ভাড়া নির্ধারণ না করে দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে পাঁচটি রুটে বাস অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার টেন্ডার প্রক্রিয়ার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৩ আগস্ট) বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন এ আর এম কামরুজ্জামান, অর্পণ চক্রবর্তী ও শুভজিত ব্যানার্জি। বিআরটিসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো.মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী আদালতে এই আবেদনটি করেছিলেন।
পরে এ বি এম আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনের ১৫ ধারা অনুসরণ না করেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তাই ওই টেন্ডার প্রক্রিয়ার ওপর একমাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট। এখন এটা নিয়ে আর কোনও কার্যাক্রম চালানো যাবে না।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারতের আন্তজার্তিক বাস রুটে দুই সরকারের মধ্যে সই হওয়া প্রটোকলের শর্ত অনুযায়ী ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে নাস্তাসহ ভাড়া আদায় হওয়ার কথা ১১ ডলার (প্রায় ৯২০ টাকা)। কিন্তু সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিসহ সব বেসরকারি পরিবহন প্রতিষ্ঠান যাত্রীদের কাছ থেকে ১,৭০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে। এতে এই রুটে প্রতিদিন যাতায়াতকারী প্রায় আট হাজার যাত্রীর স্বার্থ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই বাস রুট চালুর পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় পরে আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা, ঢাকা-খুলনা-কলকাতা-ঢাকা, ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট-শিলং-গোয়াহাটি-ঢাকা রুটগুলোও চালু হয়। কিন্তু এসব রুটে এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া নির্ধারিত না থাকায় অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গত ৪ জুলাই দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচটি রুটে অসম প্রতিযোগিতামূলক অপারেটর নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। ভাড়া নির্ধারণ না করে এ বিজ্ঞপ্তি চলমান ভাড়া নৈরাজ্যকে আরও বেশি উসকে দেবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে পাঁচটি রুটে ১৯৯৯ সালের উভয় দেশের মধ্যে সম্পাদিত প্রটোকলের শর্তানুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। এর জন্য ১৩ জুলাই সরকারকে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু সরকার তা নিষ্পত্তি না করায় হাইকোর্টে রিট করি।’
ওই রিটের পর হাইকোর্ট ২৩ জুলাই ভাড়া নির্ধারণ না করে দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে পাঁচটি রুটে বাস অপারেটর নিয়োগে দেওয়া টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
একইসঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক বাস রুটে প্রটোকলের শর্ত লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে’ সরকারের কাছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির করা আবেদন একমাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত।
ব্যারিস্টার আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হাইকোর্টের ওই আদেশের পরে ২ আগস্ট একটি চিঠি দিয়ে আবেদন নিষ্পত্তি করার কথা মোজাম্মেল হককে জানায় বিটিআরসি। এর মধ্যে ৩০ আগস্ট টেন্ডার ওপেনিং কমিটির মিটিং করে বিআরটিসি। ওই মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের দুইটি বাস নিয়ে মতিঝিল ডিপোতে হাজির থাকতে বলা হয়।’
কিন্তু আইন অনুসারে ভাড়া নির্ধারণ না করে এ ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়া সঠিক নয় বলে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন মোজাম্মল হক। আদালত আবেদনের শুনানি নিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ার ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এখন আদেশের ফলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনও কার্যক্রম হাতে নেওয়া যাবে না বলে জানান আইনজীবী আলতাফ হোসেন।
আরও পড়ুন-
যে কারণে সাঈদীর রিভিউ খারিজ
এবারের ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৪, আহত ৬৯৬