতার যদি দেশপ্রেম থাকতে হয়, বিক্রেতারাও বিক্রির সময় দেশপ্রেম থাকা উচিত।’

হারুন উর রশীদ আরও বলেন, ‘ফ্যাশন হাউসে ক্রেতার রুচিকে ধরে পণ্য বিক্রি করতে হবে। রুচিশীল ক্রেতা তৈরিও করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্রেতারা কম দামে ভালো পণ্য চান।’

আসিফ ইব্রাহীম (2)

আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘বাংলাদেশিদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। একটা সময় আমাদের এতটা সক্ষমতা ছিল না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লে দেশের বাইরে শপিং করতে যেতেন না। আমাদের নিজস্ব কোনও প্রোডাক্ট ব্র্যান্ডিং নেই। আমাদের জামদানি ঠিকমতো ব্র্যান্ডিং করতে পারিনি। আমাদের নিজস্ব প্রোডাক্ট ব্র্যান্ডিং করতে হবে।’
আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘আমার নতুন কনসেপ্ট তৈরি করতে পারি ঈদে মূল্যহ্রাস, যা সব পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। ব্যবসায়ী সংগঠনের গবেষণা বাড়াতে হবে। উৎসব অথর্নীতি নিয়ে আমাদের গবেষণা দরকার। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও অফিশিয়াল তথ্য নেই।’

লিপি খন্দকার লিপি খন্দকার বলেন, ‘এ বছর তুলনামূলকভাবে কম বিক্রি হয়েছে। আমরা প্রতিবছর চেষ্টা করি নতুন কিছু করার। আমরা ডিজাইন ও প্রোডাক্ট কোয়ালিটি মেইনটেইন করি। আমার আশা করি, ঈদের সময় ক্রেতা বাড়বে, ব্যবসা ভালো হবে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে প্রতিবেশী দেশে ক্রেতা চলে যাচ্ছে। আমরা ক্রেতা হারিয়ে ফেলছি। ঈদকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান, ভারত থেকে কাপড় এসে ভরে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পেটে-ভাতে ব্যবসা করে যাচ্ছি। অথচ আমাদের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।’
বিপ্লব সাহা বিপ্লব সাহা বলেন, ‘শুধু ঈদের জন্য নয়, আমরা সারাবছর ধরেই পোশাক তৈরি করি এবং ঈদকে ঘিরে কাপড়ের দাম বাড়াই না। একটা কাপড় বিক্রি করে দশগুণ লাভ করার চিন্তা আমাদের থাকে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নামি শিল্পীরা কতটা কার রঙ কিনে ছবি আঁকেন? কেন তাদের ছবি এত দামি হয়? এর কারণ ব্র্যান্ড ভ্যালু। এই ব্র্যান্ডিংটা যখন হয়, তখন দাম বেড়ে যায়। কিন্তু ভারত বা অন্য দেশে একজন পোশাক নির্মাতা যতটা সুযোগ-সুবিধা পান মিডিয়ার কাছ থেকে, আমরা তার বিন্দুমাত্র পাই না। কোনও মিডিয়া হাউস কিংবা নির্মাতা আমাদের কাছ থেকে পোশাক নেন না। ফলে আমাদের পোশাকও মানুষের কাছে যায় না। দর্শক পাখি জামা দেখে তাই কেনে। তার মানে এই না আমরা ভালো কাজ করছি না। আমাদের ভালো পণ্যের প্রচার-প্রসার নেই। ফলে ভালো পণ্যটি ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে না।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন

/সিএ/এফএএন/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
এক মোটরসাইকেলে ৩ ব্যবসায়ী, কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেলো দুজনের
এক মোটরসাইকেলে ৩ ব্যবসায়ী, কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেলো দুজনের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছরই শেষ অ্যান্ডারসনের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছরই শেষ অ্যান্ডারসনের
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
সর্বাধিক পঠিত
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, তুলছেন ভ্রমণ বিলও
সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, তুলছেন ভ্রমণ বিলও
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র